ইউক্রেনীয় শহর আভদিভকা রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে; সতর্ক করলো যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর আভদিভকা দখল করে নিতে পারে রাশিয়া; এমনটা আন্দাজ করে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শহরটিকে ঘিরে ভয়ংকর ও রক্তক্ষয়ী সব লড়াই হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনের গোলাবারুদের সংকটের কথা উল্লেখ করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, "আভদিভকা রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।"
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি 'যথাসম্ভব ইউক্রেনীয় নাগরিকের জীবন বাঁচাতে' সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এমতাবস্থায় আভদিভকা শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটিকে দোনেৎস্কের প্রবেশদ্বার হিসেবে দেখা হয়।
২০১৪ সালে রাশিয়ান-সমর্থিত যোদ্ধারা শহরটি দখল করেছিল। পরে সেটিকে মস্কোর সাথে সংযুক্ত করা হয়।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। প্রথমে ইউক্রেন বেশ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেও সময়ের সাথে সাথে যেন সেটি বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
ওয়াশিংটনে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ব্রিফিংয়ে কিরবি বলেন, "আভদিভকা অনেকাংশে দখল হয়ে যেতে পারে। কেননা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।"
জন কিরবি বলেন, "রাশিয়া একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যেহেতু কংগ্রেস এখনও সম্পূরক বিল পাস করতে পারেনি, তাই আমরা ইউক্রেনকে আর্টিলারি শেল সরবরাহ করতে পারিনি। যদিও এগুলো রুশ আক্রমণ প্রতিরোধে কঠোরভাবে প্রয়োজন।"
কিরবি আরও বলেন, "রুশ বাহিনী এখন আভদিভকাতে ইউক্রেনীয় পরিখায় পৌঁছেছে এবং তারা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাকে ভাঙতে শুরু করেছে।"
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন সিনেট প্রায় ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। যার মধ্যে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ পাশের ক্ষেত্রেও চলেছে বেশ কয়েক মাসের রাজনৈতিক তর্ক বিতর্ক।
এদিকে এটা বেশ স্পষ্ট যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে অস্ত্র সরবরাহের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
ন্যাটো মহাসচিব জেন স্টলটেনবার্গ গতকাল (বৃহস্পতিবার) সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেনে অব্যাহত সামরিক সহায়তা অনুমোদনে মার্কিন ব্যর্থতা ইতোমধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।
এদিকে আজ (শুক্রবার) জেলেনস্কি বার্লিন এবং প্যারিস সফর করবেন। সেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জানুয়ারিতে ইউক্রেন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত একই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এদিকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইউক্রেনীয় জেনারেল ওলেক্সান্ডার টারনাভস্কি স্বীকার করেছেন যে, আভদিভকা নিয়ে 'ভয়াবহ যুদ্ধ' হচ্ছে।
তিনি বলেন, "আমরা ইউক্রেনীয় ভূমির প্রতিটি অংশকে মূল্য দিই। তবে আমাদের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য এবং অগ্রাধিকার হল একজন ইউক্রেনীয় সৈন্যের জীবন রক্ষা করা।"
এক্ষেত্রে ইউক্রেনের কিছু সৈন্য ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছে যে, যেকোনো মুহূর্তে আভদিভকা পতন হতে পারে।
শহরটিতে থাকা ইউক্রেনীয় অফিসার ওলেকসি বলেন, "আমরা বেশ মর্মাহত। বর্তমানে আমাদের কাছে দুটি শেল আছে। কিন্তু তাদের জন্য আমাদের কাছে কোনো বিস্ফোরক নেই। তাই আমরা পালটা গুলি করতে পারছি না। এখন পর্যন্ত আমাদের শেল ফুরিয়ে গেছে।"
ইউক্রেনের নবনিযুক্ত কমান্ডার-ইন-চিফ ওলেক্সান্ডার সিরস্কি চলতি সপ্তাহে আভদিভকা এলাকায় ফ্রন্টলাইন পরিদর্শন করেছেন। এরপর তিনি স্বীকার করেন যে, পরিস্থিতি 'কঠিন' ছিল।
সিরস্কি বলেন, রুশ সামরিক বাহিনী নিজেদের ক্ষতির তোয়াক্কা করেনা। তারা সৈন্যদের কামানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান