লাদাখ সংঘাতের পূর্বে স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়া চীনের গতিবিধি
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে ৪৫ বছরের পর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আগে থেকেই সীমান্তে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করে চীন। এসময় দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ব লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় ভারি যন্ত্রপাতির সাহায্যে হিমালয় পর্বতমালার ওই অঞ্চলে একটি পথ তৈরি করে। বাঁধ দেয় নদীতেও। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা কিছু ছবিতে এসব গতিবিধির আলামত লক্ষ্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুই দেশের সেনাদের মাঝে সংঘাতের সূত্রপাত হয় চীনা বাহিনীর স্থাপিত তাঁবু এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন নিয়ে। ভারতের অভিযোগ ছিল, চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সরে এসে তাদের অংশে এসব স্থাপন করেছে। এ সংক্রান্ত দাবি নয়াদিল্লির শীর্ষ সরকারি সূত্র এবং লাদাখে অবস্থিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্র উভয়েই নিশ্চিত করে। খবর রয়টার্সের।
১৯৬৭ সালের পর চীন ও ভারতের মাঝে সাম্প্রতিক সংঘাতটি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। তবে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে চলতি বছরের মে মাস থেকেই। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানের অন্যতম কারণ হিসেবে ভারত দাবি করেছে চীনা সেনাদের অনুপ্রবেশ ও অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণকে। গত সোমবার এই মুখোমুখি অবস্থানই রক্তক্ষয়ী হাতাহাতি লড়াইয়ে রূপ নেয়।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুভ্রামনিয়ম জয়শংকর চীনা পররাষ্ট্র ওয়াং ই'র সঙ্গে এক ফোনালাপে এর প্রতিবাদ করে জানিয়েছেন, চলমান উত্তেজনা নিরসনে গত ৬ জুন দুই দেশের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের মাঝে বৈঠকে সমঝোতায় পৌঁছানোর সিদ্ধান্তের পরেও চীন গালোয়ান উপত্যকার ভারতীয় অংশে 'স্থাপনা' নির্মাণের চেষ্টা করে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষনিকভাবে ফোনালাপের বিষয়টি জানায়। কিন্তু, জয়শংকর কোন স্থাপনার কথা বলেছেন তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।
তবে একটি বিষয়ে উভয় দেশের সরকারি সূত্র একমত। তা হলো; সংঘাতের আগে ভারতীয় সেনাদের একটি টহল দল চীনা সেনারা পূর্ব সমঝোতার অংশ হিসেবে একটি পাহাড়ি ঢালে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে আসে। পাহাড়ের ওই অংশ থেকে ইতোমধ্যেই অধিকাংশ চীনা সেনা সরে গিয়েছিল। তাদের রেখে যাওয়া কয়েকটি পর্যবেক্ষণ স্থাপনা এসময় গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাদলটি। আগুন লাগিয়ে দেয় রেখে যাওয়া দুটি তাবুতে।
সংঘাতের পরের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার তোলা উপরের স্যাটেলাইট চিত্রে এসব স্থাপনার ধ্বংসস্তূপ লক্ষ্য করা যায়। এক সপ্তাহ আগের তোলা ছবিতে এমন কোনো অবকাঠামোর চিহ্ন ছিল না। অর্থাৎ, অতিসম্প্রতি যে এগুলো নির্মাণ করা হয় এবং তা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়, তা খুবই স্পষ্ট।
তবে ভারতীয় সেনা টহলের ওই প্রতিক্রিয়া পাল্টা উত্তেজনার সৃষ্টি করে। সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে উপস্থিত হয় চীনা সেনাদের একটি বড় দল। তারা কর্ণেল সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাদলকে বাঁধা দেওয়া শুরু করে। চীনা সেনারা এসময় হাতাহাতি লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার মতো হালকা অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
মঙ্গলবার দুই পক্ষের বাড়তি সেনা উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে স্যাটেলাইট থেকে তোলা আরও বেশ কিছু চিত্রে। এক সপ্তাহ আগের তুলনায় যা ছিল সহজেই চোখে পড়ার মতো সংখ্যাবৃদ্ধির ঘটনা।