ব্রিটিশবিরোধী টংক আন্দোলনের মুখ কুমুদিনী হাজংয়ের চিরবিদায়
ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন এবং হাজং বিদ্রোহের নেত্রী কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন। শনিবার (২৩ মার্চ) নিজ বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে বহেরাতলীতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের এই অন্যতম মুখ।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন কুমুদিনী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০২ বছর।
রোববার সকালে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর ঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব কুমুদিনী হাজং। তাকে কেন্দ্র করেই নতুন মোড় নিয়েছিল ব্রিটিশবিরোধী টংক আন্দোলন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ—অর্থাৎ নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল টংক বা খাজনা প্রথা। ওই অঞ্চলে কৃষকদের উৎপাদিত শস্যের উপর এই টংক দিতে হতো। কিন্তু এই টংকের পরিমাণ ছিল প্রচলিত খাজনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ফসল হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান খাজনা হিসেবে জমিদারকে দিতেই হতো। এত বেশি খাজনা দেওয়া দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
নিপীড়িত কৃষকেরা কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টংক প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ১৯৩৭ সালে শুরু হয় কৃষকদের এই আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায় ব্রিটিশ সরকার।
কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং ছিলেন টংক আন্দোলনের অন্যতম নেতা। একদিন লংকেশ্বরকে খুঁজতে তার বাড়িতে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ।
সেদিন ব্রিটিশ পুলিশ লংকেশ্বর হাজংকে খুঁজে না পেয়ে তার স্ত্রী কুমুদিনী হাজংকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে হাজং অধ্যুষিত গ্রামগুলো। ঘটনাস্থলে ছুটে যান টংক আন্দোলন নেত্রী রাসিমণি; তিনি এক পুলিশকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। পরে পুলিশের গুলিতে রাসিমণি শহীদ হলেন।
ওই ঘটনার পরই আরও জোরদার হয় টংক আন্দোলন এবং কুমুদিনী হাজং হয়ে ওঠেন এ আন্দোলনের অন্যতম প্রেরণার উৎস।
২০০০ সালে মারা যান কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজং। তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান লমিন হাজং আগেই মারা গেছেন। মেজো ছেলে অর্জুন হাজংয়ের সঙ্গে থাকতেন কুমুদিনী।
সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এছাড়া তিনি অনন্যা শীর্ষদশ (২০০৩), আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) পেয়েছেন।