ধামরাইয়ে গ্যাস লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধ একই পরিবারের ৪ সদস্যের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু
ঢাকার ধামরাইয়ের পৌর এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে গত ২৭ মার্চ ভোররাতে গ্যাস লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ একই পরিবারের ৪ সদস্যের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দগ্ধ বাকি একজনের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তরিকুল ইসলাম।
নিহতরা হলেন: অবসরপ্রাপ্ত সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫০) ও তাদের উচ্চ মাধ্যমিকপড়ুয়া ছেলে আল হাদী সোহাগ (১৮)।
নুরুল ইসলাম ধামরাইয়ের ধানতারা এলাকার বাসিন্দা। তিনি পরিবার নিয়ে ধামরাইয়ের পৌর এলাকা মোকামটোলা এলাকায় ভাড়া করা একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।
গতকাল ৩১ মার্চ দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় এবং সর্বশেষ আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইন্সটিটিউটে একই পরিবারের ওই ৩ সদস্যের মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে সর্বপ্রথম গতকাল বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুফিয়া বেগম মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আজ ভোর ৪টার দিকে নুরুল ইসলাম ও সকাল ১১টার দিকে তাদের ছেলে আল হাদী সোহাগ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তরিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, নিহত তিনজনের মধ্যে নুরুল ইসলামের শরীরের ৪৮ শতাংশ, সুফিয়া বেগমের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং সোহাগের শরীরের ৪৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
বিস্ফোরণে পরিবারটির একমাত্র জীবিত সদস্য নুরুল ইসলাম ও সুফিয়া বেগম দম্পতির মেয়ে নিশরাত জাহান সাথীর শরীরের ১৬ শতাংশ দগ্ধ হয়। তবে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানান এই চিকিৎসক।
নিশরাত জাহান সাথী আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা টিবিএসকে বলেন, 'নুরুল ইসলাম সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন। ১ মাস আগে তিনি চাকুরি থেকে অবসর নেন। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুরে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।'
এর আগে গত বুধবার (২৭ মার্চ) ভোররাত ৩টার দিকে ধামরাইয়ের পৌর এলাকা মোকামটোলার একটি বহুতল ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিকেজ হয়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, সেদিন সেহরির কিছু সময় আগে ভোর ৩টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের শব্দ পায় স্থানীয়রা। পরে ওই ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ফ্ল্যাটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি দগ্ধদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাদের রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়ে।
ধামরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন অফিসের সোহেল রানা ঘটনার পর টিবিএসকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করেছিলেন, সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিকেজ হয়ে ঘরে গ্যাস জমে ছিল, যা হয়তো কোনোভাবে আগুনের সংস্পর্শে আসায় বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে ফ্ল্যাটের সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়নি।