হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি: এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন
সোনালী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তাদের এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
নথিপত্র জাল করে সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের ঘটনায় আসামিদের সম্পৃক্ততার আলোকে এ রায় দেওয়া হয়। দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় তাদের এ দণ্ড দেওয়া হয়। একই ধারায় তাদের পাঁচ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ রায় দেন।
যে নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন: তানভীর মাহমুদ, তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও হলমার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক, আবদুল মতিন এবং তসলিম হাসান।
এর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ তাদের সঙ্গীদের অপরাধের যে মাত্রা, তাতে তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতায় তাদের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, মামলাটির ঘটনা ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।
২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুদকের সহকারী পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান মামলার তদন্তকাজ শেষ করেন বলে জানা গেছে।
মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ওরফে তাফসির, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ এবং সোনালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের ১১টি কোম্পানির নামে ভুয়া এলসি (ঋণপত্র) খুলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৭ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
এরপর ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।