গ্যাসের টাকা তুলতে এসে লাশ হলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আসিফ
রাজধানীর শান্তিনগরে একটি গ্যাস সাপ্লাইয়ের দোকানে কাজ করতেন নোয়াখালীর মোহাম্মদ আসিফ। ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট, তবু ধরতে হয়েছিল পরিবারের হাল। কারণ তার দুই ভাই প্রতিবন্ধী। আরেক ভাইকে বিদেশে পাঠিয়েছেন দেনা করে। প্রতিদিন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দিতেন আসিফ, রাতে এর টাকা তুলতে যেতেন।
বরাবরের মতো বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই-এ সিলিন্ডারের টাকা তুলতে যান আসিফ। তবে সেই টাকা তুলে আর ফিরতে পারেননি ঘরে। অগ্নিকাণ্ডে তিনি মারা যান।
মারা যাওয়ার আগে আসিফ তার এক বন্ধুকে ফোন করে জানিয়েছিল তার আটকা পড়ার কথা। কিন্তু কেউ তাকে কোন সহযোগিতা করতে পারেননি।
জাকির ইসলাম নামের কাছের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে একটি মেসে থাকতেন আসিফ। ঢাকা মেডিকেলে আসিফের লাশ নিতে এসেছেন জাকির।
জাকির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খুব ভালো ও পরিশ্রমী মানুষ ছিল আসিফ। অত্যন্ত গরিব হওয়ার কারণে পড়াশোনা করতে পারেনি। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। গতকাল দুপুর তিনটার সময় রুমে আমাদের শেষ কথা হয়েছিল। এরপর রাতে এই দুর্ঘটনার খবর শুনি।'
জাকির জানান, 'পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল আসিফ। তবু পরিবারের হাল তাকেই ধরতে হয়েছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই আয়-রোজগারে নেমে পড়েছে। ওর দুই ভাই প্রতিবন্ধী। দেনা করে আর এক ভাইকে বিদেশে পাঠিয়েছে। মাসে মাসে অল্প অল্প করে সেই দেনা পরিশোধ করছিল।'
জাকির আরও বলেন, 'আসিফ শান্তিনগরে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে কাজ করত। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার সাপ্লাই দিত এবং রাতে সেখান থেকে টাকা কালেকশন করত।'
আসিফের বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই বলে জানালেন জাকির। একটি ডিপিএস করে সেখানে প্রতি মাসে তিন হাজার করে টাকা জমাচ্ছিলেন আসিফ। তার স্বপ্ন ছিল কয়েক বছর টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটি বাড়ি করবেন।
এছাড়া গ্রামেই ব্যবসা করে সেখানেই থেকে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সে স্বপ্ন আর সত্যি হলো না।
জাকির বলেন, 'ঢাকায় ওর এক ফুপু থাকে। তিনি এখানে এসেছেন। লাশটা পেতে আমাদের একটু বেগ পেতে হয়েছে।'
আসিফ তাকে ফোন দিয়ে আটকা পড়ার কথা জানিয়েছিল বলে জানান জাকির। 'কিন্তু বাঁচানোর জন্য কিছুই করা সম্ভব হয়নি। আসিফের লাশ পুড়ে যায়নি। এমনকি জামাকাপড়েরও কিছু হয়নি; সব ঠিক আছে। সম্ভবত ধোঁয়ার কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে।'