৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া তানভীরের হাতে এত আংটি যে কারণে
ছবিটি দেখুন। তিনি হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ — পুলিশ প্রহরায় হুইলচেয়ারে বসা। তার দুহাতের দিকে তাকান। প্রায় সব আঙুলেই আংটি; কোনোটিই খালি নেই। দুটো আঙুলে আবার জোড়া আংটি। সবগুলোতে পাথর বসানো।
কৌতূহলোপদ্দীপক এ ছবি ধরে খোঁজ করতেই জানা যায়, তানভীর মাহমুদ অর্থ আত্মসাতের মামলায় জেলে যাওয়ার আগে মাত্র একটি সোনার আংটি পরতেন। কারাবন্দি থাকার সময় তার হাতের আংটির সংখ্যা বেড়ে যায়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হলমার্ক গ্রুপের ডিজিএম আব্দুর রশীদ।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগে তানভীর সাহেব হাতে শুধু একটা সোনার আংটি পরতেন। এর বাইরে তাকে আমরা আর কিছু পরতে দেখিনি।'
রশীদ হলমার্ক গ্রুপের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই গ্রুপটির সঙ্গে আছেন। তানভীর মাহমুদকে দীর্ঘদিন ধরেই ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
'উনি জেলে যাওয়ার পর বিভিন্ন বাটপার-প্রতারকেরা হয়তো তাকে বুঝিয়েছে যে, এগুলো [বিভিন্ন পাথরের আংটি] ব্যবহার করলে উনি মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন। এক ধরনের ভ্রান্ত আশা-বিশ্বাস থেকেই আসলে তিনি জেলে বসে এগুলো পরা শুরু করেছেন,' বলেন রশীদ।
বর্তমানে তানভীরের দুহাতের ৮টি আঙুলেই আংটি দেখা গেছে। জোড়া আংটি রয়েছে ডান হাতের মধ্যমা ও বাম হাতের তর্জনীতে। এসব আংটির কোনোটি মুক্তা, পান্না, রুবি, অ্যামেথিস্ট [পদ্মনীলা], ক্যাটস আই [বৈদূর্যমণি] কিংবা আকিক।
আজমেরী জেমস হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রত্নবিশারদ লিটন দেওয়ান চিশতীর কাছে এসব আংটির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সরাসরি না দেখে পাথর চেনা যায় না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তার [তানভীরের] হাতে পান্না, মুক্তা, অ্যামেথিস্ট, ক্যাটস আই, প্রবাল রয়েছে।'
তানভীর মাহমুদ কেন এতগুলো পাথর পরেছেন জিজ্ঞেস করলে লিটন দেওয়ান বলেন, 'তানভীর আংটি পরেছেন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে। মানুষ ভবন বানালে আস্তর দেয় না? মুক্তা ঠিক আস্তরের মতো কাজ করে।'
বিভিন্ন মুক্তার 'কার্যকারিতা' ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'অ্যামেথিস্ট মাথা ঠান্ডা রাখে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। পান্না পরলে ধৈর্যশক্তি বাড়ে। মুক্তা শরীর ঠান্ডা রাখে, মানে জ্বর ইত্যাদি থেকে রেহাই দেয়।'
তবে পাথরের সঙ্গে অন্যায় কাজের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে এ রত্নবিশারদ বলেন, 'যতকিছুই করেন, সুকর্মই ধর্ম। আংটি পরেও ঠিকঠাক কাজ না করলে বা ভালো কাজ না করলে তার জন্য সে পাথর কাজ করবে না।'
তানভীরের হাতে পরা এসব পাথরের মূল্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে আজমেরী জেমস হাউজের মূল্যায়ন অনুযায়ী, তানভীরের আঙুলে পরা পান্নার দাম এক হাজার টাকা, অ্যামেথিস্ট ৩০০–৪০০ টাকা আর মুক্তা ২০০–৩০০ টাকা হতে পারে। মানভেদে এ ধরনের পাথর আবার লাখ টাকারও হয়। নীলার দাম ৪০–৫০ লাখ টাকারও হতে পারে (তানভীরের হাতে নীলা আছে কি না ছবি দেখে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি)।
দেওয়ান লিটন চিশতীর মতে, পাথরগুলো 'কাজ করবে' ব্যক্তির চলাফেরা, কাজের ওপর ভিত্তি করে। তানভীরের যদি এখন মনোবল ঠিক থাকে, তবে কাজ করবে এসব আংটি,' বলেন তিনি।
তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল রায় শুনে আধা ঘণ্টা মাথা নিচু করে বিমর্ষমুখে বসে ছিলেন তানভীর-জেসমিন দম্পতি।
নথিপত্র জাল করে সোনালী ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক মো. আবুল কাশেম তাদেরকে পাঁচ কোটি টাকা করে জরিমানাও করেন।
উল্লেখ্য ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতা ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত।
মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ওরফে তাফসির, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ এবং সোনালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।