কালবৈশাখী ঝড়ে বরিশাল বিভাগ ও বাগেরহাটে নিহত ১০
বরিশাল বিভাগে ও বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড়ে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝালকাঠিতে তিনজন, পটুয়াখালীর বাউফলে দুইজন, পিরোজপুরে দুইজন, ভোলার লালমোহন উপজেলায় দুইজন ও বাগেরহাটের একজন রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (৭এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিরোজপুরে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকা। এ সময় ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছচাপায় রুবি বেগম (২৩) নামে এক নারী মারা যান।
রুবি বেগম পিরোজপুর পৌরসভার হুলারহাট এলাকার মিরাজ সরদারের স্ত্রী। এ ঘটনায় তার মেয়ে মেহজাবিনসহ (৬) ১৩ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়াও ঝড় থেমে যাওয়ার পর একই উপজেলার শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়নের রানিপুর গ্রামের একটি খাল থেকে অনিল পাল (৮৩) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কানাই লাল পালের ছেলে।
শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি টিবিএসকে বলেন, 'সকালে ঘর থেকে বের হয়ে ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে পড়েন। ধারণা করছি দমকা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে পাশের নলবুনিয়া খালে ফেলে। ঝড় শেষে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ওই খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি জানান, রবিবার সকালে ঘর থেকে বের হয়ে অনিল পাল ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে পড়েন। ঝড়ের কারণে সম্ভবত তিনি খালের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। ঝড় থামার পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রমজান আলী বলেন, 'ঝড়ের পরে রুবি বেগম নামে এক নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মেহজাবিনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পিরোজপুরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিহত পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করে পরে জানানো হবে।
এদিকে ঝালকাঠির সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন ও কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে ঝড়ের সময়ে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন, শেখেরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগম, আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের মৃত আলম গাজীর স্ত্রী হেলেনা বেগম ও পোনাবালিয়া এলাকার মো. বাচ্চুর ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া আক্তার ঈশান।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, 'ঝালকাঠিতে ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে দুই উপজেলায় এক শিশু ও দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা হবে।'
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ঝড়ে রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম (৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে- বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে সে মারা গেছে।
আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারজান বলেন, 'রাতুলকে হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা গেছে। তার শরীরে বজ্রপাতে ঝলসানোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে সুফিয়া বেগম মারা যান।'
তিনি জানান, ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেগুলো সরানো হচ্ছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে ঝড়ে ভোলার লালমোহন উপজেলায় এক বৃদ্ধসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, হারিস (৬৮) ও বাচ্চু (৪০)। বাচ্চু বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়াও ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ বলেন, 'বিভাগের উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বরিশাল জেলায় ১৫.২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি অস্বাভাবিক ছিল। আমরা সেই রিপোর্ট এখনো পাইনি।'
অন্যদিকে ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এজন্য পিরোজপুর ও বরগুনার তথ্য অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, বিভাগের ৪২টি উপজেলার মধ্যে ৩০টিরও বেশি উপজেলায় কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে। এতে বহু সড়কে গাছ উপড়ে পড়েছে। এছাড়াও গাছ পড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও বাগেরহাটে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। ঝড়ে জেলায় প্রায় দেড়শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির নাম লিকচান সরদার (৩৫)। তিনি জেলার কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন জানান, যখন ঝড় শুরু হয়, তখন লিকচান জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তিনি প্রাণ হারান।
ঝড়ের কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।