গাজায় যুদ্ধের ১০০ দিন! ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশ্বজুড়ে চলছে বিক্ষোভ
গাজায় চলমান যুদ্ধ ১০০ দিন অতিক্রম করেছে। আর বিশ্বের নানা প্রান্তে এই যুদ্ধের বিরোধিতা করে পথে পথে চলছে প্রতিবাদ। একইসাথে এসব বিক্ষোভে অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে।
গতকাল (শনিবার) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ইসরায়েলের কট্টর মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে জনসাধারণ জড়ো হয়েছিল। সেখানে থাকা বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাবে ওয়াশিংটনের ভেটো প্রদানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
কুয়ালামপুর থেকে আল জাজিরা রিপোর্টার ফ্লোরেন্স লই বলেন, "আমরা এখানে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে আসা লোকেদের সাথে কথা বলেছি। তারা প্ল্যাকার্ড ধরে আছে যাতে লেখা ছিল: 'গণহত্যা বন্ধ কর', সেইসাথে 'শিশুদের বোমা মারা আত্মরক্ষা নয়' ইত্যাদি।"
বিক্ষোভগুলিতে মূলত ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। একইসাথে গাজায় চলমান রক্তপাত বন্ধের আহ্বানও জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতেই, চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২৩,৮৪৩ জন মানুষ নিহত ও ৬০,৩১৭ জন মানুষ আহত হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে গত শুক্রবার আদালতের গণশুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তেল আবিব গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলের মতে, মামলাটি উপরন্তু সত্যের বিকৃতি ছিল যা মানহানির সমান। এক্ষেত্রে তারা গত ৭ অক্টোবর হামাসের করা হামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। যাতে প্রায় ১,১৩৯ জন নিহত হয়েছে এবং জিম্মি করা হয়েছিল ১২০ জনের অধিককে।
গত মাসে মালয়েশিয়ার সরকার বলেছে যে, তারা আর ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজগুলিকে মালয়েশিয়ার বন্দরে ডক করার অনুমতি দেবে না। একইসাথে তেল আবিবের পথে যে কোনও জাহাজকে দেশটির কোনও বন্দরে কার্গো আনলোড করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
কয়েক ডজন এনজিওর সহযোগিতায় মালয়েশিয়ার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। সেখানে গাজায় চলমান নৃশংসতার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের ভূমি দখলের ইতিহাস সম্পর্কেও জানানো হচ্ছে।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের বাইরেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। সেখানে তারা ফিলিস্তিনের পতাকা সাথে নিয়ে 'ইসরায়েল বয়কট করো' এবং 'এখনই যুদ্ধবিরতি করো' ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ছিলেন।
আর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়েছিল। সেখান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ফাহমিদা মিলার জানান, ভিড়ের মধ্যে অনেকেই গাজায় যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে। কেননা দেশটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলকে হাজার হাজার টন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে; যা ফিলিস্তিনি জনগণের উপর বোমাবর্ষণে ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচার আদলতে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার কারণে এই প্রতিবাদ আরও জোরদার হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
জোহানেসবার্গে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রোশান দাদো বলেন, "গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকব।"
একইসাথে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা, বার্লিন, আম্মান এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিশ্বের বহু দেশের রাজধানীতে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বহু মানুষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে দেখা যায়।
এদিকে লন্ডনে মিছিলে অংশ নেওয়া প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্টের সদস্য জিনাইন হোরানি জানান, বিক্ষোভকারীরা গাজায় অবিচারের জন্য ক্ষুব্ধ এবং ফিলিস্তিনি অধিকারের জন্য প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আল জাজিরাকে জিনাইন বলেন, "সকলের অনুভূতি রাগ এবং হতাশা এক। গত ৭ অক্টোবর থেকে আমরা প্রতি সপ্তাহে রাজপথে নামছি।"
জিনাইন আরও বলেন, ব্রিটিশ জনগণ গাজায় যুদ্ধবিরতিকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করছে। কিন্তু দেশটির রাজনীতিবিদরা গণহত্যাকে অর্থায়ন ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন।
"শেষ পর্যন্ত আমরা জানি যে, জিনিসগুলির বিশাল পরিকল্পনায় অংশ। ন্যায়বিচারের দীর্ঘ যাত্রায় আমরাই জয়ী হবো। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় নামতে থাকব, চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখব" যোগ করেন জিনাইন।
এদিকে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) জানায়, সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্যাংক জংশনে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছিল। সেখানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলট যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেন।
ফিলিস্তিনের জন্য করা মার্চে সিরিয়ার শিশু শরণার্থীর একটি বিশাল পুতুল, লিটল আমাল দেখা যায়। একইসাথে সেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের একটি দলও ছিল।
৩.৫ মিটারের পুতুলটির নামের অর্থ আরবি ভাষায় আশা। এই শিশুটি ২০২১ সালের জুলাই মাসে তুর্কি-সিরিয়ান সীমান্ত থেকে ম্যানচেস্টার পর্যন্ত ৮ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করার পরে মানবাধিকারের একটি আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে ওঠে।
এদিকে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, লন্ডনে সংগঠিত বিক্ষোভে প্রায় ১৭০০ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে গাজার প্রতি সংহতি প্রদর্শনকারী বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের হামলায় বাইডেন প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। একইসাথে যুদ্ধবিরতি এবং ইয়েমেনে মার্কিন হামলা ক্রমবর্ধমান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি কিম্বার্লি হ্যালকেট বলেন, "জো বাইডেনকে বহু প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হচ্ছে। তারা তাকে 'গণহত্যা জো' বলে ডাকছে আর স্লোগান দিচ্ছে যে, 'আমরা নভেম্বর মনে রাখব'। এখানে প্রচুর ক্ষুব্ধ কণ্ঠস্বর রয়েছে। এটি অবশ্যই প্রেসিডেন্টের জন্য ভালো হবে না।"
এদিকে গতকাল (শনিবার) ভারতের হায়দ্রাবাদে এবং শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর কোল্লুপিটিয়া পাড়ায় ছোট ছোট বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানেও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।