বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তা
তিস্তা নদীর পানি নীলফামারী জেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টা থেকে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার ভোররাতের পর থেকে তা বৃদ্ধি পেতে শুরু। গত ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়া অফিস বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন ২৪০ মিলিলিটার।
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে তিস্তাসহ জেলার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলার পাশাপাশি বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বিভিন্ন পুকুরের মাছ বের হওয়ার ফলে মৎস্য চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট।
তিস্তার বন্যায় ওই এলাকায় বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ছে। চরাঞ্চলের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রজন কুমার দাস।
অন্যদিকে লালমনিরহাটের চার উপজেলায়ও দেখা দিয়েছে বন্যা। ওই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ছে।
লালমনিহাটের কালীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম মানিক জানান, গত তিন দিনের বৃষ্টির ফলে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের তিস্তা অববাহিকার ১৮টি চর ও গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
ওই এলাকার কৃষক শেখ সাদি জানান, তিস্তার চরাঞ্চলের বাদাম ক্ষেত ও আমন ধানের বীজতলা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের আটটি উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পুর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তার জন্য বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে এই ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।