কুষ্টিয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও 'বড় ভাইদের' ছত্রচ্ছয়ায় কুষ্টিয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডজনখানেক কিশোর গ্যাং। পেশিশক্তি দেখিয়ে শহরের অলিতে গলিতে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে তারা। শুধু তাই নয়, নিজেদের পরিচিতি হিসেবে ভীতিকর আর অশ্লীল সব নাম লেখা টি-শার্ট পড়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এমনকি কাউকে তোয়াক্কা না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদকের ছবিও পোস্ট করছে গ্যাংয়ের সদস্যরা।
এছাড়াও নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে প্রায়ই পাড়ার অলিতে গলিতে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে পার্টি করতেও দেখা যায় তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় বিএসবি, হান্টিং বয়, কেবিএস, ব্লাক সিপসহ আরও কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বড় ভাই। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের আপডেট তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগের চেয়ে এখন এই সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তালিকা ধরে অভিযান চলবে।
গত ৩১ জানুয়ারি মিলন হোসেন (২৪) নামের এক যুবককে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ কয়েক টুকরা করা হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পদ্মার চরের চারটি জায়গা থেকে মিলনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন মিলনের মা শেফালি খাতুন।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা এস কে সজীবসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছে যে তারা টাকার জন্য সজীবের নেতৃত্বে তারা মিলনকে হত্যা করেছে। সজীব স্থানীয় এক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় জেলার সবচেয়ে বড় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এর আগে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইন্টার্নদের শারীরিকভাবে হয়রানির অভিযোগে ছাত্রলীগের জেলা কমিটি থেকে সজীবকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তাকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েকদিন আগে ওই মামলায় জেল থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, সজীবের গ্যাংয়ের সদস্যদের বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মিছিলে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করে। এরপর রাজনৈতিক 'বড় ভাইদের' দাপটে নানা অপকর্ম শুরু করে। এলাকা ভাগ করে নিজ নিজ গ্যাংয়ের আধিপত্য গড়ে তুলেছে তারা।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, শুধু কুষ্টিয়া শহরেই কিশোরদের ১৩টি দল রয়েছে, যারা শহরে প্রতিটি দলে ২০ থেকে ২৫ জন করে সদস্য রয়েছে। যারা এসব দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
কুষ্টিয়া শহরের কিশোর গ্যাংগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ, ব্যাড বয়েজ, বিএসবি, এইচএসবি, আরএলবি, সিডব্লিউবি, আরডিএকস, আরডেন্ট বয়েজ, কেসিবি, ডিবি, কেকেজি, ভিডিএলইএমবি, জিরো জিরো সেভেন।
কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং, থানাপাড়া, সিঙ্গার মোড়, ইসলামিয়া কলেজ ও ছয় রাস্তার মোড়, পূর্ব মজমপুর, সাদ্দাম বাজার, সকাল-সন্ধ্যা, ঝাউতলা, র্যাবগলি, হাসপাতাল ও আলফার মোড় এবং হরিপুর সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এসব দলের তৎপরতা বেশি। শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির দেয়ালেও এসব গ্যাংয়ের নাম লেখা দেখা গেছে।
এছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দামি দামি মোটরসাইকেল নিয়ে এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের মহড়া দিতে দেখা যায়।