তীব্র হচ্ছে শীত, সেই সঙ্গে শিশু-বয়স্কদের মধ্যে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা
দেশে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, কেবল ২ জানুয়ারি সারাদেশে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন হাজার ৪০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দেড় মাসে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়ায় ২৫ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম দেশব্যাপী রোগীদের তথ্যের রেকর্ড রাখে।
১৫ নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ডায়রিয়া প্রধান শীতকালীন অসুস্থতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ রোগে মোট এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে ৫২ হাজার ৪৫৬ জন তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ভুগেছেন। এসব রোগীদের ২৩ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে এবং দুইজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এ সময়ে শিশুরা শীতকালীন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে তাদের প্রতি বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান কামরুল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তিনি জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং শীতকালীন ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতার আহ্বান জানান।
এ ঋতুতে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ডা. কামরুজ্জামান বলেন, 'শিশুকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, শিশুর মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না এবং বাড়ির বাইরে শিশুদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা যাবে না।'
ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের ঘন ঘন স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি এর বেশি বয়সিদের বুকের দুধ ছাড়াও মৌসুমি সবজি, ফল খাওয়ানোর পরামর্শ দেন এ বিশেষজ্ঞ। 'শিশুর নাক পরিষ্কার রাখতে হবে সব সময়। ঠান্ডা-কাশি হলেই ফার্মেসি থেকে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না,' বলেন তিনি।
ডা. কামরুজ্জামান শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে যাওয়া, জ্বর, শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ, বমি — নিউমোনিয়ার এসব লক্ষণের প্রতি সতর্ক থাকতে বলেন। 'এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। এখন শীতকালীন ডায়রিয়া বেড়েছে, তাই ডায়রিয়া হলে শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে,' বলেন এ বিশেষজ্ঞ।
শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েমুল হুদা টিবিএসকে বলেন, 'শীতের শুরু থেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে এমন রোগীর চাপ বেশি এবং এতে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন), নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। এছাড়া বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেড়েছে।'
ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া এড়াতে বাড়িতে শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার ওপর জোর দেন এ চিকিৎসক।
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো শহিদ হোসেন বলেন, 'হাসপাতালের সাধারণ সর্দি-কাশি নিয়ে শিশুরা ভর্তি রয়েছে। তবে বয়স্ক কিছু ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন হাঁপানির সমস্যা নিয়ে।' বর্তমানে হাসপাতালে আবাসন সংকট না থাকলেও নির্বাচন পরবর্তীসময়ে চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা করেন তিনি।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, এ বছর শীতের শুরুতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। তবে হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এক সপ্তাহ যাবত ডায়ারিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
বর্তমানে ভর্তি থাকা ২২০ জন রোগীর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুসহ ৫৩ জন রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাঝখানে স্যালাইনের সংকট থাকলেও এখন আর কোনো সংকট নেই। ভর্তি রোগী বাড়লে তাদের জন্য মেঝেতে জায়গা করে দিয়েও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, জানান এ চিকিৎসক।
নাটোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট বেশি হয় বাচ্চাদের। নাটোর জেনারেল হাসপাতালে আড়াইশ শয্যা থাকলেও রোগী ভর্তি রয়েছেন ৩০০-এর বেশি।
বগুড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিক আমীন কাজল বলেন, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এবার হাসপাতালে শীতকালীন রোগীর চাপ কিছুটা কম।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর উত্তরাঞ্চল প্রধান খোরশেদ আলম, ও সাভার প্রতিনিধি নোমান মাহমুদ।]