নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত ২৭,০০০ টন প্লাস্টিক পোস্টার কি পরিবেশেই মিশে যাবে?
সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নির্বাচনী প্রচারণার সামগ্রী রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করলেও তা পরিবেশ সম্মতভাবে না হওয়ায় এসব প্লাস্টিকের অধিকাংশ আবার পরিবেশেই মিশে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা।
সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা পোস্টার অপসারণের উদ্যোগ নিলেও প্লাস্টিকের পোস্টার ও ব্যানার অপসারনের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।
তারা এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিচ্ছে এবং অনেকে সেগুলো পুড়িয়ে আশেপাশের এলাকা দূষিত করছে৷
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট ভাগাড়ে সংরক্ষণ করেছে, তবে তাদের বর্জ্যগুলো নিষ্কাশন করার সক্ষমতা নেই।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) ভাষ্যমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে প্রায় ২৭ হাজার টন প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার, ব্যানার, কার্ড, লিফলেট ব্যবহৃত হয়েছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী শহরের প্রেসগুলোতে সার্ভে করে এসডো জানিয়েছে, ঢাকা শহরেই ১৭ হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।
এসডোর মহাসচিব ডা. শাহরিয়ার হোসেন দা বিজনেস স্টান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার, ব্যানারের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। "আমাদের কোনও সিটি কর্পোরেশনেরই সক্ষমতা নেই এসব প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল কিংবা সংরক্ষণ করার।"
শাহরিয়ার জানান, ২০২০-এর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টন।
পরিবেশকর্মী স্থপতি ইকবাল হাবিব টিবিএসকে জানিয়েছেন, এই প্লাস্টিকগুলোকে ভাগাড়ে নিয়ে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয় অথবা জমা করা হয়। এ দুটি কাজই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
ইকবাল বলেন, "এসব প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে থেকে যাচ্ছে আবার ভাগাড় থেকে খালে অথবা জলাশয়ে চলে যাচ্ছে। এভাবে বর্জ্যগুলো পরিবেশ দূষণ করছে।"
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান টিবিএসকে জানিয়েছেন, এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে প্লাস্টিক আলাদা করে সেগুলো পরিবেশসম্মতভাবে নিষ্কাশন করার দায়িত্ব নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে।
তিনি বলেন, "পাশাপাশি স্ব স্ব আসনের প্রার্থীদেরও পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে।"
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের সময় প্লাস্টিকের পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাইকোর্ট।
এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পোস্টার, ব্যানার, লিফলেটসহ বিভিন্ন প্রচার সামগ্রীতে প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
কোন সিটি কর্পোরেশন কি ব্যবস্থা নিচ্ছে?
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শরিফ-উল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "মঙ্গলবার পর্যন্ত আমরা প্রায় ৮০% এলাকার পোস্টার ব্যানার অপসারণ করেছি যা আমিনবাজার ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এগুলো রিসাইকেল এর ব্যবস্থা আমাদের নেই। প্লাস্টিক পোস্টার, ব্যানার নিয়ে আমরাও চিন্তিত।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরি বলেন, সোমবার থেকে পোস্টার-ব্যানারসহ নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত সংশ্লিষ্ট সামগ্রী অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। "এই অপসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচন পূর্ববর্তী অবয়বে আমরা ঢাকা শহরকে ফিরিয়ে আনতে চাই।"
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা টিবিএসকে বলেন, "আমরা নির্বচন কমিশনের বিধি মোতাবেক পোস্টার অপসারণ করে ডাম্পিং করেছি কিন্তু প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারগুলো কি করা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।"
রাজশাহীর সিটি কর্পোরেশন বলছে, ৮০% এর মতো পোস্টার ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন জানায়, পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারও সিসিকের আবর্জনার ভাগাড়ে অপসারণ করা হচ্ছে।
নিষ্কাশনের উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের
একমাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করে নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ডিসেম্বরে শহরের মন্ডলপাড়া এলাকায় স্থাপন করা হয় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র।
এখানে প্লাস্টিক ক্রয় বিক্রয় করা হবে সিটি করপোরেশন ও নেদারল্যান্ড ভিত্তিক একটি সংস্থার উদ্যোগে। বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক যুক্ত পোস্টার বর্তমানে মন্ডলপাড়া এলাকায় রাখা হচ্ছে বলে জানায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হোসেন টিবিএসকে বলেন, "৮ জানুয়ারি থেকেই আমাদের পোস্টার সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগের রাতেই অনেক টোকাই, ভ্রাম্যমাণ মানুষ ও স্বল্প আয়ের মানুষজন পোস্টার খুলে নিয়েছেন। তারা কেউ কাগজ, পলিথিন আলাদা করে তা বিক্রি করবেন। আমরা মানবিক কারণেই তাদের বাঁধা দেই না। তবে আমাদের পোস্টার সংগ্রহের কাজ চলমান আছে।"
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী টিবিএসকে বলেন, "পোস্টার বর্জ্য সিটি করপোরেশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের ড্রেন, নালা প্রতিনিয়ত পলিথিন বর্জ্যে ভরে থাকে। নির্বাচন শেষে এই পোস্টারগুলো সেখানে যাবার ঝুঁকি থাকে। আমাদের কর্মীরা শহরে প্লাস্টিক, পলিথিন দূষণ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।"
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এখনও পোস্টার অপসারণ শুরু করেনি। আজ বুধবার থেকে তারা অপসারণ শুরু করবে বলে জানিয়েছে টিবিএসকে।
তারা পোস্টার সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বর্জ্য ফেলার স্থানে রাখবে বলে জানিয়েছে।