‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান
মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ ও সামর্থ্যবানদের অন্যতম ফরজ ইবাদত পবিত্র হজ আজ।
সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরিহিত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- “লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাকা। (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, সকল প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু আপনারই, সব সাম্রাজ্যও আপনার, আপনার কোনো শরীক নেই)।”
মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সবাই সমবেত হয়েছেন। আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন তারা। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই মূলত হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না থাকলে হজ হবে না। মসজিদে নামীরাকে কেন্দ্র ধরে ১০ কিলোমিটার বৃত্তাকারভাবে আরাফাতের ময়দান।
আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামীরা থেকে খুতবা দেয়া হবে। এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন হাজীরা।
ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড় রয়েছে। যেখানে হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ) এর দুনিয়ায় পুণর্মিলন হয়েছিল।
এরপর সেখান থেকে হাজিরা মুজদালিফায় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন তারা। শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা। আগামীকাল ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা জামারাহতে যাবেন।
হাজিরা শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর নিক্ষেপ করবেন, কোরবানি দেবেন, মাথা মুণ্ডন করবেন, মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ (সৌদি আরবের তারিখ অনুযায়ী) পর্যন্ত অবস্থান করবেন।
ইসলামের বিধান মতে, ১০ জিলহজ মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি, মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা এবং তাওয়াফে জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজীরা। সবশেষে কাবা শরীফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের কার্যক্রম।
এর আগে সারা পৃথিবীর লাখ লাখ মুসলমান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নিজ নিজ আবাস এবং মসজিদুল হারাম থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর মাধ্যমে সূচনা হয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ বিশ্বসমাবেশ ও অন্যতম ফরজ ইবাদত পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। মিনায় যাত্রার মধ্য দিয়ে হজ পালনের সূচনা হয়, যা শেষ হয় ১২ জিলহজ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে।
হজ ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ। আরবি জিলহজ মাসের ৮-১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধারিত সময়।