জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় 'ফেলে দেওয়া' চাল কিনে খাচ্ছেন নাইজেরিয়ানরা
জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বাড়তে থাকায় উত্তর নাইজেরিয়ায় বেশ কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই খাবারের জন্য এমন চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন যা মিলাররা সাধারণত ফেলে দেয় কিংবা মাছের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে। খবর বিবিসির।
বর্তমানে দেশটিতে প্রতিদিনেরর খাবার জোগাড় করা যেন রীতিমতো এক যুদ্ধের মতো বিষয়। এ বিষয়ে দেশটির উত্তরাঞ্চলের শহর কানোর রাইস মিলের শ্রমিক ইসাহ হামিসু বলেন, "কয়েক বছর আগেও লোকেরা এই চালকে (আফাফাটা) গুরুত্ব দিত না। আমরা সাধারণত এটিকে ফেলে দিতাম। কিন্তু সময় বদলেছে।"
চালগুলো ভাঙ্গা, নোংরা ও শক্ত হওয়ায় দামে সস্তা। তাই মানুষ তা কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ঠিক এভাবেই দরিদ্র পরিবারগুলিকে নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করছে।
মাছের খামারের মালিক ফাতিমা আবদুল্লাহি জানান, ঐ চালগুলো তার খামারের মাছেদের জন্য বেশ ভালো খাদ্য। কিন্তু মানুষ এখন এগুলো খাচ্ছে বলে এর দাম বেড়েছে।
নাইজেরিয়ায় নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে। দেশটিতে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাতিল ও মুদ্রাস্ফীতিও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
একটি ৫০ কেজি চালের বস্তা থেকে আট থেকে ১০ জনের পরিবার প্রায় এক মাস খেতে পারে। এই এক বস্তা চালের দামই বর্তমানে ৫৩ মার্কিন ডলার। গত বছরের মাঝামাঝির তুলনায় যা ৭০ শতাংশ বেশি। এটি বেশিরভাগ নাইজেরিয়ানের মাসিক আয়কেও ছাড়িয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিবাদে নামছে মানুষ। এই মাসের শুরুর দিকে মধ্য নাইজেরিয়ায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধসহ প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছিল।
এরই ঠিক কয়েকদিন পর কানোতেও একই ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায়। এক্ষেত্রে অঞ্চলটির গভর্নর কবির ইউসুফ স্বীকার করেছেন যে, তার রাজ্যে খাবারের সংকট রয়েছে এবং এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
কানো রাজ্যের বাসিন্দা হাজিয়া রাবি ইসাহ বিবিসিকে বলেন, "এই ধরনের চাল না কিনলে তার বাচ্চাদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাখতে হবে। কেননা তার ভালো চাল কেনার সামর্থ্য নেই।"
রাবি ইসাহ আরও বলেন, "এক বাটি সাধারণ চালের দাম ২.৭০ মার্কিন ডলার। এটা আমার সাধ্যের বাইরে। এক্ষেত্রে আমি আফাফাটা চাল ১.৬৯ মার্কিন ডলারে কিনছি। এই চাল না থাকলে আমার পরিবারকে খাওয়ানো বেশ কষ্ট হয়ে যেত।"
কানোর মেডিল মার্কেটের ব্যবসায়ী সামিনু উবা বলেন, "বেশিরভাগ মানুষ এখন আর ভালো চাল কিনতে পারে না। তারা এজন্য আফাফাটা চাল কিনছে; যা কম স্বাদের হলেও দামে সস্তা।"
হাশিমু দাহিরু নামের এক ক্রেতা বলেন, "পণ্যের দাম উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মাত্র দুই মাসে সবকিছুর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আমাদের স্ত্রীর রান্না করার আগে ভাত থেকে পাথর এবং ময়লা অপসারণ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করছে। তারপরেও এটির স্বাদ ভালো হচ্ছে না। তবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এটাই খেতে হবে।"
যদিও চালের দাম বৃদ্ধির সমস্যাটি নতুন নয়। বরং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি নাইজেরিয়ান কৃষকদের ফসল ফলাতে উৎসাহিত করার জন্য চাল আমদানি নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় উৎপাদকরা চাহিদা মেটাতে পারেনি। ফলে, হুহু করে চালের দাম বাড়ছেই।
এর আগে অবশ্য নাইজেরিয়ার বাজারে অনেকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করা হতো। যদিও বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমদানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। কিন্তু এখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং দেশটির মূল্যস্ফীতির কারণে চাল আনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।