নির্বাচন একটা গেম, সেই গেমে হেরে গেছি: মাহিয়া মাহি
চিত্রনায়িক মাহিয়া মাহি রাজশাহী-১ (তানোর ও গোদাগাড়ী) আসন থেকে এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
নির্বাচনের দিন সকালে মুন্ডুমালায় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিলেন, ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, পরের দিন শোডাউন করে তানোর-গোদাগাড়ীবাসীকে তা জানান দিবেন।
ভোটের ফলাফল গণনা শেষে দেখা যায়, ৪ লাখ ৪০ হাজার ২১৮ ভোটের মধ্যে মাহি মাত্র ৯০০৯ ভোট পেয়েছেন। পরেরদিন তিনি কোনো শোডাউন দেননি।
অবশ্য ফল ঘোষণার শুরুতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ভুলবশত ১৭টি কেন্দ্রের ফলাফল ডিসপ্লেতে ০ দেখানো হয়েছিল, পরে তা ঠিক করা হয়। ওই ১৭টি কেন্দ্রে তার ভোট ছিল ১১২৯।
নির্বাচনের পর ভোট গণনার পর থেকেই মাহি মুন্ডুমালায় তার বাড়িতে বাস করছেন। তবে ভোটের পরেরদিন ও আজ মঙ্গলবারও তিনি বাড়ি থেকে বের হননি।
গণমাধ্যমকর্মীরা তার মুন্ডুমালার বাড়িতে ভিড় করলেও তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেননি।
ভোট কম পাওয়ায় মন খারাপ এবং টানা পরিশ্রমের কারণে শরীর খারাপের কথা বলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের ফিরিয়ে দেন।
অবশ্য তিনি সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তানোর-গোদাগাড়ীবাসীর উদ্দেশে ৫ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন।
ভিডিও বার্তায় মাহি বলেন, ''নির্বাচন তো একটা গেম। সেই গেমে আমি হেরে গেছি। এজন্য কিছুটা মন খারাপ হলেও, ওই লেভেলের মন খারাপ না। কারণ আমি প্রতিটি সিচুয়েশনে নেগেটিভ বিষয়টি আগে মাথায় ধরে রাখি, এতে কি নেগেটিভ হতে পারে। সেজন্য আমি প্রতিটি সিচুয়েশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম।''
তিনি বলেন, ''আমি ইশতেহারে বলেছিলাম নারীদের ঘর হবে এক একটি কর্মসংস্থান, আর তরুণেরা হবে উদ্যোক্তা। সেটি বড় পরিসরে কতখানি করতে পারব তা আমি জানিনা। কারণ কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারিভাবে যেভাবে উদ্যোগগুলো নেওয়া সম্ভব, সেটা ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া একটু চ্যালেঞ্জিং। তারপরও আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে যথেষ্ট করার চেষ্টা করব।''
তিনি আরও বলেন, ''সারা বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা যেখানে উন্নত, একদম বিদেশের মতো দেখতে; সেখানে তানোর-গোদাগাড়ীর রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। এখানে এখনও রাস্তাঘাটে গরুর গাড়ি চলার মতো অবস্থা। বৃষ্টিতে হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়। রাস্তাঘাট এবং বরেন্দ্র ভূমির যে পানির সমস্যা তা যেন নতুন এমপি সমাধান করতে পারেন। তিনি যেন গত ১৫ বছরে যা যা উন্নয়নমূলক কাজ করেননি, তা এই পাঁচ বছরে করেন। তার যে জনপ্রিয়তা গত ১৫ বছরে জিরো পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তা যেন তিনি কাটিয়ে ওঠেন। তা না হলে আবারও আগামী পাঁচ বছর পরে নির্বাচনের মাঠে দেখা হবে। আমি মাঠে আছি।''
মাহি বিজয়ী এমপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ''উনার তো জনপ্রিয়তা জিরো। উনি যে ভোট পেয়েছেন তা একদমই নৌকার কারণে। জাস্ট নৌকা প্রতীকটার কারণে। তাই আপনাদের এত খুশি হওয়ার কারণ নাই।'
তিনি বলেন, ''আর আমার প্রতিপক্ষকে বলছি, আমার জন্য আগামী পাঁচ বছর যেসব কর্মী মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে, জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে, সেসব কর্মীকে কোনোরকম ডিস্টার্ব যদি আপনারা করেন, তাহলে মনে রাখবেন অন্য প্রার্থীদের মতো আমি দুর্বল না।''
তিনি আরও বলেন, ''আমি মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। আমার কর্মীদের সেভ করার জন্য সর্বোচ্চভাবে আমি নিজেই লড়ব। যেসব কর্মী এই নির্বাচনে আমার জন্য কাজ করেছেন, তাদের জন্য দরকার হলে আমি নিজের জানও দিয়ে দিতে পারি।''
এই চিত্রনায়িকা বলেন, ''পাঁচ বছরে আপনারা এমন এমন কাজ করবেন, যাতে মানুষের হৃদয়ে আপনাদের জায়গা হয়ে যায়। এটা নতুন এমপির জন্য আমার পরামর্শ। আপনারা অনেক বিজ্ঞ, অনেক কাজের ক্ষমতা আছে আপনাদের, মানুষের উপকার করার জন্য আপনারা যে সুপ্রিম পাওয়ার পেয়েছেন, তা অবশ্যই কাজে লাগাবেন।''
মাহিয়া মাহি বলেন, ''নির্বাচন অনেক সুষ্ঠু হয়েছে। যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী ভোট পেয়েছে। যদিও আমি অনেক কম ভোট পেয়েছি, এটা ব্যাপার না। আমি একজন নারী হয়ে নতুন অবস্থায় যে ভোট করেছি, সেটা অ্যাপ্রিসিয়েট করা উচিত। প্রশাসন অনেক হেল্পফুল ছিল, যখন যেভাবে ফোন করেছি তা হেল্প করেছেন। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর এমন তৎপরতা না থাকলে যারা প্রার্থী ছিলেন, তারা মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে ফেলতেন।''
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মাহিয়া মাহির স্বামীর বাড়ির এলাকার লোকজনকে তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
তার স্বামী রাকিব সরকার ও দেবর মামুন নকিব প্রতিদিন মাহির প্রচারণায় ছিলেন।
মাহির দেবর মামুন নকিব বলেন, ''মাহি ভাবি মুন্ডুমালাতেই আছেন। রাকিব ভাই সোমবার রাতে ঢাকায় গেছেন। ভাবি মুন্ডুমালাতেই বেশি থাকবেন। এখান থেকেই তিনি রাজনীতি করবেন। মাঝে মাঝে শুধু ঢাকায় যাবেন।''