জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পাল্টা জবাবের সিদ্ধান্ত জানাল বাইডেন
জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি 'টাওয়ার ২২' এ ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। গত রবিবারের এ হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। খবর বিবিসির।
এক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, মার্কিন সেনাদের ওপর ড্রোন হামলায় দেশটি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সেটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাননি তিনি।
হোয়াইট হাউজে গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে এমন মন্তব্য করেন জো বাইডেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে এটাই প্রথম শত্রুপক্ষের গোলার আঘাতে মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনা।
এই ঘটনার পেছনে ইরান দায়ী কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, "আমি তাদের (ইরানকে) এই অর্থে দায়ী করি যে, তারা হামলাকারীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে।"
যদিও ইরানের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। এই অভিযোগ 'ভিত্তিহীন' উল্লেখ করে তেহরান বলেছে, 'বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ইরানের সংশ্লিষ্টতা নেই।'
হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিক্রিয়ায় 'কয়েক স্তরের' পন্থা নিতে পারে। তিনি বলেন, "শুধু একটি প্রতিক্রিয়া নয়। বরং সময়ের ব্যবধানে সম্ভাব্য একাধিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।"
কিরবি আরও বলেন, "প্রেসিডেন্ট আমাদের সৈন্য এবং আমাদের সুযোগ-সুবিধা রক্ষা করতে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যা করতে হবে তা করবেন।"
এক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ইরানের মিত্রদের ঘাঁটি এবং কমান্ডারদের উপর প্রতিশোধমূলক হামলাসহ বেশ কয়েকটি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক বা সিরিয়ায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সিনিয়র কমান্ডারদেরও টার্গেট করতে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের দ্বারা আক্রমণ করা হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইরাকের ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স গত রবিবারের হামলার দায় স্বীকার করেছে।
সিরিয়া সীমান্তের কাছে জর্ডানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় 'টাওয়ার ২২' নামের মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত।
হামলার বিষয়ে একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, "শত্রুপক্ষের ড্রোনটি খুব নিচু ও খুব ধীর গতিতে আসছিল। একই সময়ে একটি আমেরিকান ড্রোনও একটি মিশন থেকে ঘাঁটিতে ফিরে আসছিল।"
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মার্কিন ড্রোনটি যাতে গুলি করে ভূপাতিত না করা হয় সেজন্য ঘাঁটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া বৈশিষ্ট্যগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলস্বরূপ টাওয়ার ২২-এ অবস্থানরত সৈন্যদের জন্য কোনো সতর্কতা ছিল না এবং ড্রোনটি যখন আঘাত হানে তখনও অনেকে তাদের কোয়ার্টারে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, ওই ঘাঁটিতে প্রায় ৩৫০ জন মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। যাদের দাবি, তারা ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে জোটের সাথে এক হয়ে কাজ করছে।
ইরাক, জর্ডান ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের নিয়ন্ত্রণে এক ডজনেরও বেশি ঘাঁটি রয়েছে। এগুলোর একটি 'টাওয়ার ২২'।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপ বা আইএসের পুনরুত্থান ঠেকাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসেবে ও ইরাক সরকারের আমন্ত্রণে দেশটিতে আড়াই হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে জর্ডানে প্রায় তিন হাজার এবং কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসকে সমর্থন দিতে সিরিয়ায় প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে আরও কয়েকটি ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যার মধ্যে উপসাগরে তিনটি প্রধান বিমান ঘাঁটি এবং বাহরাইনে একটি বন্দর রয়েছে, যা ইউএস নেভাল ফোর্সেস সেন্ট্রাল কমান্ড এবং মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান