মিয়ানমারের ১০৬ সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এপর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর ১০৬ সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে সোমবার সকাল পৌনে ৮টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম ৯৫ জন বিজিপি সদস্যের বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা জানান।
তিনি বলেন, সংঘর্ষের জেরে রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিজিপির ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে তারা আশ্রয় চাইলে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান বলেন, 'মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দুই সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
তারা হলেন- রি লি থাইন (২২) ও জা নি মং (৩০)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে আহত অবস্থায় বিদ্রোহী আরাকান আর্মির ছয় সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুপুর সাড়ে ১২টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করেন।
আহতরা রাখাইন রাজ্যের বুচিডং, টাংগো এবং ম্রাউ এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ২৪, দুজনের ২৩, একজনের ২০ এবং একজনের ২২ বছর বলে জানা গেছে।
তবে কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়সার হামিদ রাতে বলেন, 'এ ধরনের কোনো খবর তাদের কাছে নেই। তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।'
পালংখালীর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়েনের ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে সকাল থেকে গোলগুলির আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি।
তিনি বলেন, 'সীমান্তে তার এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। সকালে নতুন করে গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি।'
তবে সোমবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে দুই-তিনটি গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।
এর আগে রবিবার বিকেলে বিজিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, 'পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা তাদের নিরস্ত্র করেছি। তারা এখন আমাদের হেফাজতে আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য আমরা সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা সীমান্তে সতর্ক আছি।'
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, 'মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে। বিজিবি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।'
গতকাল, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সীমান্ত শিবির দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী দলগুলো মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ক্রমাগত গুলি, মর্টার শেল ও রকেট বিস্ফোরিত হচ্ছে। গুলিতে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশি সীমান্তের এক বাসিন্দা বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনেক ভয়ে আছি। কী হবে জানি না।'
এদিকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে চলছে মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ। এতে সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তুমব্রু সীমান্তের কাছে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
গত শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গোলাগুলি চলছে। তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশি দুই বাড়িতে মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশসহ গুলি এসে পড়েছে।