যমুনার পানি বৃদ্ধি, সারিয়াকান্দির ৫০ হাজার মানুষ বন্দি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/07/03/bogura._ripon_das_flood_picture_02.jpg)
বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ নিম্নাঞ্চল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রয়েছেন পানিবন্দী অবস্থায়। এ তিন উপজেলার মধ্যে শুধু সারিয়াকান্দিতেই ৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৬৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানে পানিবন্দী রয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।
উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন চরের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। গত বুধবার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ৮০.৩ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায়। এরপর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও বৃদ্ধি পায় বাঙ্গালীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/07/03/bogura._ripon_das_flood_picture_04.jpg)
সারিয়াকান্দি উপজেলার পুরোপুরি প্লাবিত কাজলা, চালুয়াবাড়ী, কর্ণিবাড়ী, বোয়াইল, চন্দনবাইশা ও কামালপুর ইউনিয়ন আর আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় আছে হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও সদর ইউনিয়নসহ প্রায় ৬৮টি গ্রামের মানুষ।
কুতুরপুর ইউনিয়নের বড়ইকান্দি গ্রামের মুজিবর ফকিরের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন জানান, যমুনায় পানি বাড়লে প্রতি বছরই তার ঘর ভাঙে, তখন তিনি আশ্রয় নেন বাঁধে।
'ভিটে বাড়ি অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাঁধই একমাত্র ভরসা। পানি কমে গেলে শুকনা মৌসুমে আবার চরে চলে যাই। এভাবেই চলে বসবাস', বলেছেন মরিয়ম খাতুন।
যমুনা নদীর ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন ভাণ্ডারবাড়ী। এ ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/07/03/bogura._ripon_das_flood_picture_01_0.jpg)
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর করিম সরকার আপেল জানান, ইউনিয়নের শওড়াবাড়ী, শিমুলবাড়ী, কচুগাড়ী, বানিয়াজান, কয়াগাড়ী, ভূতবাড়ী, রঘুনাথপুর, পুকুরিয়া, নিউ সারিয়াকান্দি ও মাধবডাঙ্গাসহ ১০টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন। এছাড়াও যমুনার পূর্ব এলাকার বৈশাখী, ভূতুয়ারভিটা ও রাধানগরের ১২০টি পরিবার রয়েছে পুরোপুরি পানিবন্দী।
'এরইমধ্যে ওইসব বানভাসি মানুষের জন্য পাঁচ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে সরকারের প্রস্তুতি আছে, প্রয়োজনে আরও বণ্টন করা হবে,' যোগ করেন তিনি।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, সোনাতলার উপজেলার জুমারবাড়ী থেকে ধুনট উপজেলার ঢেকুরিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোথায়ও কোনো সমস্যা নেই। তারপরও বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ছালার (পাটের) বস্তা প্রস্তুত রাখা আছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সব সময় তদারকি করছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/07/03/bogura._ripon_das_flood_picture_03.jpg)
তিনি বলেন, পানি এখন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে কিছুটা বাড়লেই তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৬৮টি গ্রামের সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুক্রবার যমুনা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৬৯.৩ সেন্টিমিটারের নিচে অবস্থান করছে। তবে তাদের ধারণা, কয়েক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে।