সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় জবুথবু বরিশাল, শীতজনিত অসুখে হাসপাতালে ভর্তি ৬ হাজার ৩৯৩ জন
নদী-বিধৌত বরিশাল বিভাগের মানুষ ঝড়-তুফান মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত হলেও– এবছরের হাড়-কাঁপানো শীত পর্যদুস্ত করে ফেলেছে পুরো জনপদ। বিগত তিনদিন রোদ ঝলমলে আকাশের দেখা মেলেনি। শেষ বিকেলে এক চিলতে রোদ উঠলেও– তা ছিল যেন উত্তাপহীন। শীতে সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের। হাসপাতালেও ঠান্ডাজনিত অসুখে পড়া রোগীদের লম্বা-লাইন।
বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'শনিবার বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রোববার তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবারের শীতে বরিশাল বিভাগে এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।'
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঠান্ডাজনিত রোগে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৩৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়। বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৮৭ জন। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৯ জন এবং ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১২৩ জন।
ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। ২৪ ঘন্টার প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এরমধ্যে ভোলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫১ জন, পটুয়াখালীতে ৪১, বরগুনায় ৪০, বরিশালে ৩২, পিরোজপুরে ২২ ও ঝালকাঠি জেলায় ১১ জন। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পটুয়াখালীতে ৩১ জন, ভোলায় ২১ জন। এছাড়া বরিশাল জেলায় ১৬ জন, পিরোজপুরে ৮ জন এবং ঝালকাঠিতে ৩ জন।
ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পটুয়াখালীতে ৮১ জন। ঝালকাঠিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন আর বরিশালে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন।
বিগত এক মাসে এই বিভাগে শীতকালীন রোগের প্রার্দুভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৩৯৩ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন– ৫ হাজার ৯৬ জন এবং নিউমোনিয়া-শ্বাসকষ্টে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৯৭ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শীত এলেই ঠান্ডাজনিত রোগের প্রার্দুভাব হয় বরিশাল বিভাগে। আমরা ছয়টি জেলার সবগুলো সরকারি হাসপাতাল, সেবাকেন্দ্রে শীতকালীন রোগের গুরুত্বারোপ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি শীতকালীন রোগ থেকে বাঁচতে বাড়িতেও শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নেওয়া নিতে হবে।
তিনি জানান, 'শীতের দিনগুলোয় রোগী বাড়লেও দ্রুত সময়ে চিকিৎসা পাওয়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। শীত কমতে শুরু করলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কমবে।'
শহরের চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাসিন্দা মুনসুর বলেন, এরচেয়ে অন্যান্য বছর থেকে বেশি শীত লাগলেও– এবার হা-পা সব বরফ হয়ে যাচ্ছে। আগে শৈত্যপ্রবাহ চলার সময়েও মাঠে সবজি তুলেছি। কিন্তু, এবছর কিছুই পারছি না।
সদর উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের করিমন বেগম বলেন, আজ দুইদিন ধরে নাতি-নাতনিদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছি। তারা ঘরেই থাকছে। 'এত শীত আগে কখনো পাইনি।'
বরিশাল নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে একরামুল হক বলেন, শীতের প্রভাব হয়তো আর ৩/৪ দিনে কেটে যেতে পারে। কিন্তু, গত দুইদিন ধরে যে শীত লাগছে– তাতে হাড় পর্যন্ত কেঁপে যাচ্ছে। সামনের দুই-তিনদিন কাটানোর জন্য রাস্তার ধারের ভ্যান থেকে শীতের পোশাক কিনতে আসলাম।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীত বাড়ার সাথে সাথে শীতপোশাকের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, 'শৈত্যপ্রবাহ যে কয়দিন চলবে– ততদিন আমাদের দোকানে ক্রেতার ভিড় থাকবে। এখন দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছি না। শীত কমলে এই চাহিদা কমে যাবে।'
বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।
বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী এবং জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।