স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত
পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে বলে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে একটি অস্ত্রোপচার করানোর পরে নাফিজ সরাফাত সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই ব্যাংকের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত নাহয়–সেজন্য তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'
নতুন কাউকে নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্য ফারমার্স ব্যাংক নামে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৭ সালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। কিন্তু, শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। ব্যাংকটি বাঁচাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশান অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়।
২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে দ্য ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক।
সার্ব-অডিনেট বন্ড জারি ও স্থায়ী আমানত রাখার মতো অন্যান্য সহায়তার আকারেও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
কিন্তু, পদ্মা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায়– সহায়তা দিয়েও প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ক্ষয় ঠেকানো যায়নি।
বিপুল খেলাপি ঋণ, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে না পারা, এবং বড় লোকসান দিতে থাকায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে পদ্মা ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু পদ্মা ব্যাংককে যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ (মার্জার) বা অধিগ্রহণ (অ্যাকুইজিশন) করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দেন।
কিন্তু, মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন আর হয়নি।
এরপর ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। বলা হয়, কোম্পানিটির ৭০ কোটি ডলার (৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ আনতে ডেল মরগান মধ্যস্থতা করবে। ২ সেপ্টেম্বর ডেল মরগানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে পদ্মা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ডেল মরগানের চেয়ারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু, সেই অর্থও কখনো আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৪০ কোটি টাকায়। একইসময়ে তাদের খেলাপি ঋণই ছিল ৬২ শতাংশ।
এদিকে বিনিয়োগ করে পাঁচ বছর পরেও কোনো রিটার্ন না পাওয়ায়– ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা ব্যাংক থেকে তাঁদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় আইসিবি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থাটি এখন তাদের পদ্মা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির জন্য দেশি-বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছে।
সেসময় আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'ব্যাংকটি মুনাফা করলে যেন তার অংশ পাওয়া যায়, সেজন্য আমরা ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করি। কিন্তু এত দিনেও পদ্মা ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে কোন রিটার্ন পাইনি। এ কারণেই আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফলে ঋণ থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।