আওয়ামী লীগের ইশতেহার: অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করতে মেগা প্রকল্প
দেশের অর্থনীতির গতি বেগবান করতে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে 'স্মার্ট বাংলাদেশ: দৃশ্যমান উন্নয়ন, বর্ধিত কর্মসংস্থান' স্লোগান নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য মেগা প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল সড়ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বন্দরসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব। এ লক্ষ্য সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার তিন মেয়াদে বেশ কিছু বড় বড় প্রকল্প (মেগা প্রকল্প) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। জাতীয় গৌরব ও গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতুসহ এসব প্রকল্প উন্নয়নে প্রত্যাশিত গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে দেশের বৃহত্তম পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য একটি নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এই সেতু এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা বহুমুখী সেতুর সঙ্গে যুক্ত রেলপথ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগের আওতায় এসেছে।
ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রোরেল একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি পদক্ষেপ। এটি কেবল ঢাকাবাসীকে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি দেবে না, রাজধানীর বায়ু ও শব্দ দূষণও হ্রাস করবে। সহজ পরিবহন ব্যবস্থা অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়াবে এবং মেট্রোরেল মানুষের কাজের সময় সাশ্রয় করবে।
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা-আনোয়ারা সংযোগকারী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেল নির্মাণের ফলে বন্দর নগরী 'ওয়ান ওয়ে, টু টাউন' মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
ইশতেহারে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিমান যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা-ফার্মগেট সেকশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুনিয়ায় প্রবেশ করে বাংলাদেশ।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন ও প্রথম টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এই বন্দর চালু হলে কন্টেইনার ও কার্গো উভয় জাহাজই একযোগে ডক করতে পারবে।
ইশতেহারে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বহুপ্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করা হয়। এই রেলপথ বাংলাদেশকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং কক্সবাজারকে একটি স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করবে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর এবং ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লির প্রেসার ভেসেল উদ্বোধন করা হয়, যা বাংলাদেশকে পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
ইশতেহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট।
২০১৮ সালের আগস্টে বাংলাদেশ দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে এবং ২০১৯ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় এলএনজি টার্মিনাল শুরু হয়। মহেশখালীর এলএনজি ভাসমান স্টোরেজের প্রতিটি টার্মিনালের দৈনিক রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ৫০ কোটি ঘনফুট।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা স্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরে প্রথম কন্টেইনার জাহাজ নোঙর করে।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথা বিবেচনা করে কিছু ব্যয়বহুল প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনা করে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাব্য নতুন প্রকল্পগুলো বিবেচনা এবং গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।