পেঁয়াজহীন পেঁয়াজু ও পেঁয়াজক্রন্দন
স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে একালের পেঁয়াজুর উপমা খুঁজতে গিয়ে একাত্তরের বাংলাদেশের জন্য লড়াই করা বিদেশি বন্ধুদের রাষ্ট্রের দেওয়া স্বর্ণপদকের কথাই মনে হলো প্রথম। রাষ্ট্রের বুদ্ধিমান প্রশাসকেরা স্বর্ণপদকের অনেকটা স্বর্ণ লুটে নিয়েছেন, তারপরও পদকে কিছুটা স্বর্ণ তো ছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে দামের ঊর্ধ্বগতির কারণেই হোক সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই হোক, পেঁয়াজ যখন কিলোগ্রামপ্রতি দুই শ টাকা ছুঁই ছুঁই, কেন যে পেঁয়াজু খাবার সাধ হলো! গরম পেঁয়াজুটা ভেঙে তন্ন তন্ন করে পেঁয়াজের খোঁজ করে, ব্যর্থ তল্লাশির পর যখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, আরও গরম পেঁয়াজু ফুটন্ত কড়াই থেকে নামাতে নামাতে পেঁয়াজুওয়ালা বলল, পেঁয়াজু খান না কয় বছর? পেঁয়াজের কেজি চল্লিশ পেরোবার পরই তো পেঁয়াজ দেওয়া ক্ষ্যান্ত দিয়েছি। জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার, তাই নামটাই রেখে দিয়েছি। আমার মতো পেঁয়াজহীন পেঁয়াজু খাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের হয়েছে। এ তো হামেশাই বলা হয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেমন গণতন্ত্র না থাকলেও চলে, পেঁয়াজুতেও তা-ই।
পেঁয়াজ ছিলতে গিয়ে চোখ অশ্রু ছলছল হয়নি এমন ইস্পাতের চোখধারী কারও সাথে সাক্ষাৎ আমার হয়নি, রান্নার পেঁয়াজ না পেয়ে ফিলিপাইনে তো বটেই, বাংলাদেশেও কারও কারও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে। ভারতেও ডিমের ওমলেটের দুই পদ বিক্রি হচ্ছে: পেট্রিশিয়ানদের জন্য ওমলেট উইথ অনিয়ন এবং প্লেবিয়ানদের জন্য ওমলেট উইদাউট অনিয়ন। দুই পদের দামের ফারাক দশ রুপি।
এই রচনাটি মোটেও পেঁয়াজু নিয়ে নয়। বাজারের হরেক রকম কারসাজিতে পেঁয়াজ যখন সাধারণ ক্রেতার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়, তাতে পেঁয়াজরাগে অসন্তোষ ধূমায়িত হতে থাকে। হালে খুব বলাবলি হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি চলছে কি না, বুঝতে বেশি বাজার গবেষণা করে মেধা, শ্রম ও সময় নষ্ট করার দরকার নেই, কেবল পেঁয়াজের দামের উত্থানটা দেখুন। তাতেই যা বোঝার বুঝে নিতে পারবেন।
সবজি কিংবা মসলা যা-ই বলি, উইল রোজার্স বলেছেন, পেঁয়াজ মানুষকে কাঁদিয়ে থাকে। কিন্তু মানুষকে হাসাতে পারে এমন সবজির দেখা কেউ পায়নি।
কার্ল স্যান্ডবার্গ বলেছেন, জীবনটা পেঁয়াজের মতো, একটি একটি স্তর খুলবেন এবং কাঁদবেন।
মানুষ কি পেঁয়াজের মতো?
মাইলস মুনরো বলেছেন: মানুষ পেঁয়াজের মতো। একেকটা স্তর খুলতেই তার শক্তি ও সম্ভাবনা প্রকাশিত হয়ে যাবে, সবগুলো স্তর খোলার পরই জানা যায় সে কেমন।
কারেন কুশম্যান: কখনো কখনো আমার মনে হয়, মানুষের জীবনটা পেঁয়াজের মতো। বাইরে মোলায়েম ও অখণ্ড কিন্তু ভেতরে এক বৃত্তের ওপর আরেক বৃত্ত, গভীর এবং জটিল।
জেমস হুনেকার: মানুষের জীবনটা পেঁয়াজের মতো, একটি একটি করে স্তর ছিলতে থাকুন, শেষ পর্যন্ত দেখবেন এর ভেতরে কিছু নেই।
স্টিফেন ব্রাস্ট: আমি যখন বলি, মানুষের জীবনটা পেঁয়াজের মতো, আমি এটা বোঝাতে চাই, যদি এটা ব্যবহার করা না হয়, পেঁয়াজের মতো পঁচে যাবে।
পেঁয়াজের ত্বক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়! একসময় বিশ্বাস করা হতো, পেঁয়াজের ত্বকই বলে দিত শীতটা সহনীয় হবে না তীব্র হবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে আসা বুড়ো কিষানের ছড়া বলে:
Onion skins very thin
Mild winter coming in
Onion skins thick and tough
Coming winter cold and rough
ত্বকের পুরুত্ব আবহাওয়ার নির্ণায়ক। তবে সতর্ক করে দেওয়া যায় ত্বক পরীক্ষা করে শীত বুঝতে হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ হাতে নিন। নতুবা তা হয়তো চীনের (অথবা রপ্তানি করা অন্য কোনো দেশের) আবহাওয়ার পূর্বাভাস হয়ে পড়তে পারে। প্রাচীন ছড়াকার সম্ভবত আমদানি করা পেঁয়াজের বিষয়টি আমলে নেননি।
পেঁয়াজ খান, মাথায় পেঁয়াজের রস মাখুন
এই ব্যবস্থাপত্র সকলের জন্য নয়, বিশেষ করে যাদের টাক পড়ছে, তাদের জন্য, চুল পড়া ঠেকাতে ও নতুন চুল গজাতে। পেঁয়াজের সালফার কেরাটিন সৃষ্টি করে, যা স্বাস্থ্যবান চুল গজাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের জুস মাথায় মাখার পর আপনার শরীর থেকে গ্রিক সালাদের গন্ধ বেরোতে পারে, তোয়াক্কা করবেন না, আপনার দরকার চুল।
মধ্যযুগে ধর্মযাজকদের জন্য পেঁয়াজ ছিল নিষিদ্ধ খাবার। কারণ, তা যৌন তাড়না উজ্জীবিত করে। ফরাসি ঐতিহ্য অনুযায়ী বিয়ের প্রথম রাতে বর-কনে পেঁয়াজের স্যুপ পান করে থাকে।
পেঁয়াজ হাড়ের স্বাস্থ্য ও ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং ব্লাড সুগার কমায়। পেঁয়াজ হচ্ছে সুপার ফুড। ক্যালরি কম, কার্বোহাইড্রেট কম এবং ফ্যাট ফ্রি।
শুকনো পেঁয়াজের বাজারজাতকরণের ধরন সাতটি: খণ্ড খণ্ড ছোট টুকরো, ফালি, কিমা, পাউডার, দানাদার এবং পাতলা পাত। যুক্তরাষ্ট্রের বিসিফুডস কোম্পানি ভারতের গুজরাটে পেঁয়াজ ও রসুনের জন্য বৃহৎ ডিহাইড্রেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ২০২০ সালে। শুকনো পেঁয়াজের বাজার দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায়।
বিশ্ববাজারে শুকনো পেঁয়াজ বাণিজ্য যাদের নিয়ন্ত্রণে
ভ্যান ড্রুনেন ফার্মস, যুক্তরাষ্ট্র
সেনসিয়েন্ট ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস, যুক্তরাষ্ট্র
ওলাম ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুর
রুশি সয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ভারত
ন্যাচারাল ডিহাইড্রেটেড ভেজিটেবল প্রাইভেট লিমিটেড, ভারত
জাইন ফার্ম ফ্রেশ ফুডস লিমিটেড, ভারত
রিয়েল ডিহাইড্রেটস প্রাইভেট লিমিটেড, ভারত
বুদেরিম গ্রুপ লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়া
ফুডকেম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন, চীন
কাসকেড স্পেশিয়ালিটি লিমিটেড, যুক্তরাষ্ট্র
অনিয়নস অস্ট্রেলিয়া লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়া
ইগল ফুড অস্ট্রেলিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়া
ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা
পেঁয়াজ খেয়ে ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ইসলাম ধর্মে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কিন্তু পেঁয়াজ খেতে নিষেধ করা হয়নি। সনাতন ধর্মশাস্ত্রের মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, আর্যবর্তের মানুষ কখনো পালান্ডু (পেঁয়াজ), লাশুনাম (রসুন), গ্রিঞ্জানাম (গাজর) ও অন্যান্য ধারকেরা খাবার খাবে না। সনাতন বৈদিক ধর্মে এটি নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করা হয়েছে, তবে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ওষুধ হিসেবে স্বাস্থ্যগত কারণে পেঁয়াজ ও রসুন খাবার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পেঁয়াজ যতই মহার্ঘ হয়ে উঠুক An apple a day/keeps the doctor away এই ব্যবস্থাপত্রটিকে এত দিনে খানিকটা বদলে দিয়েছে। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। এখনকার ইউরোপীয় আপ্তবাক্য: An onion a day/keeps the doctor away; বিজ্ঞানীরাও এখন বলছেন পেঁয়াজের কোয়ের্সেটিন অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষের ও কলার ক্ষয়প্রাপ্তি বাধা দিয়ে তা প্রলম্বিত করে, অর্থাৎ বার্ধক্য ঠেকায় এবং দীর্ঘায়ু করে। প্রতিবছর ১০৫ বিলিয়ন পাউন্ড পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, তার সবটাই ভোক্তার ভোগে লেগে যায়, প্রতিবছরই পৃথিবীর একাধিক দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি লেগেই থাকছে। একটি পেঁয়াজ একটি আপেলের তিন গুণ বেশি কোয়ের্সেটিন মানব শরীরকে সরবরাহ করে থাকে। পেঁয়াজ প্রাকৃতিকভাবেই ফ্যাট-ফ্রি স্নেহমুক্ত, বেশি সেবনে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
পেঁয়াজ পঁচনশীল সন্দেহ নেই, পেঁয়াজ সরবরাহ অনিশ্চিত হয়েও উঠতে পারে, তাতে সন্দেহ নেই। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বেকায়দায় পড়লেও উৎপাদনকারী দেশ প্রতিবেশী দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের হুকুমও দিতে পারে। কিন্তু প্রতিকার কি?
ডিহাইড্রেটেড অনিয়ন ইন্ডাস্ট্রি
কোনো ধরনের হইচই না তুলে গড়ে উঠেছে ডিহাইড্রেটেড অনিয়ন ইন্ডাস্ট্রি। শুকনো পেঁয়াজশিল্প। ২০২২ সালে এর বিশ্ববাজারের আকার ছিল ১.১২ বিলিয়ন ডলার। এর সম্প্রসারণের চক্রবৃদ্ধি হার ৫.১ শতাংশ। ২০৩০ সালে বাজার ১.৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। শুকনো পেঁয়াজ ও গুঁড়ো পেঁয়াজের সাথে বাংলাদেশও পরিচিত হয়ে উঠেছে। সুপারশপগুলোতে একদিকে যেমন মিলছে পেঁয়াজের পেস্ট, অন্যদিকে সুদৃশ্য কৌটায় মিলছে পেঁয়াজের গুঁড়ো ও পাউডার। আপৎকালীন বাফার স্টক হিসেবে শুকনো পেঁয়াজই উত্তম। পৃথিবী ক্রমান্বয়ে সেদিকেই এগোচ্ছে। সালাদে পেঁয়াজ চাকা থাকবে, ওমলেটে পেঁয়াজকুচি থাকবে, ঝালমুড়িতেও থাকবে। আবার রান্নাঘরে ঝামেলামুক্ত অনিয়ন পাউডারও থাকবে। তবে তাজা পেঁয়াজের সকল পুষ্টিগুণ বোতলজাত কিংবা কৌটাজাত শুকনো পেঁয়াজে যে থাকবে না, এই সত্যটি যারা মেনে নিতে পারছে না, তারা এ শিল্পের বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা পেঁয়াজ কাটা এবং চোখের জ্বালা থেকে মুক্ত থাকতে চাইছে, তাদের জন্য শুকনো পেঁয়াজই স্বাগতম।
পেঁয়াজ পুরাণ
দস্তয়েভস্কির ব্রাদার্স কারামাজোভ থেকে একটি পেঁয়াজ কাহিনি:
একদা দুষ্টের শিরোমণি এক নারী বাস করত। একজন মানুষের পক্ষে যতটা মন্দ হওয়া সম্ভব, সবটাই তার মধ্যে ছিল। একসময় তার মৃত্যু হলো। পেছনে তার কোনো ভালো কাজের ইতিহাস নেই। শয়তান তাকে তুলে এনে আগুনের খন্দকে নিক্ষেপ করল। এ সময় তার অভিভাবক দেবতা ব্যথিত হয়ে ভাবতে লাগল, এ দুষ্ট নারীর যদি একটি ভালো কাজও থাকত, আমি তা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে তার পক্ষে কিছু কথা বলতে পারতাম। খুঁজতে খুঁজতে একটি ভালো কাজ মিলে গেল। একবার এক ভিখারিনীকে একটি পেঁয়াজ তুলে দিয়েছিল। ঈশ্বরকে বলতেই তিনি বললেন, বেশ তাহলে সেই পেঁয়াজটি তার সামনে তুলে ধরো, সে পেঁয়াজ আঁকড়ে ধরবে আর তুমি সেই পেঁয়াজ ধরে তাকে টেনে তুলে স্বর্গে পাঠিয়ে দেবে।
যথারীতি দেবতা তার সামনে পেঁয়াজ ধরে তার নির্দেশনা দিলেন। আস্তে আস্তে সে নারী ওপরে উঠে আসছে। তাকে উঠতে দেখে তা পা আঁকড়ে ধরে ওপরে উঠতে চেষ্টা করে আরও অনেক নারী। কিন্তু দুষ্ট নারী তাদের কেন উঠতে দেবে? বলল, তোরা কে? এটা আমার পেঁয়াজ। তারপর দুপায়ে সমানে লাথি মারতে শুরু করল সে, খোসার ওপর তার হাত ছিল, তার প্রচণ্ড ঝাপাঝাপিতে আলগা হয়ে গেল। দুষ্ট নারী আবার আগুনের খন্দকে পড়ে গেল। তখন থেকে সে সেখানেই পুড়ছে। দেবতা কষ্ট পেয়ে সেখান থেকে অন্য দিকে চলে গেল।
ফিলিপিনো পুরাণ
সিয়েরা মাদ্রে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা এক উপজাতীয় হেকিমের বায়াস নামের খুব সংবেদনশীল এক কন্যা ছিল। তার একটি সুন্দর বোন জন্মগ্রহণ করার পর এই সংবেদনশীলতা আরও বেড়ে গেল। চিকিৎসার জন্য যে আসে, সে-ই তার বাবাকে বলে যায় দুটি মেয়ের মধ্যে ছোটটি বেশি সুন্দর। অবশ্য তার মা বলে, আমার বায়াসও সুন্দর। ছোট বোনের সৌন্দর্য তাকে ম্লান করে দেয়। সবার মুখে তার রূপের প্রশংসা শুনতে শুনতে বায়াসের মন খারাপ হয়ে যায়।
এর মধ্যে বায়াস এক যুবকের প্রেমে পড়ে। কিন্তু সেই যুবকের দৃষ্টি পড়ে তার ছোট বোনের ওপর। তাকে উপেক্ষা করে যুবক হেকিমকে প্রস্তাব দেয়–বড়টিকে নয়, ছোটটিকে বিয়ে করতে চায়। হেকিম দরিদ্র মানুষ। তবুও একটি মেয়ের বোঝা তো কমুক। পূর্ণচাঁদের পরের দিন তাদের বিয়ে হয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষটির এই আচরণে বায়াস খুব কষ্ট পায়। তারপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুদ্বুদের মতো কোথাও সে মিলিয়ে যায়।
এক সকালে মা দেখল, তার পেছনের উঠানে মাটি ভেদ করে একটি চারা উঠেছে। এমন চারা কখনো তার চোখে পড়েনি। কয়েক দিন পর চারার লম্বা পাতাগুলো একটু মলিন মনে হলে কাছে গিয়ে এটাকে মাটি থেকে তুলে আনে।
চারার নিচে পিণ্ডকার একটি ফল। মায়ের মনে হয় এটা রান্নায় খুব কাজে লাগবে। যখন ফলটাকে ছিলতে থাকে এবং কাটে তার চোখে কান্না আসে। তার হারিয়ে যাওয়া কন্যা বায়াসের কথা মনে পড়ে। এটা কি নিরুদ্দিষ্ট বায়াস? নতুবা কাঁদায় কেন। মা ফলটার নাম দেয় বায়াস। কালক্রমে এর নাম হয় সিবায়াস, যার মানে পেঁয়াজ, ইংরেজিতে অনিয়ন।
পেঁয়াজ কাটার সময় যে কান্না আসে, আসলে সেটা হারিয়ে যাওয়া তরুণীর জন্য পৃথিবীর মানুষের ব্যথার কান্না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন, পেঁয়াজ কাটলে বায়াসের জন্য কাঁদতেই হবে।
পেঁয়াজ কেন কাঁদায়?
সেই ফিলিপিনো পাহাড়ি অঞ্চলের বঞ্চিত ও নিরুদ্দিষ্ট তরুণী বায়াসের জন্য? হতে পারে। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাটা জানা দরকার। ভ'গর্ভস্থ পেঁয়াজ ঝাঁজালো হবার একটি কারণ হচ্ছে প্রতিরক্ষা। নিজেকে ভ'গর্ভস্থ সব ধরনের সবজিখেকো কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে স্বাদে ও গন্ধে একটু রূঢ় হতেই হয়। যখন পেঁয়াজ ছিলা হয়, কাটা হয় (কুচি কুচি কিংবা চাকা চাকা, কিংবা পেষা যা-ই হোক) তা এনজাইম ও সালফেনিক অ্যাসিড নির্গত করে। এই যৌগ প্রপেনেথিয়াল এস অক্সাইড উৎপন্ন করে আর তা 'ল্যাক্রিমেটরি এজেন্ট' হিসেবে কাজ করে চোখকে কান্নার জন্য প্ররোচিত করে। প্রপেনেথিয়াল এস অক্সাইড কান্নার জলীয় অংশের সাথে সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, তা অক্ষিগোলককে সুরক্ষা দেয়। পেঁয়াজ কতটুকু কাঁদাবে ও জ¦ালা দেবে, তা নির্ভর করে পেঁয়াজ কর্তনকারীর সংবেদনশীলতা ও পেঁয়াজ অ্যালার্জির ওপর।
পেঁয়াজ ছিলতে গেলে যে ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টর মানুষকে কাঁদায়, জীবনের বেলাতেও তা-ই, ছিলতে গেলে কাঁদতেই হবে।