করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেষ্টায় মারা যাবেন ১০ লাখের বেশি মানুষ
বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাগুলো করোনাভাইরাসের চলমান মহামারি মোকাবিলায় তাদের সবটুকু সামর্থ্য ও সম্পদকে নিয়োজিত করেছে। এর ফলে অবহেলিত হচ্ছেন বা চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা। বিশেষ করে, টানা কয়েক দশকব্যাপী চেষ্টার পর এইডস, যক্ষ্মা এবং অন্যান্য রোগ মোকাবিলায় যে সফলতা এসেছিল, তা এখন হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে। চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক এইডস সোসাইটি প্রকাশিতব্য এক প্রতিবেদন এমন আশঙ্কার কথাই তুলে ধরবে।
সোমবার থেকে অনুষ্ঠিত ২৩তম আন্তর্জাতিক এইডস সম্মেলন থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবে। ভার্চুয়াল সম্মেলনটি চলবে পুরো সপ্তাহজুড়ে। এসময় নানা দেশের কর্মকর্তারা এইচআইভি সহ অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগ মোকাবিলায় চলমান মহামারি পরিস্থিতি সৃষ্ট প্রভাব তুলে ধরবেন। করোনার মহামারি অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের চেষ্টায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে, এমন আশঙ্কা তীব্র হয়েছে বিগত কয়েক মাস থেকেই।
সম্মেলনের পূর্বে দেওয়া এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক এইডস সোসাইটির প্রধান ডক্টর অ্যান্টন পোজনিয়াক বলেন, '' সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্যোগ এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ- এইচআইভি এবং অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা ব্যাহত করছে। এমনকি এইচআইভি নিরাময়ের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজও এর ফলে থেমে গেছে।'' খবর সিএনএনের।
নানা জরিপের ফলাফলে এই দাবির সত্যতা মেলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি জরিপ প্রকাশিত হয় গত জুনে। যা প্রকাশ করে গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডস, টিউবারকোলাইসিস অ্যান্ড ম্যালেরিয়া। যক্ষ্মা, এইডস এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধের গবেষণা ও চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক অলাভজনক অর্থায়ন সংক্রান্ত সংস্থা এটি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম রয়েছে এমন ১০৬টি দেশের মধ্যে ৮৫ শতাংশ দেশেই চলমান মহামারি পরিস্থিতি এইচআইভি চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে যথাক্রম্নে; ৭৮ ও ৭৩ শতাংশ দেশে। আর কমপক্ষে ২০ শতাংশ দেশেই চরম বিপর্যয় ঘটেছে আলোচিত তিন রোগের চিকিৎসা সেবায়।
এর আগে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু, স্টপ টিবি পার্টনারশিপ এবং লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক গবেষণা মডেলে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় রোগ তিনটিতে ১০ লাখের বেশি মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়।
হু' এবং এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের বিশেষ কার্যক্রম- ইউএনএইডস' এর অনুমান, বিগত ছয় মাস ধরে চিকিৎসা সেবার ঘাটতির কারণে আফ্রিকায় সাব-সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোতেই শুধু ৫ লাখ লোক রোগী এইডসজনিত অসুস্থতায় মারা পড়বে। ২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুসারে ইতোমধ্যেই চার লাখ ৭০ হাজার মৃত্যু হয়েছে এ অঞ্চলে।
ইউএনএইডস জানায়, এর ফলে এইচআইভি প্রতিরোধের চেষ্টা এক যুগের বেশি সময় পিছিয়ে পড়বে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়েনিমা জানান, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে গিয়ে এইডসের বিরুদ্ধে কষ্টার্জিত সফলতা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার অর্থ হচ্ছে; কোন একজনের দুর্ভোগে আরেকজনকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত সকলকেই চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।