কোনো রোহিঙ্গা আসেননি, বসে আছেন কর্মকর্তারা
ঘুমধুম আর কেরুণতলী ট্রানজিট পয়েন্টে এখনও আসেননি রোহিঙ্গারা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবার কথা থাকলেও এখনও এই দুই ট্রানজিট পয়েন্টে আসেননি তাদের কেউ। সকাল থেকেই সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, ইউএনএইচসিয়ার এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান তাঁরা করবেন বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গল ও বুধবার প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকায় থাকা ২৩৫ রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। কক্সবাজারের টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে মঙ্গল ও বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধিরা ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেন।
কিন্তু রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি আছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে প্রত্যাবাসনে কেউ রাজি হবেন না।
গত দু’দিন ধরে চার দফা দাবির একটি তালিকা সম্বলিত লিফলেট ক্যাম্পগুলোতে প্রচার করছে 'ভয়েস অফ রোহিঙ্গা' নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবিগুলো হল:
১. রোহিঙ্গারা আরাকানের স্থানীয় আদিবাসী এবং সে জন্য সংসদে আইন করে তাদের সেখানকার ন্যাটিভ স্ট্যাটাস বা স্থানীয় মর্যাদা পুনর্বহাল করতে হবে এবং এই আইনের আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি থাকতে হবে।
২. আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের 'সিটিজেন কার্ড' দিতে হবে। বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সিটিজেনশিপ কার্ডসহ স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়া নিতে হবে। আর একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় থাকা রোহিঙ্গাদের সিটিজেনশিপ কার্ড দিয়ে স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিতে হবে।
৩. রোহিঙ্গাদের তাদের নিজস্ব গ্রামে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে।
৪. আরাকানে রোহিঙ্গাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
বুধবার রাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে ব্রিফিং ও বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ব্রিফিংয়ের প্রাক্কালে ওই পরিষদের সদস্য যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম আলাদা টুইট বার্তায় বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক হতে হবে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে ও পরিস্থিতির বিষয়ে জানাতে হবে। রাখাইনে মানবিক সহায়তা কর্মীদের প্রবেশাধিকারও অপরিহার্য।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বর্বর অভিযান থেকে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
আজ ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এজন্য কাজ করছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।