বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের জন্য ভারতের দরজা খুলে দিচ্ছে বিজেপি; সিএএ বিপজ্জনক উদ্যোগ: কেজরিওয়াল
লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করার জন্য বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি বলেছেন, এ উদ্যোগ অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দিচ্ছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমালোচনা করে কেজরিওয়াল বলেন, সিএএর আওতায় পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। একে তিনি বিপজ্জনক উদ্যোগ মনে করেন। এ উদ্যোগ সারা দেশ, বিশেষ করে আসামের মতো রাজ্যগুলোর জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন আম আদমি-প্রধান।
কেজরিওয়াল বলেন, 'পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের দরজা খুলে দিয়েছে বিজেপি। এটি দেশের জন্য বিপজ্জনক। উত্তর-পুবের রাজ্যগুলোকে—বিশেষ করে আসামকে—এর জন্য মূল্য চুকাতে হবে। বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের কারণে আসামের সংস্কৃতি হুমকির মুখে রয়েছে। বিজেপি এই অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিতে চায়।'
সিএএর আওতায় পাকিস্তানি শরণার্থীদের ভারতে বসতি স্থাপনের জন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দাবি করেন, আইনটি প্রতিবেশী দেশগুলোতে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লাখ লাখ মানুষের জন্য ভারতের দরজা খুলে দেবে।
সিএএ আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে যাওয়া ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
কেজরিওয়াল বলেন, 'সরকারি টাকায় ভারতে পাকিস্তানি লোকেদের জন্য বসতি স্থাপন করে দেওয়া হবে। এই দেশগুলোতে (পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান) প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি সংখ্যালঘু রয়েছে। ভারত একবার দরজা খুলে দিলে এই দেশগুলো থেকে প্রচুর লোক ভারতে আসবে।'
সিএএর আওতায় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করা হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে।
এই শরণার্থীরা ভারতে প্রবেশের পর তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেজরিওয়াল।
আম আদমি-প্রধান বলেন, 'এই উদ্বাস্তুদের কাজ দেবে কে? এটি কেন করা হচ্ছে? কেউ কেউ বলে, এটি ভোট ব্যাংকের রাজনীতির অংশ।'
আইনটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে। আইনটি চার বছর আগে পাশ করা হলেও প্রয়োগ করা হলো সাধারণ নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে।
সিএএ বাস্তবায়নের সময় নিয়েও সমালোচনা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক দশক দেশ শাসন করার পর নাগরিকত্ব আইনের মতো বিতর্কিত বিষয়ের আশ্রয় নেওয়ার বদলে বিজেপির উচিত ছিল নিজেদের সাফল্য মানুষের সামনে তুলে ধরা।
কেজরিওয়াল বলেন, '১০ বছর শাসন করার পর তাদের এখন সিএএ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। তারা যদি ১০ বছরে ভালো কাজ করত, তাহলে সিএএর পরিবর্তে নিজেদের কাজের জন্যই ভোট চাইত।'
তিনি আরও বলেন, 'আজ দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে…এমন পরিস্থিতিতে বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা সমাধানের বদলে সরকার সিএএ নিয়ে কথা বলছে; এটি হতাশাজনক।'