ছেলের চোখে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের গোপন জীবন
মুমূর্ষু বাবা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসকে নিয়ে মজার একটা গল্প শোনালেন রদ্রিগো গার্সিয়া। এক বিকালে মার্কেসের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে তার দেখভাল নিয়ে কথা বলছিলেন কয়েকজন নার্স। লেখক তখন বলতে গেলে মৃত্যুশয্যায়, 'কয়েক বছর ধরে গভীর স্মৃতিভ্রংশে' আক্রান্ত। মার্কেস তখন ঘুমাচ্ছিলেন। আচমকা 'তিনি জেগে উঠে চার মহিলাকে দেখে বললেন, "তোমাদের সবাইকে তো আমি বিছানায় নিতে পারব না!"'
ঘটনাটা বলতে বলতে হো হো করে হেসে উঠলেন রদ্রিগো। 'স্থান-কালের জ্ঞান এবং স্মৃতি হারানো একজন মানুষের তখনও রসবোধ আছে, এই ব্যাপারটা অসাধারণ। তিনি কোথায় আছেন, কিংবা ওই মানুষগুলোই বা কারা—এ ব্যাপারে বাবার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না, তবু তিনি জানতেন কথাটা বললে সবাই মজা পাবে।'
এ বছরের এপ্রিলে কলম্বিয়ান লেখক, ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই 'ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অভ সলিচিউড' বিক্রি হয়েছে ৫০ মিলিয়ন কপির বেশি। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, এ উপন্যাস হচ্ছে 'বুক অভ জেনেসিসের পর একমাত্র বই যা গোটা মানবজাতির পড়া উচিত'।
মৃত্যুর দশ বছর পর, সবাইকে চমকে দিয়ে, চলতি বছরের মার্চেই প্রকাশিত হলো মার্কেসের 'সর্বশেষ' বই 'এন আগোস্তো নস ভেমোস' বা 'আনটিল অগাস্ট'। কাকতালীয়ভাবে এর পরের মাসেই লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী। 'টাইম' ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত বইগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে নতুন এ উপন্যাসিকা। রদ্রিগো জানান, এ বইয়ের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। ওই নারী প্রতি বছর মায়ের সমাধি দেখতে যায়; আর প্রতি বছরই সে একজন করে নতুন প্রেমিক জোটায়।
রদ্রিগো (৬৪) জানালেন, তিনি ও তার ছোট ভাই গঞ্জালো (৬০) প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না বইটি প্রকাশ করবেন কি না। কারণ দশটা খসড়া লেখার পরও তাদের বাবার মনে হয়নি যে গল্পটি প্রকাশ করার যোগ্য।
রদ্রিগো বলেন, 'আমার ভাই আর আমি নিজেদের ক্ষমা করতে পারব। কারণ বাবা বলতেন, "আমি মারা যাওয়ার পর তোমরা যা খুশি কোরো।" আমরা বইটা আবার পড়লাম। পড়ার পর মনে হলোল, তিনি যা ভাবতেন, ওটা তারচেয়েও অনেক ভালো। আমার ধারণা, বাবা বইটির মান যাচাই করার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন।'
'ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারসভ অভ সলিচিউড'কে পর্দায় আনা সম্ভব হবে না বলেও মনে করতেন তাদের বাবা। তারপরও কলম্বিয়ায় স্প্যানিশে শুটিং করা হবে–এই শর্তে দুই ভাই বইটি অবলম্বনে সিরিজ বানানোর অনুমতি দিয়েছেন নেটফ্লিক্সকে। 'বাবার সমস্যা ছিল যে, আল পাচিনোকে কর্নেল আরলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার [উপন্যাসের প্রধান চরিত্র] চরিত্রে নিয়ে তিন ঘণ্টার ছবিতে এ গল্প আঁটানো যাবে না।' এটাই ছিল মার্কেসের আপত্তি।
তবে সিরিজটি এখন দুই সিজনে আসছে। প্রতি সিজনে থাকবে আটটি এপিসোড। মোট ১৬ ঘণ্টা হবে দৈর্ঘ্য। প্রোডাকশনটির উপদেষ্টা হিসেবেও ছিলেন রদ্রিগো। তিনি বলেন, 'দারুণভাবে বানানো হয়েছে এটি।' গত তিন দশক ধরে লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকছেন রদ্রিগো। তার স্ত্রী আদ্রিয়ানা পেশায় শিক্ষক। দুই মেয়ের জনক-জননী তারা—ইসাবেল ও ইনেস।
রদ্রিগো সফল চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন পরিচলক। 'নাইন লাইভস' (২০০৫), 'আলবার্ট নবস' (২০১১) তার নন্দিত চলচ্চিত্র। কয়েক সপ্তাহ আগে নেটফ্লিক্সে তার প্রথম স্প্যানিশ ভাষার চলচ্চচিত্র 'ফ্যামিলিয়া' মুক্তি পেয়েছে।
রদ্রিগো জানালেন, মার্কেস দুশ্চিন্তায় ভুগতেন, তার খ্যাতি হয়তো সন্তানদের জীবনে সমস্যা তৈরি করবে। তবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মানুষই তার বিখ্যাত বাবার নাম জানে না। রদ্রিগো বলেন, 'নিজের পরিচয় তৈরি করার ব্যাপারে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।' মার্কেসের ছেলে—এটাই যেন তার মূল পরিচয় না হয়ে ওঠে, এ ব্যাপারেও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
তার বাবার—বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের লোকজন যাকে গ্যাবো নামে ডাকত—ছিল পপ-কালচার পর্যায়ের খ্যাতি। রদ্রিগো বললেন, 'একজন লেখকের জন্য বাবা ছিলেন মিক জ্যাগারের মতো। তিনি নিয়মিত স্থানীয় নিউজস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতেন। লোকজন তাকে দেখে বলে উঠত, "হায় খোদা, আপনি এখানে!"'
এত বিখ্যাত মানুষ হওয়ার পরও মার্কেসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তেমন কিছু জানা যায় না। মহা উৎসাহে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রেখেছেন। তিনি একবার তার ছেলেকে বলেছিলেন, 'প্রত্যেকেরই তিনটা জীবন থাকে—প্রকাশ্য, ব্যক্তিগত এবং গোপন।' মার্কেসের মৃত্যুর পরই কেবল তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছুটা সামনে এসেছে।
বছর কয়েক আগে গুঞ্জন উঠেছিল, মার্কেসের এক গোপন সন্তান আছে। ২০২১ সালে বাবা-মাকে নিয়ে লেখা স্মৃতিকথা 'আ ফেয়ারওয়েল টু গ্যাবো অ্যান্ড মার্সিডিজ'-এ এই গুঞ্জনের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন রদ্রিগো। পিতার অন্ত্যেষ্টিতে শোক জানাতে আসা মানুষদের কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন: 'ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হয়, এই মানুষগুলোর মধ্যে কেউ একজন হয়তো তার গোপন জীবন থেকে এসেছে।'
সান্তা মনিকায় নিজের বাড়ির পাশেই এক ইটালিয়ান ক্যাফেতে বসে এ কথার ব্যাখ্যা দিলেন রদ্রিগো। 'যারা জানে, তাদের জন্য গোপনে চোখ টিপেছিলাম ওই কথা বলে।' এখানে তার ইঙ্গিত মার্কেসের মেয়ে ইন্দিরার দিকে।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে কিউবায় এক চিত্রনাট্য লেখার ওয়ার্কশপে ক্লাস নিয়েছিলেন গ্যাবো। সেখানে এসেছিলেন সুসানা কাতো নামে এক মেক্সিকান তরুণী। মেক্সিকোর 'ক্যাম্বিও' ম্যাগাজিনের প্রতিবেদক সুসানা মার্কেসের সাক্ষাৎকার নেন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনে সম্পর্কে জড়ান। সম্পর্কে জড়ানোর কিছুদিন পরই সুসানার কোলজুড়ে আসেন ইন্দিরা। তিনি অবশ্য মায়ের পদবি ব্যবহার করেন।
রদ্রিগো বললেন, 'আমি যদ্দূর জানি, ছোটবেলা থেকেই ওকে [ইন্দিরা] চিনতেন বাবা; ওকে দেখতেও যেতেন। তবে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার পর ওর সাথে যোগাযোগ রাখতে নিশ্চয় খুব কষ্ট হতো তার।'
মার্কেস আসলেই শেষ কয়েক বছরে কাউকে চিনতেন না। 'তিনি মূলত আমার মাকে [মার্সিডিজ] চিনতে পারতেন, নিজের দ্বিতীয় সত্তা হিসেবে। তবে মায়ের নাম তার মনে ছিল বলে মনে হয় না। তবে বাবা আমার ভাই আর আমাকে চিনতে পারতেন না। মনে আছে, একবার গাড়ি চালিয়ে এক রেস্তোরাঁ থেকে ফিরছিলান আমরা। বাবা বসেছিলেন পেছনের সিটে, আমার মেয়ের সঙ্গে। সেদিন তিনি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন, গাড়িভর্তি অপরিচিত মানুষের সঙ্গে ভ্রমণ করতে হচ্ছে ভেবে,' জানালেন রদ্রিগো।
বাবা যেদিন দুই ভাইকে তাদের সৎবোনের কথা জানান, সেই দিনটার কথা স্পষ্ট মনে আছে রদ্রিগোর। ইন্দিরার বয়স ১৮ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে দুই ছেলেকে তার কথা জানিয়েছিলেন গ্যাবো। অবশ্য তাদের মা ইন্দিরার কথা জানতেন কি না, তা কেউই নিশ্চিত নন। রদ্রিগো বললেন, 'মা জানত কি না বলতে পারব না।' রদ্রিগো সবার আগে ভেবেছিলেন ইন্দিরার কথা। 'আমার ভাই আর আমি ওর সাথে যোগাযোগ করলাম। কারণ আমরা শঙ্কিত ছিলাম যে, ও হয়তো ভেবে নিয়েছে আমরা সারাজীবনই ওকে অস্বীকার করে এসেছি।' প্রথমবার দেখা হওয়ার পর সৎবোনের সঙ্গে আরও অনেকবার দেখা করেছেন তারা। 'ও ভারি চমৎকার মানুষ। আমার ভাই আর আমি ওকে বাবার কয়েকটা ব্যক্তিগত জিনিস দিয়েছি, যদিও ও কখনও কিচ্ছু চায়নি। এই একটা কারণই তো ওকে আপন করে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।'
২০২২ সালে ইন্দিরা কাতোর পিতৃপরিচয়ের খবর চাউর হয়ে যায়। তবে ততদিনে তিনি মেক্সিকোতে ডকুমেন্টারি লেখক ও প্রযোজক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের খাবার দেওয়া এক নারীকে নিয়ে প্রথম ডকুমেন্টারি 'অল অভ মি' (২০১৪) বানান ইন্দিরা। মেক্সিকোতে সেটি একটি পুরস্কার জেতে।
রদ্রিগোর জানামতে তার বাবার আর কোনো সন্তান নেই। রসিকতা করে গ্যাবো-তনয় বললেন, 'আমি নিশ্চিত, [থাকলে] এতদিনে সে হাজির হয়ে যেত।'
কিছু গোপন রহস্য মার্কেস সফলভাবে তার সঙ্গে কবরে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন, পেরুর ঔপন্যাসিক মারিও বার্গাস ইয়োসা কেন ১৯৭৬ সালে গ্যাবোকে ঘুসি মেরেছিলেন। এ রহস্য আজও ভেদ হয়নি।
মেক্সিকো সিটিতে এক চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় মার্কেসের। বন্ধুর দেখা পেয়ে 'মারিও!' বলে চেঁচিয়ে উঠে উচ্ছ্বসিত গ্যাবো হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আলিঙ্গন করতে। কিন্তু জবাবে মার্কেসের চোখে ঘুসি মেরে বসেন বার্গাস ইয়োসা। সেখান থেকেই শুরু সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম আলোড়ন সৃষ্টিকারী দ্বন্দ্বের।
এ দ্বৈরথ প্রসঙ্গে রদ্রিগো বলেন, 'আমি এ গল্পের অনেকগুলো সংস্করণ শুনেছি। একটা সংস্করণ হচ্ছে, মারিও তার স্ত্রী প্যাট্রিসিয়াকে ফেলে আরেকজনের সঙ্গে চলে যান। আমার বাবা-মা প্যাট্রিসিয়ার পক্ষ নিয়েছিলেন। প্যাট্রিসিয়ার পক্ষ নেওয়ার কারণেই বাবা ঘুসি খেয়েছিলেন কি না, জানি না। তবে এই কাহিনিটাও স্রেফ গুজব।'
দুই লেখক আর কখনও কথা বলেননি। অস্বস্তিকর বিষয় বলে রদ্রিগোও এ ব্যাপারে বাবাকে কখনও কোনো প্রশ্ন করেননি। মার্কেস ও ইয়োসা যখন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, সেই সময়ের কথা খুব ভালোমতোই মনে আছে তার। 'বার্সেলোনায় আমাদের থেকে এক ব্লক দূরেই থাকতেন তারা। রোববার স্প্যানিশ স্টাইলের দুপুরের খাবার খেতে যেতাম আমরা। তার বাচ্চারা বয়সে আমাদের থেকে ছোট। ওদের একজনের নাম রাখা হয়েছিল আমাদের নামের সাথে মিলিয়ে—গ্যাব্রিয়েল রদ্রিগো গঞ্জালো [মার্কেস পরিবারের তিন পুরুষের নামের প্রথমাংশ থেকে নেওয়া]।'
ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেও মার্কেস ও ইয়োসা একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের লেখক ছিলেন। শিল্পসাহিত্য নিয়ে প্রাণবন্ত তর্ক-বিতর্ক হতো তাদের মধ্যে। রদ্রিগো বলেন, 'মারিও ছিলেন পুরোদস্তুর শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবী। আর আমার বাবা ছিলেন শুধুই শিল্পী; যা পছন্দ করতেন, শুধু তা-ই পড়তেন। এই যেমন, প্রুস্ত কোনোকালেই পছন্দ করতে পারেননি তিনি। বলতেন, "রিমেম্ব্রেন্স অভ থিংস পাস্ট" ছিল তার পড়া সবচেয়ে বিরক্তিকর এবং ফরাসিকৃত বই।'
এমনকি নিজের কাজ, বিশেষ করে 'ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অভ সলিচিউড'-এরও কড়া সমালোচক ছিলেন মার্কেস। 'বইটাকে তিনি ঘৃণা করতেন। কারণ বহু বছর তাকে শুধু এ বইয়ের কথাই শুনতে হয়েছে—ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস এটা, ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস সেটা। একে তিনি বলতেন "লা পিঞ্চে নভেলা"—"ওই হারামজাদা নচ্ছার উপন্যাস"। তবে "লাভ ইন দ্য টাইম অভ কলেরা" [১৯৮৫ সালে, নোবেল জয়ের তিন বছর পর প্রকাশিত] সফল হওয়ার পর ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস-এর ওপর তার বিদ্বেষ কমে আসে। …আমার মনে হয় শেষেরদিকে উপন্যাসটাকে তিনি আরও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।'
রদ্রিগো মনে করেন, ইয়োসার সঙ্গে যা-ই হয়ে থাকুক, দুই লেখকই বিরোধটা মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'ব্যাপারটার সঙ্গে স্ত্রীরা জড়িত না হলে মিটমাট হয়ে যেত। এটা আমার ধারণা বটে, তবে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে দুজনেই একে অপরের দিকে সন্ধির বার্তা দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমার ধারণা, দুজনের স্ত্রীরা সেই সম্ভাবনা গলা টিপে মেরে ফেলেন। আমার বাবা আর মারিও তো জানতেনই [আসলে কী হয়েছিল]। অথবা তাদের মধ্যে একজন জানতেন। অথবা মারিও ভেবে নিয়েছিলেন একটা ঘটনা ঘটেছে, যদিও আদতে সেই ঘটনা ঘটেনি।'
এক সাক্ষাৎকারে বার্গাস ইয়োসাকে আমি সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম, বন্ধুকে তিনি ঘুসি মেরেছিলেন কেন। জবাবে ইয়োসা বলেছিলেন, 'আমি কখনও ওই বিষয় নিয়ে কথা বলি না।' গত বছর ৮৭ বছর বয়সি ইয়োসার নতুন উপন্যাস 'আই গিভ ইউ মাই সাইলেন্স' প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এটিই হবে তার শেষ উপন্যাস।
এক সপ্তাহ পর আবার রদ্রিগোর সঙ্গে দেখা করি আমি। এবার তার সান্তা মনিকার বাড়িতে। বাগানে কাজ করছিলেন তার স্ত্রী আদ্রিয়ানা, আমাকে দেখে হাসিমুখে হাত নাড়লেন। বাবা-মা প্রায়ই বেড়াতে আসতেন রদ্রিগোর বাড়িতে। তারা যে গেস্টহাউসে উঠতেন, সেটি দেখালেন রদ্রিগো। পারিবারিক ছবিতে মার্কেসকে দেখা গেল বুট পরা অবস্থায়। রদ্রিগো জানালেন, 'বাবা চাইতেন তাকে যেন সবসময় লম্বা দেখায়, সেজন্য এই ইটালিয়ান বুট পরতেন।' একটা বইয়ের তাকে দেখলাম মার্কেসের একখানা পুতুল সংস্করণ। গ্যাবো-তনয় বললেন, 'এটা দেখে বাবা হাসতেন। কলম্বিয়ার বাজারে এ জিনিস বিক্রি হয়।' আরেকটা মোমবাতিতে দেখা গেল মার্কেসের ছবি আঁকা, ডানাওয়ালা দেবদূত হিসেবে। নিচে লেখা: 'সেইন্ট গ্যাব্রিয়েল'। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এটসি-তে জিনিসটা পেয়েছেন রদ্রিগোর মেয়েরা। এসবই বলে দেয় মার্কেসের জনপ্রিয়তা কতটা তুঙ্গস্পর্শী, তিনি কতটা ভালোবাসার পাত্র, বিশেষ করে জন্মভূমি কলম্বিয়া ও দ্বিতীয় দেশ মেক্সিকোতে।
১৯২৭ সালে কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের কাছে আরাকাটাকা শহরে জন্ম মার্কেসের। প্রথম আট বছর তিনি বেড়ে ওঠেন নানা-নানির কাছে। ওই সময় তার পোস্টাল ক্লার্ক ও টেলিগ্রাফ অপারেটর বাবা বারানকুইলা শহরে চলে গিয়েছিলেন চাকরির সুবাদে। ওই আট বছরকে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময় বলে বহুবার উল্লেখ করেছেন গ্যাবো। তার নানা-নানি দুজনেই ছিলেন ভয়াবহ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ভূতপ্রেত, অলৌকিক ঘটনায় প্রবল বিশ্বাস ছিল তাদের। কলম্বিয়ার সহস্র দিনের গৃহযুদ্ধে এক কর্নেলের বীরত্বের গল্প শোনাতেন তারা নাতিকে। নানা-নানি দুজনেই প্রবল প্রভাব ফেলেছেন মার্কেসের ব্যক্তিগত ও লেখকজীবনে।
মার্কেস বোগোতায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানেই—১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত দশ বছরব্যাপী ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ বা লা ভায়োলেন্সিয়ার সময়—তিনি সাংবাদিক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। এর পাশাপাশি লিখতে থাকেন কবিতা ও ছোটগল্প। অবশেষে ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাসিকা 'লিফ স্টর্ম'। ওই বইয়েই তিনি কাল্পনিক শহর মাকোন্দোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন পাঠকদের। আরাকাটাকার আদলে সৃষ্টি করা এ শহরের প্রেক্ষাপটেই সাজানো হয় 'ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অভ সলিচিউড'-এর কাহিনি।
এতে তিনি বেশ কিছু কলাকৌশল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। যেমন এ বইয়ে সময়কে লেখক নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছেন, কোনো ধারাবাহিকতা রাখেননি। এতে আছে জাদুবাস্তবতার নির্যাসও—বাস্তবের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে ফ্যান্টাসি। তবে নিজের উপন্যাসে 'জাদুবাস্তব' লেবেল সেঁটে দেওয়াটা ভীষণ অপছন্দ করতেন মার্কেস। কারণ, তার মতে, কলম্বিয়ার ছোট্ট শহরে জীবন যেমন ছিল, ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করেছেন তিনি। রদ্রিগো বলেন, 'এসব ঘটনার অধিকাংশই বাস্তবেও ঘটেছিল।'
দুটো সাদামাটা রুপার আংটি দেখলাম রদ্রিগোর ডান হাতের কড়ে আঙুলে। আংটি দুটো খুলে আমার হাতে দিলেন তিনি। ওতে খোদাই করা লেখাগুলো পড়ে দেখলাম ওগুলো তার বাবা-মায়ের বিয়ের আংটি। ছোট ছোট হরফে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া ও মার্সিডিজ বার্চা নাম দুটি লেখা; আর লেখা তাদের বিয়ের তারিখ: মার্চ ২১, ১৯৫৮। তাদের দুজনের প্রথম দেখা হয় সেই শৈশবে, ১৯৩০-এর দশকে, উত্তর কলম্বিয়ার সুক্রে শহরে। সেখানে মার্সিডিজের বাবা ফার্মাসিস্ট ছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কেস বুঝে গিয়েছিলেন, একদিন এই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে তার। রদ্রিগো বললেন, 'আমার বাবা সবসময় বলতেন, তার দেখা সবচেয়ে আকর্ষণীয় মানুষটি হচ্ছেন আমার মা।'
রদ্রিগোর জন্ম ১৯৫৯ সালে, বোগোতায়। এর দুবছর বাদে কলম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ মার্কেস সপরিবারে মেক্সিকো সিটিতে চলে যান। সেখানেই ১৯৬৪ সালে গঞ্জালোর জন্ম। কলম্বিয়ান সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করে নিজ দেশে বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন মার্কেস। বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকেন।
রদ্রিগোর মনে আছে, তার বাবা 'ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অভ সলিচিউড' নিয়ে মেক্সিকোতে 'ঘোরগ্রস্তের মতো' কাজ করেছিলেন। মাঝে মাঝে তাদের মা তাকে আর তার ভাইকে পড়ার কক্ষে পাঠাতেন কোনো বার্তা দিয়ে। মার্কেস তখন শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন ছেলেদের দিকে, তখন তিনি বুয়েন্দিয়া পরিবারের কয়েক প্রজন্মের কাহিনির 'গোলকধাঁধায় পথ হারিয়েছেন'।
ছোটবেলায় রদ্রিগো বুঝতেন না তার বাবা-মায়ের কাছে তেমন টাকাপয়সা ছিল না। 'এখন বুঝতে পারি, আমাদের বাড়ি ছিল প্রায় শূন্য। দুটো কামরা ছিল বাড়িতে, কোনো আসবাব ছিল না ওগুলোতে। এক বড়দিনে এন্তার উপহার পেয়েছিলাম আমরা। অনেক বছর পর বাবাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। জবাবে তিনি বলেছিলেন, "বন্ধুরা জানত আমরা খুব টানাটানিতে আছি, তাই ওরা উপহার পাঠিয়ে দিয়েছিল।"'
রদ্রিগোর বাবা যখন লিখতেন, তখন কসাইয়ের দোকানের বাকি আর বাড়িওয়ালার তাগাদা—সবই সামলাতেন তার মা। 'আমার বাবা-মা ১১ মাস বাড়িভাড়া দেননি।' মার্কেস যখন উপন্যাসটা লেখা শেষ করেন, তখন ওটা ডাকে পাঠানোর খরচ জোগাতে নিজের হেয়ারড্রায়ার বন্ধক রাখেন মার্সিডিজ।
প্রকাশের পর অল্প সময়ের মধ্যেই বইটি সাফল্যের মুখ দেখে। ১৯৭০ সালে উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। মার্কেস তখন কয়েক বছরের জন্য সপরিবারে বার্সেলোনায় চলে যান। রদ্রিগো জানান, সেখানে তার বাবা-মা প্রচুর বন্ধুবান্ধব জোটান। মেক্সিকান লেখক কার্লোস ফুয়েন্তেস, স্প্যানিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লুইস বুনুয়েলসহ বিরাট বন্ধুবলয় বানিয়ে ফেলেন তারা।
পরিবার হিসেবে তারা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। 'আমাদের পরিবারের বাবার আর মায়ের পক্ষের বাকি সবাই ছিলেন কলম্বিয়াতে। তাই আমাদের চারজনের মধ্যে শক্ত বন্ধন গড়ে ওঠে; আমরা হয়ে উঠি চারজনের একটা ক্লাব।' রদ্রিগো মেক্সিকো সিটি ও বার্সেলোনা দুজায়গাতেই ইংরেজিভাষী স্কুলে গেছেন। তারপর ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন হার্ভার্ডে। ছেলেদের লেখাপড়া নিয়ে বাবা-মায়ের বড় একটা উদ্বেগ ছিল না। সন্তানদের তারা স্নেহ আর কড়া শাসনের বেড়াজালেও আটকে রাখেননি। 'সারা জীবনে তারা মাত্র দুবার আমার স্কুলে গিয়েছিলেন।' তবে রোজ দুপুরের খাবারটা পরিবারের সবাই একসঙ্গে খেতেন। 'বাবা সবসময় চাইতেন আমরা যেন স্কুল শেষে বেলা তিনটায় লাতিন-স্টাইলে লাঞ্চ করতে যাই বাড়িতে, যাতে তিনি আমাদের খোঁজখবর নিতে পারেন। খাবার টেবিলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, "কেমন যাচ্ছে দিনকাল?"'
সত্তরের দশকের শেষদিকে তারা কিউবায় বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন। কিউবান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল মার্কেসের। এই কিউবান বিপ্লবী মাঝে মাঝেই এসে তাদের সঙ্গে থাকতেন। রদ্রিগো বলেন, 'কাস্ত্রো কোথায় ঘুমাতেন, এ ব্যাপারটা একটু রহস্যে মোড়ানো। তার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ফোন করে বাবাকে জিজ্ঞেস করতেন সেদিন রাতে তিনি বাড়িতে থাকবেন কি না। বাবা হ্যাঁ বলতেন। তখন তারা বলতেন, "আপনার বাড়িতে অতিথি আসতে পারেন।" 'আসতে পারেন' মানে 'আসতে পারেন'ই, নিশ্চিত নয়। আর তিনি রাত সাড়ে ১০টাতেও আসতে পারেন, আবার রাত দেড়টাতেও আসতে পারেন।'
আশির দশকে মার্কেসের খ্যাতি তুঙ্গে পৌঁছে যায়। অনবরত ফোনকল আসত বাড়িতে। তখন একটা ফোনকল শেষ করে রিসিভার নামিয়ে রাখতে না রাখতেই আরেকটা কল চলে আসত। কয়েক বছর পরের কথা। নিউইয়র্কে বাবা-মায়ের সঙ্গে হাঁটতে বের হয়েছিলেন রদ্রিগো। হঠাৎ 'দুজন মধ্যবয়স্ক আর্জেন্টাইন মহিলা গগনবিদারী চিৎকার করতে করতে ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। তারা বাবাকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেন। তাদের কাছ বিদায় নেওয়ার পর মা বললেন, "হচ্ছেটা কী? আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি আর মহিলাগুলো আমার স্বামীকে চুমু খাচ্ছে!"'
রদ্রিগোর কাছে জানতে চাইলাম, চুমু খাওয়ার পর তার বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
'ওহ, প্লিজ! মেয়েদের চুমু বাবার কেমন লাগত?' হাসতে হাসতে বললেন রদ্রিগো। তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, নারীদের মনোযোগ পেতে তার বাবার মন্দ লাগত না।
মার্কেস একবার তার ছেলেকে বলেছিলেন, 'আশি বছর বয়সে দাঁড়িয়ে জীবন দেখাটা আসলেই দারুণ। সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে।' রদ্রিগো তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'তুমি কি ভয় পাচ্ছ?' তার বাবা জবাব দিয়েছিলেন, 'ব্যাপারটা আমাকে খুব দুঃখ দিচ্ছে।'
ওই সময় থেকেই স্মৃতিলোপ শুরু হয় মার্কেসের; বিষয়টি তিনি বুঝতেও পারতেন। রদ্রিগো জানালেন, একবার গৃহকর্মী মার্কেসকে বাগানে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ওখানে তিনি কী করছেন। মার্কেস জবাব দিয়েছিলেন, 'কাঁদছি। বুঝতে পারছ না আমার মাথাভর্তি এখন স্রেফ গোবর?' নিজের পুরনো বইগুলোই পড়তেন তিনি, বুঝতেও পারতেন না লেখক কে। 'পরে প্রচ্ছদে নিজের ছবি দেখে বলতেন, "আরে, ওটা আমার বই নাকি? আবার শুরু করতে হয় তাহলে।"'
রদ্রিগোর বাবা কখনও কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যেতেন না। বলতেন, বন্ধুদের তিনি নিজ হাতে কবর দিতে চান না। ২০১৪ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। সমাহিত করার আগে চাদরে মুড়িয়ে রাখা বাবার মরদেহের একটা ছবি দেখালেন রদ্রিগো। চাদরের ওপর রাখা তার বাবার পছন্দের হলুদ গোলাপ। 'বাবা মারা যাওয়ার কয়েক মিনিট পর তাকে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, "জীবন ফুরিয়ে যায়, বিশ্বাসই করতে পারছি না!" হাস্যকর চিন্তা।'
মার্কেসের মৃত্যুর পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয় মেক্সিকো সিটিতে। সেটি প্রায় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ এসেছিল তার দেহভস্ম রাখা ভস্মাধার দেখতে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস মার্কেসকে 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কলম্বিয়ান' আখ্যা দিয়ে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। অন্যদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো রদ্রিগোর মাকে মার্কেসের 'বিধবা' বলায় তিনি (মার্সিডিজ) প্রচণ্ড রুষ্ট হন। মার্সিডিজ পরে তার ছেলেদের বলেছিলেন, 'নো সয় লা ভিউদা। ইয়ো সয় ইয়ো।—আমি (মার্কেসের) বিধবা নই। আমি আমিই।'
এর ছয় বছর পর, ২০২০ সালে, করোনা মহামারির সময় মারা যান মার্সিডিজ। শেষবার রদ্রিগো তার মাকে দেখেন একটা ফোনের ফাটা পর্দায়। নিজের স্মৃতিকথায় রদ্রিগো লিখেছেন, 'বাবার পর মায়ের মৃত্যু অনেকটা এরকম—এক রাতে টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চিরকাল ধরে থাকা একটা গ্রহ হুট করে উধাও হয়ে গেছে।'
বাবা-মা দুজনেই মারা যাওয়ার পর রদ্রিগোর এখন মনে হয়, তাদের কাছে তার শৈশব, তাদের জীবন নিয়ে আরও বেশি জানতে চাইলে বড় ভালো হতো। 'কলম্বিয়ার যে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তারা এসেছেন, তা নিয়ে ভাবি আমি। ভাবি, খ্যাতি ও সমৃদ্ধির জগতে তারা কীভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। একটা পার্লার গেম আছে—ওতে দুজন ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে ডিনার করার সুযোগ দেওয়া হয়। আমি যদি কখনও বেছে নেওয়ার সুযোগ পাই, তাহলে চল্লিশের কোঠার বাবা-মায়ের সঙ্গে ডিনার করব। তৃতীয় কোনো মানুষের কথা ভাবতেও পারি না।'
মার্কেস তার গোপন জীবন লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখতে একপ্রকার মরিয়াই ছিলেন। তার উদাহরণ দিতে গিয়ে রদ্রিগো জানালেন বিয়ের আগে মায়ের কাছে লেখা চিঠিগুলো কীভাবে কিনে নিয়েছিলেন তার বাবা। 'বাবা সেগুলো ওই সময় ৫০০ কলম্বিয়ান পেসো দিয়ে মায়ের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন,' জানালেন তিনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মার্কেস এই কাজটি করেছিলেন পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে, তিনি বিখ্যাত হওয়ারও অনেক আগে। কেন? রদ্রিগো বললেন, 'এসব চিঠিপত্র নিয়ে কে-ই বা মাথা ঘামায়? কিন্তু বাবা বোধহয় ঘামাতেন। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে সবকিছুই উন্মুক্ত। আর আমার মনে হয় কিছু জিনিস কখনোই জানতে না পারলেও ক্ষতি নেই।'
- অনুবাদ: মারুফ হোসেন