ব্রিটিশ মুলুকে ক্যারিবীয় দাপট
'পাঁচ দিন টেকা যাবে না, জিততে হবে চারদিনেই'- ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এমনই পরামর্শ দেন দেশটির কিংবদন্তি ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা। সাউদাম্পটনের রোজ বলে তেমনই হলো। প্রথম দিনের বেশিরভাগ অংশ বৃষ্টির পেটে চলে গেলেও সেটা বাধা হয়নি ক্যারিবীয়দের জয়ে। চার দিনেরও কম সময়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ব্রিটিশ তল্লাটে বিজয় নিশান গাড়লো ক্যারিবিয়ানরা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের বেশিরভাগ অংশে দাপট দেখিয়েছে ক্যারিবীয়রাই। চারদিন ধরে ব্যাটে-বলে রীতিমতো শাসন করে গেছেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, ম্যাচ সেরা শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, জার্মেইন ব্ল্যাকউডরা। যদিও ৪ উইকেটের ফল দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দুঃস্বপ্নের মতো শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দলীয় ৭ রানের মধ্যেই দুজন ব্যাটসম্যানকে হারায় তারা। ১০০ রান পাড়ি দিতে আরও দুজন সাজঘরে। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে টেনে তুলেছেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বেজে গেলেও ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ছিলেন অবিচল। ৯৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন তিনি।
শেষ ৫ টেস্টের মধ্যে তিনটিতেই ইংল্যান্ডকে হারালো ওয়েস্ট ইন্টিজ। যদিও সর্বশেষ ম্যাচে গত বছর ঘরের মাঠেই ইংলিশদের কাছে ২৩২ রানে হেরেছিল জেসন হোল্ডারের দল। তার আগের দুই টেস্টে জয় পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে একটি ছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে।
উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ও গ্যাব্রিয়েল শ্যাননের বোলিং তোপে ২০৪ রানে প্রথম ইনিংস শেষ হয় ইংল্যান্ডের। জবাবে ৩১৮ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসেই ১১৪ রানের লিড পেয়ে যায় সফরকারীরা। এই রান তুলে লিড নিতে গিয়ে হিমশিমই খেতে হয় বেন স্টোকসের দলকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৩ রান করে উইন্ডিজকে ২০০ রানের লক্ষ্য দেয় স্বাগতিকরা।
লক্ষ্য বিশাল না হলেও চাপ ঠিকই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর। যে চাপ নিতে পারেনি দলটির টপ অর্ডার। ৭ রানের মধ্যেই ফিরে যান ওপেনার ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও শামার ব্রুকস। মাঝে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ওপেনার জন ক্যাম্পবেল। সব মিলিয়ে শুরুতেই মহা সঙ্কটে পড়ে যায় ক্যারিবীয়রা।
এই সঙ্কট বাড়ে ২৭ রানের মাথায় শেই হোপের বিদায়ে। ইংলিশ পেসার মার্ক উড তার স্টাম্প উপড়ে নেন। ২৭ রানে চারজন (চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ক্যাম্পবেলসহ) ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে উইন্ডিজ তখন দিশেহারা। এমন সময় আলোক বর্তিকা হাতে দেখা দেন ব্ল্যাকউড। সঙ্গে পান রস্টন চেসকে।
এই জুটি উইন্ডিজকে ১০০ রানে পৌঁছে দেয়। দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছুঁতেই ইংলিশ পেসার জফরা আর্চারের তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে বিদায় নেন ৩৭ রান করা চেস। এরপর মূলত ব্ল্যাকউড একাই লড়ে গেছেন। ২০ রান করে মাঝে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন শেন ডাউরিচ।
জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে থামতে হয় ব্ল্যাকউডকে। ফেরার আগে ১৫৪ বলে ১২টি চারে ৯৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন তিনি। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ক্যাম্পবেলকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের পথে বাকি কাজটুকু সারেন অধিনায়ক হোল্ডার। ক্যাম্পবেল ৮ ও হোল্ডার ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ইংলিশ পেসার আর্চার ৩টি ও অধিনায়ক স্টোকস দুটি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: পঞ্চম দিন শেষে
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২০৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৩১৮
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ৩১৩
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস (লক্ষ্য ২০০): ৬৪.২ ওভারে ২০০/৬ (রস্টন চেস ৩৭, জার্মেইন ব্ল্যাকউড ৯৫, শেন ডাউরিচ ২০, জেসন হোল্ডার ১৪*; জফরা আর্চার৩/৪৫, বেন স্টোকস ২/৩৯)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: শ্যানন গ্যাব্রিয়েল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে