দেড়শ মিটার ভঙ্গুর সড়ক: ১০ বছর ধরে ১৫ হাজার মানুষের ভোগান্তি
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এলাকার 'বাসস্টেশন-দরগাহপাড়া-ভাদিতলা' সড়কের দেড়শ মিটার ভঙ্গুর অংশ নিয়ে গত ১০ বছর ধরে ভুগছেন পাঁচ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।
বাঁশের সাঁকোতে কোনোমতে চলাচল থাকলেও সম্প্রতি ঢলে সেই সাঁকোও তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। সড়কের ভঙ্গুর অংশটি টেকসইভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এরইমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ওই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম নামে এক বাসিন্দা।
আবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালকের কাছে অনুলিপি হিসেবে পাঠানো হয়েছে। আবেদনকারী একেএম জাহাঙ্গীর আলম ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ভাদিতলার বাসিন্দা মাস্টার আলী হোছাইনের ছেলে।
জাহাঙ্গীর আলম তার আবেদনে লিখেছেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও বাসস্টেশনের পূর্ব পাশে 'ভাদিতলা-দরগাহপাড়া-শিয়াপাড়া-পশ্চিম ভাদিতলা' সমেত সাত নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ৬০০। এখানে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তিনটি পাড়ালিয়া বাজার রয়েছে। এলাকায় উৎপন্ন হয় নানা মৌসুমী অর্থকরী ফসল। এসব ঘিরে কয়েক হাজার বসতিতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস। শিক্ষার্থীসহ এসব মানুষের যাতায়তের একমাত্র পথ 'বাস স্টেশন-দরগাহপাড়া-ভাদিতলা' প্রায় তিন কিলোমিটারের সড়ক।
তিনি আরও লিখেন, বিগত বছর দশেক আগে পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর পালপাড়া অংশটি ভেঙ্গে সড়কটির দরগাহপাড়ার পশ্চিমাংশে প্রায় দেড়শ মিটারের মতো একেবারে জলাশয়ে পরিণত হয়। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে আরও কিছু অংশ।
তখন থেকে বিভিন্ন দপ্তরে নানাভাবে যোগাযোগ করা হলেও সড়কটি মেরামতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা স্বউদ্যোগে কাঠের সাঁকো তৈরি করে কোনোমতে যাতায়াত সচল রাখে। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে কাঠের সাঁকোটি ভাসিয়ে নিয়ে লোকজনকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
গত ১৬ জুনের ভারি বর্ষণে ১৭ জুন ভোররিয়াঘোনা হয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে শিয়াপাড়া-পালপাড়া-দরগাহপাড়া, ভাদিতলা, কলেজ গেট, মাইজপাড়ার পুরো বিল পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ সময় সড়কটির সেই কাঠের সাঁকোটি আবারও ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
নিজেদের প্রচেষ্টায় আবারো কাঠের সাঁকো তৈরি হয়েছে। কিন্তু এভাবে অস্থায়ী সমাধানে প্রকৃতির সঙ্গে সবসময় যুদ্ধ করতে হচ্ছে হাজারও শিক্ষার্থীসহ ১৫ হাজার মানুষকে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির ভঙ্গুর অংশে নড়বড়ে সাঁকো তৈরি করে স্থানীয়রা চলাচল অব্যাহত রেখেছেন। পূর্ব পাশে সাঁকো তৈরি করা গেলেও পশ্চিমাংশে সাঁকো করার কোনো পজিশন না পেয়ে এক পাশে একটি বাঁশের সাহায্যে কোনোমতে পার হচ্ছেন স্থানীয়রা।
এখানে জন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যান চলাচল কল্পনাও করা যাচ্ছে না। ফলে যেকোনো মালামাল পারাপারে দুর্ভোগের পাশাপাশি খরচও বেশি হচ্ছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল হাকিম নুকি বলেন, ভাঙ্গা সড়কটি মেরামতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় সাংসদও বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কোনোভাবেই লাঘব হচ্ছে না।
একেএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এতদিন সব জায়গায় মৌখিকভাবে যোগাযোগ হয়েছে। হয়তো সে কারণে আমাদের ভোগান্তি লাঘবের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাই সবার কথা চিন্তা করে এবার লিখিত আবেদন করেছি। সড়কের ভাঙ্গা অংশে একটি সুপরিসর কালভার্টসহ উভয় পাশে টেকসইভাবে পাকা করা গেলে ১৫ হাজার মানুষ যাতায়াতের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, একটি আবেদন পেয়েছি। এলাকাটি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেওয়া হবে।