লক্ষ্মীপুরে তরুণদের উদ্যোগে ৬৫০-৬৭০ টাকায় গরুর মাংস
কম দামে মাংস বিক্রিতে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী সাড়া পড়েছে। কম দামে মাংস বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন এলাকার যুবকেরাও। বিভিন্ন এলাকায় তরুণ-যুবকরা একত্রিত হয়ে গ্রুপ তৈরি করে ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছেন।
৬৭০ টাকা দামে শুক্রবার (২২ মার্চ) লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ শহরের কলেজ গেইট এলাকায় মাংস বিক্রি শুরু করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। একই সময়ে কমলনগর উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজারে একই দামে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন মাংস ব্যবসায়ী খলিল।
অন্যদিকে, রোববার (২২ মার্চ) থেকে রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড, আল আকসা মাসজিদ মার্কেটে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি শুরু করবেন বলে এলাকাজুড়ে মাইকিং করেছেন স্থানীয় যুবকরা।
জেলার রামগঞ্জ উপজেলা শহরে ৬৭০ টাকায় মাংস বিক্রির উদ্যোক্তা ২ যুবক। যুবকদের মধ্যে আহমেদ কাউছার রামগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। অপর উদ্যোক্তা হলেন, ফুল ব্যবসায়ী আরমান চৌধুরী।
কী কারণে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন- জানতে চাইলে আরমান চৌধুরী জানান, গত ১৪ মার্চ তারিখে রামগঞ্জ পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী শহরে গরুর মাংসের মূল্য কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মেয়রের সিদ্ধান্তকে কোনো মাংস ব্যবসায়ী সম্মান দেখায় নি। উল্টো মেয়রের এ ঘোষণার পর মাংস ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। এখনও মাংস ব্যবসায়ীরা মাংস বিক্রি করছে না।
"তাই আমরা তরুণরা এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছি," বলেন তিনি।
তরুণ উদ্যোক্তা আহমেদ কাউছার জানান, "প্রথম দিন প্রায় ৫০০ ক্রেতার কাছে আমারা ১-২ কেজি হারে মাংস পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা মাংস ব্যবসা করতে চাই না। তবে বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজ চালু থাকবে।"
অন্যদিকে, রায়পুর উপজেলায় ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি শুরু করেছেন ১০ জন যুবক। এদের মধ্যে প্রধান উদ্যোক্তা কাজী কাউছার মাদরাসা শিক্ষকতার পাশাপাশি মসজিদে ইমামতী করেন। তিনি জানান, "ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে, আমাদেরকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাই আমরা এলাকার ১০জন যুবক মাংস বিক্রি করার জন্য গ্রুপবদ্ধ হয়ে একটা তহবিল গঠন করেছি। ৬৫০ টাকায় বিক্রয় শুরু করেছি। আশা করি সফল হবো।"
এদিকে, কমলনগর উপজেলার মাংস ব্যবসায়ী খলিল জানান, "দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছি। এবার দেখি মানুষের সেবা করা যায় কিনা। তবে হয়তো কম ব্যবসা হবে।"
শুক্রবার তিনি ৫টি গরুর মাংস বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, এর আগে গ্রামীণ বাজারে প্রতিদিন ১টি গরুর মাংস বিক্রি হতো। কিন্তু ৬৫০ টাকায় বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম দিনই ৫টি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, "লাভ কম হবে, তবে ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্য ব্যবসায়ীদের চাপ শুরু হয়েছে। আসলে ভালো কাজ করা কঠিন।"
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রায় সব বাজারে হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৯০০ টাকা এবং হাড়সহ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মাংসের এমন দামে নিম্ন আয়ের মানুষেরা গরুর মাংস কেনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে।
এদিকে, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এলাকার তরুণ উদ্যোক্তাদের এমন সাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।