কোটি টাকার বাড়ি, জমিজিরাতের ছড়াছড়ি: গ্রাম-বাংলার জীবন বদলে দিচ্ছে রেমিট্যান্স
সরু রাস্তার ধার ঘেঁষে সারি সারি পাকা বাড়ি। মাঝে মাঝে ডুপ্লেক্স ভবনও চোখে পড়ে। চারপাশে ধানিজমি। কখনো কখনো সড়কের ডানে-বামে উভয় দিকেই বাড়িঘর। দেখেই বোঝা যায় ভরাট পুকুর কিংবা আবাদি জমিতে এসব ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। এমন দৃশ্য কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণ মাহিনী গ্রামের, দুই–আড়াই দশক আগেও যা এমন ছিল না।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলছেন, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বদলে গেছে প্রায় ছয় হাজার জনবসতির এ গ্রাম। উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এ গ্রামে ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৭৩২ জন, যার মধ্যে অন্তত ৫০০ জন প্রবাসে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
শুধু দক্ষিণ মাহিনী নয়, পুরো উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই এমন পরিবর্তন চোখে পড়ে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে কয়েকগুণ, যা প্রভাব ফেলেছে গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনসহ আর্থ-সামাজিক সূচকে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে কুমিল্লা জাতীয়ভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রবাসীর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে কুমিল্লা।
গত দুই দশকে এ জেলা থেকে ১২ লাখ ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ কাজের জন্য দেশান্তরী হয়েছেন। অন্যদিকে এ তালিকার শীর্ষ ১২টি জেলার মধ্যে একটি ফেনী থেকে ২০০৪ সাল হতে আনুমানিক তিন লাখ মানুষ কাজের খোঁজে বিদেশ গিয়েছেন।
বর্ধিত আয় গ্রামের অভ্যন্তরে বিনিয়োগও বাড়িয়েছে। যেমন দেশের স্টিল উৎপাদনের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বিএসআরএম-এর সবচেয়ে বড় ডিলার ইসলাম অ্যান্ড সন্স এ ইউনিয়নের মাহিনী বাজারে অবস্থিত।
প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রবাসী বাসিন্দাদের সুবাদে প্রচুর নির্মাণকাজ হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে এসব ব্যবসা জমজমাট বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার আগে দক্ষিণ মাহিনী গ্রামের গাজী বাড়ির মোহাম্মাদ ইসহাকের বড় ছেলে কামাল হোসেন মাত্র ১৯ বছর বয়সে কুয়েতে পাড়ি জমান।
কুয়েতে তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। অল্প সময়ে আস্থা অর্জন করেন মালিকের। তাই নিয়োগকর্তা খুশি হয়ে তাকে প্রায় ১০০টি ভিসা প্রদান করেন। এসব ভিসার মাধ্যমে কামাল তার ভাই, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদেরও কুয়েতে নিয়ে যান।
তার ছয় ভাইয়ের মধ্যে মেজো ভাই জামাল মালিকের সহায়তায় কুয়েত থেকে পাড়ি দেন ইতালি। তারপর বদলে যায় তাদের ভাগ্যের চাকা। একে একে তার পাঁচ ভাই ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও ইতালি নিয়ে যান। সেখানে তারা বর্তমানে ব্যবসাসহ বহুমুখী পেশায় যুক্ত।
এদিকে বিদেশে থাকাকালীন কামাল গ্রামের শান্তির বাজারে একটি দোতলা বাজারে বিনিয়োগ করেন। ১৯৮২ সালে মাত্র তিনটি খড়ের ঘর দিয়ে শুরু হওয়া বাজারটি এখন প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে এ বাজারে রয়েছে ছোট-বড় ২৫৭টি দোকান। এর মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের ১৫টি শোরুম, হার্ডওয়্যারের দোকান, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসি এবং একটি এজেন্ট ব্যাংক শাখা রয়েছে।
কামালের জীবনের এ গতিপথ গ্রামের রূপান্তরকে প্রতিফলিত করে। একটি সাধারণ টিনশেড ঘর থেকে তার পরিবার এখন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবনে বসবাস করে। তারা বিস্তর জমিজমারও মালিক। আরও ৪টি বাড়ি তৈরি প্রক্রিয়াধীন। এর আগে তারা ঢাকার মিরপুর ও নিকুঞ্জে দুটি বাড়ির মালিক হয়েছেন।
এছাড়া বর্তমানে মোহাম্মাদ ইসহাকের দূরবর্তী আত্মীয়দের মধ্যে অন্তত ১৮ জন বিদেশে কাজ করে গ্রামের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন। গ্রামজুড়ে গড়ে ওঠা অসংখ্য পাকা বাড়িগুলোতে তাদের সাফল্য যেন সুস্পষ্ট।
দক্ষিণ মাহিনীর প্রথম অভিবাসী
দক্ষিণ মাহিনীতে অভিবাসনের সূচনাকারী নুরুল হক নামক এক ব্যক্তি। ১৯৭৩ সালে তিনি একটি ব্রিটিশ ক্যাটারিং কোম্পানির প্রধান ওয়েটার হিসেবে সৌদি আরবে যান।
'আমি যখন বিদেশে যাই তখন প্রতি রিয়ালের দাম ছিল চার টাকা ১০ পয়সা। ৮০০ সৌদি রিয়ালে ক্যাটারিং কোম্পানিতে যোগ দিই, তখন বাংলাদেশি টাকায় মূল্য ছিল তিন হাজার ২০০ টাকা,' গ্রামের একটি চায়ের দোকানে বসে স্মৃতিচারণ করেন ৭৫ বছর বয়সি নুরুল।
'সেখানে খুব কমই বাংলাদেশি ছিল। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া তখনো শুরু হয়নি। হজ বা ওমরাহ করতে যাওয়া কয়েকজন ব্যক্তি কাজের ভিসা পেয়েছিলেন, তবে সে সংখ্যাটা হাতেগোনা ছিল', বলেন তিনি।
প্রবাসে এক দশকের বেশি সময় কাটান নুরুল। '১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে আমার অগ্রাধিকার ছিল পরিবারের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা। জন্মের পরেই বাবাকে হারিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করতে হয়েছে। আমাদের জায়গা-জমি ছিল না। বিদেশের আয় দিয়ে জমি কিনি, বাড়িঘর করি, সন্তানদের পড়ালেখা করাই। সংসারে মা ছিল। তার দেখভাল করতে হয়েছে,' বলেন তিনি।
নুরুলের এ পথিকৃৎতুল্য যাত্রা দক্ষিণ মাহিনীতে অন্যদের জন্য প্রবাসের পথ প্রশস্ত করেছিল। 'আত্মীয়-স্বজনকে বিদেশে নিতে সহায়তা করেছি। মালয়েশিয়া দিয়ে শুরু করার পর আমার ভাতিজা ও ভাগ্নি জামাইরা এখন আয়ারল্যান্ডে থাকে,' বলেন তিনি।
'সবাই মিলে চেষ্টা করলেই হয়। বিদেশে লোক না গেলে আমাদের দেশ এতটা উন্নত হতো না। বিদেশে পাঠানোর একটাই উদ্দেশ্য ছিল; কেউ বেকার না থাকুক, অনাহারে না থাকুক, ভিক্ষা না করুক। আমরা শুধু নিজের জন্য নয়, সবার জন্য এবং জাতির জন্য চিন্তা করেছি,' নুরুল বলেন।
'আমাদের দেশটা যে এখন উন্নত হচ্ছে এটা আমাদের জন্য বিরাট কিছু। স্যানিটারি পায়খানা এবং অ্যাটাচড বাথরুম এখন সাধারণ ব্যাপার। আমরা অসভ্য জগত থেকে সভ্য জগতে রূপান্তরিত হয়েছি,' নুরুল বলে যান।
নুরুলের ভাগ্নে শফিকুর রহমানও প্রায় দুই দশক ধরে সৌদি আরবে কাজ করে মাসে গড়ে দুই হাজার রিয়াল আয় করতেন।
'আমার প্রায় ৪৮ লাখ টাকা আয় দিয়ে আমি বাড়ি তৈরি করেছি, পরিবারের খরচ মেটাচ্ছি, জমি কিনেছি এবং আমার সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছি। ২০০০ সালে আমি প্রথম পাকাবাড়ি নির্মাণ করি। সে সময় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে চার রুমের ঘর তৈরি করি,' শফিকুর বলেন।
পরিশ্রমকে এসব উন্নয়নের কৃতিত্ব দেন শফিকুর। 'এই যে উন্নয়ন দেখছেন, আমি মনে করি এর কারণ হলো এদেশের মানুষ কর্মঠ। আমাদের কর্মের ফল আজকের এ পরিবর্তন। আমরা কোনো রকমে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সন্তানদের সবাই স্নাতক পাশ করেছে।'
অভিবাসীপ্রবণ এলাকায় বেড়েছে জমির দামও
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মতোই মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি এবং ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলায় জমির দাম বেশি প্রবাসী জনসংখ্যার অঞ্চলে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেমন কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের একটি ধানিজমির মূল্য যেখানে শতাংশপ্রতি দুই লাখ টাকা, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের শতাংশপ্রতি ধানিজমির দাম মাত্র ৩৫–৪০ হাজার টাকা।
অভিবাসীপ্রবণ কোনো কোনো জেলা শহরের জমির বর্তমান বাজারমূল্য রাজধানী ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতি শতাংশ জমির দাম কোটি টাকার ওপরে, অথচ রাজধানীর মিরপুর, বসিলা, সাতারকুলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি শতাংশ জমি ৫০ লাখ টাকার নিচেই পাওয়া যায়।
রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের খাঁড়ঘর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম ১৯৯৫ সালে তার গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আড়াই শতাংশ জমি কিনেছিলেন চার হাজার ৭০০ টাকায়। ২০১৮ সালে তার কাছ থেকে দুবাই প্রবাসী নুরুল আফসার সেই জমি কিনে নেন সাড়ে ১৪ লাখ টাকায়। অর্থাৎ দুই দশকের ব্যবধানে সড়কসংলগ্ন এ জমির দাম বেড়েছে প্রায় ২৯৮ গুণ।
একইভাবে একই গ্রামে ২০১৯ সালে প্রতি যে ধানিজমির শতাংশ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল, সেটি ২০২৪ সালে প্রায় ২ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
স্থানীয়রা জমির দাম দ্রুত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রবাসীদের হাতে নগদ অর্থের প্রাচুর্য, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে জমির প্রতি আকর্ষণ এবং ক্রেতাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতাকে উল্লেখ করছেন।
স্থানীয় শান্তির বাজারের মৌলভী ফিডের মালিক মো. তুষার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তার দোকানের পাশের জমিটি ২০১৩ সালে প্রতি শতাংশ চার লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল, যার মূল্য এখন ১৫ লাখ টাকা। তবে বাজারের কেন্দ্রস্থলে জমির দাম আরও বেশি, প্রতি শতাংশ ৩০ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে গেছে।
আবাসন-চাহিদা বাড়াচ্ছেন প্রবাসীরা
উন্নত শিক্ষা ও সুযোগ-সুবিধার আকাঙ্ক্ষায় অনেক প্রবাসী গ্রাম থেকে জেলা শহর এবং কুমিল্লা ও ফেনীর মতো আশপাশের শহরে স্থানান্তরিত হয়েছেন। তাদের এ অভ্যন্তরীণ অভিবাসন জমির দাম বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় নতুন তৈরি করা বাড়ি ও ভাড়া থাকার বাসাগুলোতে মূলত প্রবাসী পরিবার, শিক্ষক এবং উদ্যোক্তারা বাস করছেন।
কুমিল্লা শহরের সাংবাদিক সোহেল রানা বলেন, 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয় থেকে বারো তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন ও মার্কেট রয়েছে। প্রবাসীরা এসব আবাসন প্রকল্পের প্রধান গ্রাহক, যেখানে জমির দাম গড়ে প্রতি শতাংশ ৪০ লাখ টাকা।'
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর কুমিল্লা শাখার তথ্যেও এ উন্নয়নের ঊর্ধ্বগতির দিকটিই ইঙ্গিত করছে।
রিহ্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ৪০টি ডেভেলপার কোম্পানি কুমিল্লা নগরীর সড়ক ও অলিগলির দুই পাশ ছাড়াও গত এক দশকে ২০টি হাউজিং এস্টেটজুড়ে ৫০০টিরও বেশি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে।
কুমিল্লায় বর্তমানে পাঁচ হাজারেরও বেশি উঁচু ও নিচু ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১০ তলার ওপরই রয়েছে তিন শতাধিক ভবন। ফ্ল্যাট ক্রেতাদের ৭০ শতাংশই প্রবাসী পরিবার।
স্বর্ণকুটির হাউজিং কোম্পানির বিনিয়োগ অংশীদার মাহমুদ হোসেন বলেন, 'আমরা কুমিল্লায় ৩৮টি আবাসন প্রকল্প পরিচালনা করছি। যার মধ্যে ২৭টি বর্তমানে নির্মাণাধীন এবং ৪টি হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের ক্রেতাদের সিংহভাগই প্রবাসী।'
ফেনীতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফেনী পৌরসভার সীমান্তবর্তী জমিগুলো প্রতি শতাংশ সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, যেখানে শহরের কেন্দ্রস্থল ট্রাঙ্ক রোড এলাকায় জমির দাম শতাংশপ্রতি দুই কোটি টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স
রেমিট্যান্সের অর্থনৈতিক প্রভাব এসব এলাকায় জমির দামের বাইরেও প্রসারিত। নির্মাণ কর্মকাণ্ডের পরিসর বাড়ায় বিভিন্ন শিল্পের জন্য নতুন পথ তৈরি হয়েছে এ এলাকাগুলোতে।
ভবন নির্মাণের উপকরণের চাহিদা মেটাতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইসলাম অ্যান্ড সন্সের মতো ব্যবসাগুলোর গ্রাহকের ৮০ শতাংশই প্রবাসী।
ইসলাম অ্যান্ড সন্সের একজন সহ-স্বত্বাধিকারী কবির আহমেদ নাটকীয় উত্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, 'নির্মাণকাজ সারাবছরই চলে। দুই দশক আগে বিক্রি ছিল আজকের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।'
বিএসআরএমের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন কর টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের নাঙ্গলকোট উপজেলায় কেবল একটিই ডিলার – ইসলাম অ্যান্ড সন্স – আছে। তারা মাসে ১,৭০০ থেকে দুই হাজার টন ইস্পাত বিক্রি করে।'
নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসার বাইরেও স্থানীয় বাজারগুলোতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের শো রুম। প্রতিটি বাজারেই আছে এজেন্ট ব্যাংক, ব্যাংকের উপশাখা বা সরাসরি ব্যাংকের শাখা।
এসব এলাকার সামাজিক পটভূমিও বিকশিত হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় স্থাপিত হয়েছে টাইলস করা সুদৃশ্য মসজিদ। উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
যেমন ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলায় অন্তত ১৭টি বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল রয়েছে। এর বিপরীতে দেশের বৃহত্তম উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ১৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।
বাতির নিচে অন্ধকার
তবে যারা পাল্লা দিয়ে বিদেশ যেতে পারেননি, তারা পিছিয়ে পড়েছেন তাদেরই কোনো নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশীর তুলনায়।
দাগনভূঁইয়া উপজেলার সেকান্দরপুর গ্রামের আলাবক্স হাজী বাড়ি পরিবারের গল্প এ বৈষম্যের একটি উদাহরণ। বাড়ির চার ছেলে যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হন। বড় ভাই নুর নবী ওমানে গিয়ে ভাগ্যের বদল ঘটান। মারা যাওয়ার আগে তার বড় ছেলেকে দুবাই পাঠিয়ে দেন এবং সন্তানদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়ে যান।
তবে ছোট দুই ভাই দুলাল ও কালাম প্রবাসে যেতে পারেননি। তারা রিক্সা চালানো, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক শ্রম ইত্যাদি কাজ করে সংসারের খরচ মেটান। বলা বাহুল্য, বিদেশে থাকা ভাইদের মতো তারা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারেননি।
একই পাড়ায় এরকম আরও উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। যারা বিদেশে যেতে পেরেছেন, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বদল ঘটলেও তাদেরই আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীরা বিদেশে না যেতে পারায় দিনমজুরের কাজ করেন। ফলে ঘরবাড়ি, সন্তানের শিক্ষাদীক্ষা কিংবা চিকিৎসাসহ সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে আছেন।
বর্তমানে প্রবাসীরা তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ভর্তি করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনেকে সন্তানদের মাদ্রাসায়ও পড়ান।
সেকান্দারপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ফজলুর রহমানেরা সাত ভাই। তারা সবাই পাশের গ্রামের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। তবে এ পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের কেউই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েনি; তারা সকলেই স্থানীয় এমজিবি কিন্ডারগার্টেনে প্রাথমিক শিক্ষার পাট চুকিয়েছে।
ফজলুর রহমানের বড় ছেলে সোহানুর রহমান প্রাথমিক পাশ করে বাড়ির কাছের একটি হাইস্কুলে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে সদর উপজেলার দাগনভূঁইয়া একাডেমিতে ৭ম শ্রেণিতে পড়ছে।
'ছেলেকে সেখানে ভর্তি করিয়েছি কারণ উপজেলা শহরের স্কুলে গ্রামের স্কুলের তুলনায় ভালো পড়ালেখা হয়। আমরা গ্রামের হাইস্কুল থেকে হাইস্কুলের পড়া শেষ করেছি। আমাদের বাবা-মায়ের কাছে আমাদের স্কুলে পড়ার জন্য গ্রামের বাইরে পাঠানোর আর্থিক সঙ্গতি ছিল না, কিন্তু এখন এটি আমাদের পক্ষে সম্ভব,' টিবিএসকে বলেন ফজলুর রহমান।
প্রবাসীদের মধ্যে একটি প্রবণতা হলো মসজিদ ও মাদ্রাসায় অর্থ দান করা। গ্রাম ও শহরে মাদ্রাসার বিস্তারের অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকেই এটিকে বিবেচনা করছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, রামনগর ইউনিয়ন প্রবাসী অধ্যুষিত। সেকান্দরপুর গ্রামের ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি করছেন।
রেমিট্যান্স দারিদ্র্য হ্রাস ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে: সমীক্ষা
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ)-এর একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশে শ্রম অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাস এবং উন্নয়নের মধ্যে ইতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
'ইমপ্যাক্ট অব মাইগ্রেশন অন ট্রান্সফর্মেশন টু সাসটেইনেবিলিটি: পোভার্টি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণাটি করা হয়েছে ২০১৪, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ২০টি গ্রামীণ জেলাজুড়ে পরিচালিত ৩টি সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে।
জেলাগুলোকে তাদের বিভিন্ন স্তরের অভিবাসনের প্রবণতার জন্য বেছে নেওয়া হয়। গবেষকেরা অ-অভিবাসী, অভ্যন্তরীণ অভিবাসী এবং রেমিট্যান্স গ্রাহকদের পরিবারের সাক্ষাৎকার নেন।
ফলাফলে দেখা যায়, রেমিট্যান্স পাওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এক হাজার ৫৬৫টি রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২০১৪ সালে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২০ সালে ৬ শতাংশ হয়েছে।
আরএমএমআরইউ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার এবং গবেষণা ই-বইটির সম্পাদক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, 'এটি পরিমাপ করা কঠিন কিন্তু দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে সফল অভিবাসীদের অবদান বিশাল। রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারগুলো সাধারণ জনগণের তুলনায় একটি ভালো ক্রয় ক্ষমতার অধিকারী এবং অন্যদের তুলনায় বেশি পণ্য কেনার প্রবণতা রাখে। ফলে স্থানীয় বাজারগুলো সমৃদ্ধ হয়।'
ই-বই অনুসারে, সেচ পাম্প, পাওয়ার টিলার এবং ট্রাক্টরের মতো কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অ-অভিবাসী এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসী পরিবারের তুলনায় রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে ২৪ শতাংশ অ-অভিবাসী পরিবারের এবং ১৯ শতাংশ অভ্যন্তরীণ অভিবাসী পরিবারের তুলনায় ২৫ শতাংশ রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবার সেচ পাম্প ব্যবহার করেছে।
ওই বছর রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত পরিবারের ৪৭ শতাংশ মুরগি পালনে, ২৮ শতাংশ পশু পালনে এবং ৬ শতাংশ মাছচাষে জড়িত ছিল।
পাশাপাশি রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারগুলোর ১ দশমিক ৪ শতাংশ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যেমন টেক্সটাইল ইউনিট, মশলা মিল, করাতকল, হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের সঙ্গে জড়িত ছিল।
এছাড়া তাদের মধ্যে ৮ শতাংশ রিকশা, মাইক্রোবাস, ট্রাক ইত্যাদি পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করেছে। আর ১২ শতাংশ বিভিন্ন স্থানে দোকান কিনেছে।
'রেমিট্যান্স টেকসই কৃষি উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারণ গ্রামীণ রেমিট্যান্স-প্রাপ্ত পরিবারগুলো সেচের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যয় করে,' বলেন তাসনিম।
তবে এটা বলা যাবে না যে প্রতিটি অভিবাসী পরিবার অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে সমানভাবে সাফল্য পেয়েছে কারণ 'ব্যর্থ অভিবাসনের'ও অনেক উদাহরণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তানসিম।
মুন্সীগঞ্জে শিক্ষাকে প্রভাবিত করছে রেমিট্যান্স প্রবাহ
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন। বর্তমানে এ এলাকার ১২৫–১৩০ জনেরও বেশি বাসিন্দা বিদেশে কাজ করছেন।
মো. শামীম বেপারীর মতো বাসিন্দা, যার ভাই দুই দশক ধরে কোরিয়াতে কাজ করেছেন, জীবনযাত্রার মান এবং শিক্ষার সুযোগের বৃদ্ধির জন্য রেমিট্যান্সকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন।
একজন সফল ব্যবসায়ী শামীম মেয়েদের শিক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, "প্রবাসী তরুণেরা এখন ভাবেন, 'আমি পড়তে পারিনি, বোনেরা তো পড়ুক।'"
শামীম বেপারীর কথার সত্যতা পাওয়া গেল আব্দুল্লাহপুর হাই স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্র-ছাত্রীর হিসাব মিলিয়ে। ওই ক্লাসে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৮, যার মধ্যে ৫০ জনই ছাত্রী।
স্থানীয় প্রিপারেটরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মো. ইকবাল হোসেনও রেমিট্যান্সের অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেন। 'আমাদের ১০৫ জন শিক্ষার্থীর ৬০ ভাগই ছাত্রী। ক্লাস ফাইভে আমরা ৩০০ টাকা বেতন নিই যা আমাদের সময়ে অভাবনীয় ছিল,' বলেন তিনি।
'আসলে আব্দুল্লাহপুরে এখন উল্লেখযোগ্যেসংখ্যক প্রবাসী আছেন যারা সন্তানের জন্য মাসে ৫–৭ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন। অনেকে ছেলে-মেয়েকে দিনে ৫০ টাকাও হাত খরচ দেন,' তিনি আরও বলেন।
তবে ইকবাল ছেলেদের পড়ালেখার সম্ভাব্য পতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, পনের বছর বয়স হয়ে গেলে তারা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করছে। তারপর ইলেকট্রিক বা ঝালাইয়ের কাজ শিখতে ভর্তি হচ্ছে। কেউ কেউ শিখছে বিদেশি ভাষা।
তিনি বলেন, 'ছেলেদের শিক্ষার হার দিন দিন কমছে। যারা বিদেশে যেতে পারে তারা সোনার হরিণ পায়, যারা পারে না তারা হতাশ হয়ে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে।'
এ এলাকার স্থানীয়রা অভিবাসনের জন্য কোরিয়া ও জাপানের মতো এশীয় দেশগুলোকে প্রাধান্য দেয়। বেপারী পরিবার এ ধারার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
শেরু বেপারীর চার ছেলের সবাই দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকে। আবদুল্লাহপুর ৩নং ওয়ার্ডে রেমিট্যান্স আয় দিয়ে নির্মিত তাদের কোরীয় ধাঁচের বাড়িটি রাস্তা থেকেই নজর কাড়ে।
শেরুর বড় ছেলে রিপন বেপারী প্রবাস জীবন ছেড়ে এখন দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি জানান, তাদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাড়িটির পেছনে খরচ হয়েছে এক কোটি টাকারও বেশি। তার ছেলেরাও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক কোরিয়ান-ফেরত ওবায়দুল হক কোতোয়াল জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন, 'সামাজিক রীতিনীতিও বদলে গেছে। আমাদের সময়ে আমরা বাড়ি থেকে হলুদ গাঁদা দিয়ে মালা তৈরি করে শহীদ দিবসে স্কুলে নিয়ে আসতাম। এখন বাজারে দামি তোড়া পাওয়া যায়। আমি মেয়ের জন্য একটি কিনেছি।'
চার দশক ধরে বিদেশে কর্মী পাঠানোর কাজ করছেন স্থানীয় এজেন্ট মহিউদ্দিন ছৈয়াল। তিনি বলেন, পড়াশোনায় খুব ভালো না হলে উচ্চতর শিক্ষা নেওয়া সময় নষ্ট করার শামিল। তার মতে, এর চেয়ে বরং বিদেশে প্রযুক্তিগত ও ভাষার দক্ষতার আর্থিক সুবিধা বেশি।
তিনি কোরিয়ায় ন্যূনতম বেতন আড়াই লাখ টাকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন লাখ টাকা উল্লেখ করে অভিবাসনকে সমৃদ্ধির সহজ পথ হিসেবে বর্ণনা করেন। 'আমি মনে করি যেহেতু সুযোগ আছে আর ঐতিহ্যও আছে, তাই আবদুল্লাহপুরের লোকদের বিদেশে যাওয়াই ভালো। যেকোনো দেশেই পরিচিত লোক পেতে এবং তার মারফত কাজ পেতে আবদুল্লাহপুরের লোকের কষ্ট হয় না।'
একজন প্রাক্তন অভিবাসী কর্মী এমএ দিদার কোরিয়ায় প্রায় ১৫ বছর কাটিয়ে দেশে এসে একটি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার এ স্কুলটি এখন সফল।
'দক্ষিণ কোরিয়া এখন স্বর্ণভাণ্ডার। গ্রেড সেভেনের ভিসা পাওয়া মানে আপনি নাগরিকত্ব পাবেন অল্পদিনের মধ্যে। এর ফলে কোরীয় ও প্রবাসীদের মধ্যে বেতনের যে বৈষম্য তা মিটে যায়। আড়াই লাখ টাকা মাসে আয় করা ডালভাত বলা যায়।
আমার প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ছাত্র ২০০ মার্কের মধ্যে ১৯০-ও পেয়েছে। আমাদের এলাকা থেকে মাস-দুই মাসে এক-দুজন কোরিয়া যাচ্ছেন এখন। এসএসসির পর থেকে চেষ্টা শুরু করলে এইচএসসি পাশ করেই বিদেশে পাড়ি জমানো যায়। যাওয়ার দু-আড়াই বছরের মধ্যে অনেকে বাড়ি পাকা করে ফেলতে পারছে। এটা কি ভালো নয়?' বলেন তিনি।
শামীম বেপারীর একটি দারুণ পর্যবেক্ষণ আছে। তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলোতে যারা যান, তারাই মূলত এলাকার উন্নয়ন ঘটান। নিজেদের ভিটা-বাড়ি উন্নত করেন, এলাকার স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসায় অনুদান দেন। যা আয় করেন, প্রায় সবটাই দেশে পাঠিয়ে দেন।
'আর যারা ইউরোপ-আমেরিকা যায়, ব্যতিক্রম বাদে তারা সবাই সেখানে থিতু হতেই জীবন পার করে ফেলে। উন্নত দেশগুলোতে জীবনযাত্রার খরচও অনেক বেশি। তিন লাখ টাকা আয় করলে দেড়–দুই লাখ টাকা খাওয়া আর থাকাতেই চলে যায়। বাকি টাকার অনেকটাই সঞ্চয় করতে থাকে গাড়ি-বাড়ি করার জন্য,' বলেন তিনি।