ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন? আপনার মধ্যে নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ থাকতে পারে
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন তাদের শরীরে নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ'র অস্তিত্ব থাকতে পারে।
আধুনিক মানুষের কাছাকাছি সময়ের দুই প্রাচীন প্রজাতি নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদের জিন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব জিনই কিছু মানুষের ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পেছনের প্রভাবক।
সানফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়ার টনি ক্যাপরা নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেন, 'এ বিষয়টি আমাদের কাছে চমকপ্রদ এবং আশাতীত ছিল। নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের থেকে আসা ডিএনএ আমাদের মাঝে সকালে ঘুম থেকে দ্রুত ওঠার প্রবৃত্তি সৃষ্টি করেছে এবং এটি আধুনিক মানুষের মধ্যেও বজায় রয়েছে।'
প্রাথমিক ওই গবেষণাটির মতে, সম্ভবত আমাদের নিকটতম পূর্বপুরুষদের তুলনায় ঠান্ডা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে বেশি সময় অতিবাহিত করার কারণে নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানরা এসব মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল।
বর্তমানে জীবিত প্রতিটি মানুষ তাদের ডিএনএর জন্য সিংহভাগ ঋণী হোমো স্যাপিয়েন্সদের কাছে, যারা তুলনামূলক বেশ কাছাকাছি অতীতে আফ্রিকায় বসবাস করত। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এও ধারণা করেন যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা মানবজাতির অন্যান্য বিলুপ্ত শাখা থেকেও জিনগত বৈশিষ্ট্য পেয়েছে, যেখানে নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদেরও অবদান রয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে বেশিরভাগ মানব প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, ইউরোপীয় ও এশীয় জনগোষ্ঠীর অন্তত দুই শতাংশের ডিএনএতে নিয়ান্ডারথাল এবং পাপুয়া নিউগিনির অধিবাসীদের মধ্যে পাঁচ শতাংশের ডিএনএতে ডেনিসোভানদের বৈশিষ্ট্য আছে।
নিয়ান্ডারথাল-ডেনিসোভানদের ডিএনএর সঙ্গে বর্তমান মানুষের ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সম্পর্ক অনুসন্ধান শুরু করেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টনি ক্যাপরা ও তার সহকর্মীরা।
এর জন্য তারা ইউকে বায়োব্যাংক নামক একটি সংরক্ষণাগার থেকে তিনজন নিয়ান্ডারথাল ও একজন ডেনিসোভানের জিনোম সংগ্রহ করে সেগুলো বর্তমান মানুষের জিনোমের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন।
তারা দেখতে পান, বর্তমান মানুষ ও পূর্বের (নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভান) মানুষদের মধ্যে প্রায় হাজারের অধিক মিউটেশনের মিল রয়েছে। অতীতের গবেষণায় এসব মিউটেশনের কিছুকিছুর মানবদেহের জৈবঘড়ির নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
এরপর বিজ্ঞানীরা গবেষণায় নমুনা হিসেবে অংশগ্রহণকারী মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া জরিপের উত্তর বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, নির্দিষ্ট মিউটেশন থাকা ব্যক্তিরাই তাড়াতাড়ি সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়েন।
তবে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাকে তাৎপর্যপূর্ণ বললেও এটিকে আরও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন। বায়োব্যাংকের তথ্য থেকে কেবল জিন এবং আচরণের মধ্যে একটি সম্পর্ক পাওয়া যায়। সাধারণত জিন এবং আচরণের মধ্যে যোগসূত্র নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়।
ক্যাপরা এবং তার সহকর্মীরা গবেষণায় বলেছেন, এটা এখনো স্পষ্ট নয় যে নির্দিষ্ট মিউটেশন শরীরে থাকলেই আপনি ভোরে ওঠা ব্যক্তি হবেন কি না, কারণ এখানে আরও অনেক বিষয় জড়িত। আর আমাদের শরীর কীভাবে আমাদের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে, সে সম্পর্কে আমরা এখনো জ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি।