রাবিতে ভর্তিচ্ছু ৭০০ পরীক্ষার্থীকে ট্রেনে পৌঁছে দিলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চাওয়া ৭০০ শিক্ষার্থীকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ট্রেনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। বিলম্বে ছাড়া ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার পর অন্য ট্রেন ইঞ্জিন এনে লাগানোর ব্যবস্থা করাসহ নানান বাধাবিপত্তির সমাধান করে শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেন। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন এসব শিক্ষার্থী।
জেনারেল ম্যানেজারওয়েস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেসবুক পেজে এরপর নিজেই এ ঘটনা বর্ণনা করে স্ট্যাটাস দেন। দারুণ আলোড়ন তুলেছে তাঁর এই স্ট্যাটাস। এরপর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
৫ মার্চ রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে দেওয়া সেই স্ট্যাটাসে আসলে সেদিনের পরিস্থিতি তুলে ধরেন রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক। তিনি লিখেছেন, ""প্রায় ৭০০ ছাত্র-ছাত্রী আজকে (৫ মার্চ) ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে এসে বিকেল সাড়ে ৩টার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন । রেল ব্রোকেনের জন্য ধুমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকেই বিলম্বে রওনা হয়। সকাল ১১ টায় হিসেব করে দেখা গেল ট্রেনটি বিকেল ৩:০০ টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছবে। পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অন্য ট্রেনকে বসিয়ে দিয়ে ট্রেনটি এগিয়ে আনছিলাম।"
কিন্তু, লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধুমকেতুর ইঞ্জিন ফেইল করে।
"কী করা যায়, কী করা যায়, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে বসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে এনে ধুমকেতু আবার চালু করলাম। হিসেবে করে দেখলাম, ট্রেনটি বিকাল ৪ ঘটিকায় রাজশাহী পৌঁছবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।"
এরপর রাবির ভিসিকে পরীক্ষার সময় পিছানোর অনুরোধ জানান অসীম। ভিসিও প্রায় ৪ বার নিজেই ফোন করে ট্রেনের অগ্রগতির খবর নেন।
সে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, "ট্রেন সর্বোচ্চ অনুমোদিত গতিতে চলছে। দূশ্চিন্তা ছাড়ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।"
তারপরাও যখন হচ্ছিল না, তখন ভিন্ন উপায় বের করেন রেল কর্মকর্তা অসীম।
"উপায়ন্তর না দেখে আড়ানী স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামিয়ে থ্রু পাস করলাম। ঈশ্বরকে খুব একটা ডাকি না, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে জোড়ে জোড়ে ডাকা শুরু করলাম, একটু মানতও করলাম। ঈশ্বর মনে হয় সদয় হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে দিলাম, তখন বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে। হলে ঢুকতে হবে ৪ টার মধ্যে।"
এরপরে আবারো ভিসিকে অনুরোধ করে পরীক্ষার্থীদের হলে ঢোকার সুযোগ দিতে বলেন অসীম। ভিসিও সে অনুরোধ রাখেন, এবং রেলওয়ের সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। অসীম কুমার তালুকদার জানান, "ট্রেন পরিচালনায় পাকশী কন্ট্রোলে সার্বক্ষনিকভাবে মনিটরিং করেন ডিআরএম(পাকশী)। এখন নিজেকে বেশ হালকা লাগছে।"
ফেসবুক স্ট্যাটাস অনুযায়ী তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছিয়েছেন বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে এবং পরীক্ষা শুরুর কথা বলেছেন বিকেল ৪টা থেকে। যেখানে সব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার দাবিও করেছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে প্রেরিত এক প্রেস রিলিজে বলা হচ্ছে, ৫ মার্চ 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। সেদিন পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ৯টায়। প্রথম শিফটের পরীক্ষা হয় ৯টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত। ওইদিন মোট চারটি শিফটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ শিফটি বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায় । রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ট্রেনটি যখন বিশ^বিদ্যালয় স্টেশনে পৌঁছানোর দাবি করেছেন তখন বাজে ৩টা ৩৮ মিনিট। অর্থাৎ, ইতিমধ্যে ৮ মিনিট পার হয়ে যায় শেষ শিফটের পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, তারা বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে ৬০ জন শিক্ষার্থী কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। বাকি কেন্দ্রের বিষয়টি তাদের জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা দুপুর আড়াইটার সময় নিশ্চিত হই যে, ট্রেন পৌঁছাতে চারটা পার হয়ে যাবে। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই সাড়ে তিনটায় পরীক্ষা শুরু হবে। তারা আর পরীক্ষা দিতে পারছে না। আর এমনিতেও আমাদের আসলে পরীক্ষা পেছানোর কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু যখন শুনলাম পরীক্ষা শুরু হওয়ার আট মিনিট পর ট্রেন তিনটা আটত্রিশ মিনিটে পৌঁছেছে, তখন আমি, ছাত্র উপদেষ্টা ও জনসংযোগ প্রশাসক সব কেন্দ্রে কেন্দ্রে খবর পাঠাই যেন পরীক্ষার্থীদের হলে ঢুকতে দেওয়া হয়। ট্রেন থেকে নামার পর পরীক্ষার্থীরা কেউ রিকশা নিয়ে আসে। আবার তাদের সহায়তাকারী শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মোটরসাইকেল করে তাদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়। অর্থাৎ পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সব শিক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢুকে যায়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী কেন্দ্রে পৌঁছালে তাকে পরীক্ষা হলে ঢুকতে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল আমাদের।"
তিনি বলেন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন, শহীদুল্লাহ কলা ভবন, রবীন্দ্র ভবন, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সব মিলিয়ে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী পরীক্ষা হলে ঢুকেছিলেন। কৃষি অনুষদ, চারুকলা ভবন কিংবা আইবিএ ভবনের খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সর্বমোট ৭০০ পরীক্ষার্থী কিনা এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, "সব শিক্ষার্থীরই যে ওইদিনের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ছিল এমন না, পরের দিনের পরীক্ষার্থীও ছিলো। আবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রেনের ইঞ্জিন যখন ফেইল করে, তখন ট্রেন লেট করার আশঙ্কায় তখন অনেক শিক্ষার্থী বাস ধরেও চলে আসতে পারে।"
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বিভাগীয় সমন্বয়কারী আহমেদ শফিউদ্দিন মনে করেন, "শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে এখানে রেলওয়ে কর্মকর্তার বেশ সদিচ্ছা ছিল; কিন্তু প্রচারণাটা বেশি হয়েছে। তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীদের স্টেশন থেকে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাস পাঠানো উচিত ছিল।"