ভাতা বাড়ানোর দাবিতে পোস্ট গ্রাজুয়েট ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে একযোগে সারা দেশের প্রায় সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা.
রোববার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে এই কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। আজ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে থাকলেও পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকেরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। ইন্টার্ন ও পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা।
সারাদেশের আনুমানিক ৭ হাজার পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং সাড়ে তিন হাজার ইন্টার্ন ডাক্তার কর্মবিরতি পালন করছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বর্তমান ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং ইন্টার্নদের ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকাসহ চার দফা দাবিতে তাদের এই ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "সারাদেশের ইন্টার্ন ও পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকেরা একযোগে কর্মবিরতি পালন করছে। রবিবার আমরা সচিবলয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলাম, মাননীয় মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু ভাতা বাড়ানো হবে কিনা বা কবে হবে– সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি, তাই আমরা কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্তে অটল আছি।"
রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতে গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ২৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও এক হাজারের বেশি পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসক বিভিন্ন শিফটে ৪২টি ডিপার্টমেন্টে ডিউটি করেন।
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীরা। কম জনবল দিয়ে প্রায় তিন গুণ ভর্তি থাকা রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। অন্যদিকে রোগীদের অভিযোগ, গতকাল শনিবার রাত থেকে তারা ভালো সেবা পাচ্ছেন না।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক চিকিৎসক মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার, কিন্তু রোগী ভর্তি আছে প্রায় এক হাজার ৫০০ মত। এত রোগী সামাল দিতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা থাকলে রোগী সামাল দেওয়া অনেকটা সহজ হয়। তাদের কর্মবিরতিতে নিয়মিত চিকিৎসকদের রোস্টার করে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নরা কর্মবরতি পালন করছেন। শনিবার কেউ ডিউটি করেনি। রোববার দুই-একজন হাসপাতালে গেছেন, তবে ডিউটি করেনি বলে জানা গেছে।
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে রাজপথে নেমেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পোস্ট গ্রাজুয়েট ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
রোববার সকালে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ যৌথভাবে চমেক হাসপাতালের মূল ফটকে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক আল আমিন ইসলাম বলেন, 'এক সপ্তাহ ধরে আমরা সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছি। সর্বশেষ আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের থাকার কথা ছিল হাসপাতালের ওয়ার্ডে, অথচ আমাদের থাকতে হচ্ছে রাজপথে।"
"আমরা সপ্তাহে সাতদিন, মাসে ৩০দিন, বছরে ৩৬৫ দিন ডিউটি করি। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো কর্মঘণ্টা নেই। অথচ আমাদের যে ভাতা দেওয়া হয়, সেটা অমানবিক," যোগ করেন তিনি।
বকেয়া বেতন পরিশোধ ও বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রোববার থেকে ৪৮ ঘন্টা কর্মবিরতি শুরু করছেন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।