জেলবন্দি ইমরান খানের ‘বিজয়ী ভাষণ’ যেন এআইয়ের সম্ভাবনা ও শঙ্কার প্রতিফলন!
পাকিস্তানের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের পুরো সময়টাই জেলে বসে কাটিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একইসাথে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় নির্বাচনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারেননি তিনি। এক্ষেত্রে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এটিকে দেশটির ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে 'কম বিশ্বাসযোগ্য' সাধারণ নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তবে জেলে বন্দি থাকলেও সমাবেশ কিংবা র্যালিতে দেখা গিয়েছে ইমরান খানকে! আর এটি সম্ভব হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিংবা এআইয়ের কল্যাণে। এক্ষেত্রে চরম দমন পীড়নের মাঝেও পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে এআই ব্যবহার করে সাবেক এই ক্রিকেটারের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।
দেশটির নির্বাচনে ভোট গণনার পর গত শনিবার দেখা যায়, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকটা চমক দেখিয়ে বেশিরভাগ আসনে জয়লাভ করেছেন। যার ঠিক পরেই এআই তৈরি ইমরানের কণ্ঠে নির্বাচনে বিজয়ের ঘোষণা শোনা যায়।
এআই ভিডিওতে জনগণের উদ্দেশে ইমরান খানকে বলতে শোনা যায়, "আমার পূর্ণ আস্থা ছিল যে, আপনারা সবাই ভোট দিতে আসবেন। আপনারা আমার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছেন। সকলের গণহারে ভোটদান চমক সৃষ্টি করেছে।"
ইমরানের বক্তব্যে নওয়াজ খান বিজয়ী হওয়ার যে দাবি করেছেন, সেটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। একইসাথে দল হিসেবে পিটিআই জয়লাভ করেছে বলেই দাবি করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে এআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে অনেককেই বেশ শঙ্কিত হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ইমরানের ভিডিওগুলো প্রমাণ করেছে যে, কীভাবে দমন পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে এআই ব্যবহার হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি ঝুঁকির ক্ষেত্রও তৈরি করতে পারে।
'ফেকিং ইট: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন এ হিউম্যান ওয়ার্ল্ড' এর লেখক এবং নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টবি ওয়ালশ বলেন, "এক্ষেত্রে এটি শেষমেশ একটি ভালো বিষয়। তাই সম্ভবত এটিতে আমাদের সমর্থন রয়েছে। এটির মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে বন্দি হওয়া ব্যক্তিও তার সমর্থকদের সাথে কথা বলতে সক্ষম।"
২০২২ সালে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন ইমরান। এক্ষেত্রে গতবছর রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার হন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই ক্রিকেটার। যদিও এমন অভিযোগকে অস্বীকার করে বরং এসবের পেছনে সেনাবাহিনীর হাত হয়েছে বলে ইমরান ও তার সমর্থকেরা দাবি করে আসছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি দলের সংবাদ কভারেজেও সেন্সর আনা হয়েছে। এমতাবস্থায় দলটি ইউটিউব ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে অনলাইন সমাবেশ করেছে।
পরবর্তীতে গত ডিসেম্বর মাস থেকে পিটিআই ইমরান খানের বার্তাকে ছড়িয়ে দিতে এআই ব্যবহার করতে শুরু করে। এক্ষেত্রে জেল থেকে আইনজীবী মারফত যে নোটগুলো এই নেতা পাঠাচ্ছেন, সেটি কন্টেন্ট আকারে ব্যবহার করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর এআই ব্যবহারের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। বরং ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় তৎকালীন বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টি এআইয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইউন সুক ইওলের অ্যাভাটার তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে তিনি নির্বাচনে জয়লাভও করেন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডেও রাজনীতিবিদদের এআই ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে।
এদিকে দিল্লিতে ২০২০ সালে রাজ্যসভার নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী মনোজ তিওয়ারিও এআই ব্যবহার করেছেন। সেক্ষেত্রে ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আঞ্চলিক হারিয়ানি ভাষায় তাকে কথা বলতে দেখা যায়।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহকারী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, "রাজনৈতিক প্রচারণায় এআইয়ের একীভূতকরণ বিশেষ করে ডিপফেকের ব্যবহারটি ক্ষণস্থায়ী কোনো প্রভাব নয়। বরং এটি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হতে থাকবে।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান