যুক্তরাষ্ট্রে অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিতরা কি বেশি সুখী? নতুন জরিপে মিলেছে উত্তর
শুধু রূপকথাতেই বিয়ের পর সুখী জীবনের কথা থাকে না, বাস্তবেও এটি সম্ভব। সাম্প্রতিক এক জরিপে এমনটাই উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ পোল শুক্রবার জানায়, প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিতরা অন্য যেকোনো ধরনের সম্পর্কে থাকা মানুষের চেয়ে বেশি সুখী।
জরিপে অংশ নেওয়া লেখক গ্যালপের প্রধান অর্থনীতিবিদ জোনাথন রথওয়েল বলেন, 'যেভাবেই মূল্যায়ন করুন না কেন, মানুষের জীবনযাপন লক্ষ্য করলেই বিয়ের একটি বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ সুবিধা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই।'
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৩ লাখ মানুষকে তাদের বিবাহিত জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।
সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার জন্য শূন্য এবং সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দিয়ে এই জরিপ চালানো হয়।
এতে অংশ নেওয়াদের কাছে পাঁচ বছরের সুখী জীবনের মাত্রা সম্পর্কে আগাম প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে দেখা যায়, একজন মানুষ বর্তমান বিবাহিত জীবনের নম্বর দিয়েছেন সাত কিংবা তারও বেশি। আবার ভবিষ্যৎ জীবনের মূল্যায়ন করেছেন আট কিংবা তারও বেশি নম্বর দিয়ে।
জরিপে আরও বলা হয়, বিবাহিতরা তাদের বিয়ের আগের সঙ্গীর সঙ্গে কাটানো সময়ের তুলনায় বিয়ের পরের জীবনের অভিজ্ঞতাকে বেশি সুখের বলে বর্ণনা করেছেন।
তারা তাদের বিয়ের আগের সঙ্গীর চেয়ে বিবাহিত সঙ্গীর সঙ্গে তাদের সুখের মাত্রা ১২ থেকে ২৪% বেশি বলে জানিয়েছেন।
গবেষকরা বয়স, বর্ণ, নৃতত্ত্ব, লিঙ্গ ও শিক্ষার মতো মানদণ্ড নির্ধারণ করেও ব্যবধানের মাত্রা একই থাকে।
শিক্ষা সুখের ক্ষেত্রে একটি বড় নিয়ামক। তবে দেখা গেছে, উচ্চমাধ্যমিকেরও কম পড়াশোনা করা বিবাহিত মানুষেরা স্নাতক সম্পন্নকারী উচ্চশিক্ষিত মানুষের তুলনায় জীবনকে বেশি উপভোগ্য হিসেবে মনে করে।
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার ন্যাশনাল ম্যারেজ প্রজেক্টের পরিচালক ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রাডফোর্ড উইলকক্স বলেন, 'বর্ণ, লিঙ্গ, শিক্ষা ও বয়স বিয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। তবে জীবনযাপনের সবচেয়ে ভালো সময় কাটানোর প্রশ্নে সঙ্গীর সঙ্গে থাকা সম্পর্কের ধরন এসব মানদণ্ডের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সামাজিক জীব। অ্যারিস্টটল তাই বলেছেন, আমরা যোগাযোগ করতে মুখিয়ে থাকি।'
কীভাবে সঙ্গী নির্বাচন করছি এটিও পার্থক্য তৈরি করে
লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিয়ে ও পারিবারিক থেরাপিস্ট এবং সিএনএন রিলেশন কন্ট্রিবিউটর ইয়ান কার্নার বলেছেন, সম্ভবত বিয়ের সঙ্গে সুখের সম্পর্ক হলো, মানুষ এটা থেকে কী আশা করে তার ওপর নির্ভরশীল।
কার্নার বলেন, আমার গত এক দশকের অভিজ্ঞতায় আমি বিয়ের প্রবণতা ধীরে ধীরে 'রোমান্টিক' থেকে 'বন্ধুসুলভ' বিয়েতে পরিবর্তিত হতে দেখছি। এর অর্থ হচ্ছে, এখন অনেক বেশি মানুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে তাদের বেছে নিচ্ছে, যারা আবেগীয় সঙ্গী নয়, বরং ভালো বন্ধুর মতো হবে।
তিনি বলেন, এটি করার ফলে আকর্ষণের সমস্যা হতে পারে, তবে এর অর্থ হলো মানুষ দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং সন্তুষ্টি পাওয়ার গুণাবলীর ভিত্তিতে সঙ্গী বেছে নিচ্ছে।
বোস্টনের মনোবিজ্ঞানী ড. মনিকা ও'নিল বলেন, 'বিয়ে মানে এমন কারো সঙ্গে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, যিনি একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, নিরাপদ ও সুরক্ষিত আশ্রয়। যিনি যে কোনো প্রতিকূলতায় আপনার পাশে থাকবে।'
সুখী হতে চাইলে কি তবে বিয়ে করতেই হবে?
রথওয়েল বলেন, এসব গবেষণা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখলাম। তবে বিয়ে সুখের সবচেয়ে বড় কারণ কি না তা বলা মুশকিল।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এটা এমন মানুষদের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে, যাদের মধ্যে এমন গুণ রয়েছে যা অন্যকে সুখী করতে সাহায্য করে এবং তারা নিজেরাও বিয়ে করতে আগ্রহী থাকেন।
রথওয়েল বলেন, 'পুরুষদের জন্য বেশি উপার্জনের সক্ষমতাও বিয়ে করার আগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কিত।'
তিনি বলেন, 'সাহিত্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে সফল, সুদর্শন ও বুদ্ধিমান পুরুষদের যেমন শ্রমবাজারে আয়ের সুযোগ বেশি থাকে, তেমনি তাদের বিয়ে করার সম্ভাবনাও বেশি।'
তবে ভিন্ন পরিস্থিতি, সামাজিক পরিবর্তন এবং বিয়ের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে বিয়ের গুণমান পরিবর্তিত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যে সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে একটি ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা মাত্র, তাদের কাছে এ থেকে পাওয়া সুখ খুব কম গুরুত্বপূর্ণ।
রথওয়েল বলেন, এরচেয়ে যেখানে মানুষ তার সঙ্গী বাছাইয়ে স্বাধীন, তাদের কাছে বিয়েতে সুখী হওয়ার বিষয়টি বেশি প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, 'আমি এখনও বিশ্বাস করি, অসুখী দম্পতির চেয়ে অবিবাহিতরা বেশি সুখী।'
ও'নিল বলেন, 'তাই বিয়ে বা প্রেম যাই হোক না কেন, একে অন্যের প্রতি করা প্রতিশ্রুতি স্মরণ করে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আপনারা সম্পর্কে সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন। '
রথওয়েল বলেন, 'আমি মনে করি না আমরা এখনও সমাজ বিজ্ঞানের এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে থেকে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারি যে বিয়ে সুখের কারণ।'