জানুয়ারি মাসের জনশক্তি রপ্তানি গত নয় মাসে সর্বনিম্ন
মালয়েশিয়া ও ওমানে চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে জানুয়ারি মাসে গত নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন জনশক্তি রপ্তানি করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার এই অর্থনীতির বৃহদাংশ রেমিট্যান্স থেকে আয়ের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৪ সালের প্রথম মাসে মোট ৮৭,৮৫২ জন শ্রমিককে বাইরে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ১৬% কম এবং মাস হিসাবে ৮% কম।
জনশক্তি রপ্তানি কমে গেলেও জানুয়ারি মাসে ২.১০ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের মাসগুলোর গড় আয়ের তুলনায় এটি ৭.৬৯% বেশি এবং গত ৭ মাসের মধ্যে এই অঙ্ক সর্বোচ্চ।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মালয়েশিয়া প্রতিমাসে ২২ হাজারেরও বেশি শ্রমিককে নিয়োগ দিয়েছে, তবে শেষ মাসে এই দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশটি নিয়োগ দিয়েছে মাত্র ১৪,৩৫২ জনকে।
এছাড়াও গত নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত শ্রমিক পাঠানোর অভিযোগে বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে ওমান। এর ফলে দেশটিতে নতুন বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরি পাওয়ার পরিমাণেও ধস নেমেছে।
এই উপসাগরীয় দেশটি গত বছরের প্রায় প্রতিটি মাসেই ১০ হাজারের কাছাকাছি শ্রমিককে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু গত মাসে মাত্র ৩০২ জনকে নিয়োগ করেছে দেশটি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বাইরা)-র সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, "নতুন সরকার গঠন চলাকালে খুবই সতর্কভাবে শ্রমিকদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গন্তব্য দেশটি থেকেও নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে। আশা করছি, আগামী মাসগুলোতে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে।"
তিনি আরো যোগ করে বলেন, "গত বছরের এ সময়ে শ্রমিকের যে পরিমাণ চাহিদা ছিল, এ বছর আমরা সেরকম দেখতে পাইনি। তাছাড়া, শ্রমিকের সংখ্যার তুলনায় তাদের দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর একটি প্রভাবও আগামী দিনগুলোতে পড়বে।"
তবে, শ্রমিকের এই সংখ্যা এখনো বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরত্বপূর্ণ, কারণ কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশ সাধারণত মাসপ্রতি ৬০,০০০ থেকে ৭০, ০০০ /শ্রমিক রপ্তানি করতো।
শ্রমিক নিয়োগকর্মীরা জানান, যেসব শ্রমিক মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাইরে যেতে পারেননি, তারা পরবর্তী দুই বছরে গিয়েছেন, যে কারণে পরের দুই বছরে শ্রমিক রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে।
সাধারণত, সৌদি আরবই বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্য, এবং গত জানুয়ারি মাসেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত মাসে মোট ৪৯,২৬২ জন শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে।
এই বিশাল সংখ্যার বেশিরভাগই কম দক্ষতাসম্পন্ন নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং গৃহকর্মী হলেও দেশটি আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকা সৌদি রাষ্ট্রদূত এসা আল-দুহালিয়ান আরব নিউজকে সম্প্রতি জানিয়েছেন, "দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী নেয়নি। তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে আমরা এটি শুরু করেছি, কারণ তারা আমাদের শর্তাবলী পূরণ করেছে।"
ইতিমধ্যেই তেল-সমৃদ্ধ দেশটি বাংলাদেশের কাছে ১৫০ জন প্রশিক্ষিত নার্স পাঠানোর চাহিদা জানিয়েছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, সৌদি আরবে থাকা ৩০ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র কয়েক ডজন শ্রমিক রয়েছেন, যারা মেডিক্যাল খাতে কাজ করেন।
২০২২ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীরা সৌদি আরবের পথে যাত্রা করেছেন।
সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার পর জানুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও কাতার ছিল প্রবাসী শ্রমিকদের গন্তব্য।
চার বছরের বিরতির পর মালয়েশিয়া পুনরায় তাদের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। এর ফলে সংখ্যার দিক থেকে সৌদি আরবের পরই শ্রমিকদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে দেশটি।
তবে, এর একটি উলটো দিকও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া এবং ওমানে ভুয়া চাকরির প্রস্তাব পেয়ে অনেকেই চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার জন্য খরচ হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৭৯ হাজার টাকা নির্দিষ্ট করে দিলেও মালয়েশিয়া যেতে শ্রমিকদেরকে সাড়ে ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
দক্ষ শ্রমিক অভিবাসন এখনো পর্যন্ত সম্ভব না হলেও বাংলাদেশে গত বছরে রেকর্ড ১৩ লক্ষ শ্রমিক রপ্তানি করেছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ও অভিবাসী গতিবিধি গবেষণা ইউনিট (আরএমএমআরইউ)। গত ৩১ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অভিবাসন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, অদক্ষ খাতে শ্রমিকের চাহিদা, উচ্চ অভিবাসন খরচ, গন্তব্য দেশে শ্রমিকদের চাকরির অভাব, বেতন চুরি এবং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স সামগ্রিক অভিবাসন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।