‘অবিলম্বে’ ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানালেন জার্মানির সরকারি চাকরিজীবীরা
জার্মান সরকারের প্রতি 'ইসরায়েলি সরকারকে অবিলম্বে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার' আহ্বান জানিয়ে চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ ও অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রীদের চিঠি দিয়েছেন জার্মানির সরকারি চাকরিজীবীদের একাংশ।
তাদের লেখা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইসরায়েল গাজায় এমন সব অপরাধ করছে যা আন্তর্জাতিক আইনের এবং সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।' আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যামূলক' বলে বিশ্বাসযোগ্য বলে যে রুলিং দিয়েছেন, তার উল্লেখও করা হয়েছে বিবৃতিতে।
পাঁচ-পৃষ্ঠার ওই বিবৃতির আয়োজকদের তথ্যানুসারে, প্রায় ৬০০ সরকারি চাকরিজীবী এই উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে এই সমর্থন আদায় করা হয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিতেও অনুরোধ করা হয়েছে জার্মান সরকারকে। সেইসঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালে ইসরায়েলে ৩৫৪ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন দেয় জার্মানি, যা আগের বছরের তুলনায় দশগুণ বেশি। দেশটি ইসরায়েলের ৩০ শতাংশ সামরিক অস্ত্রের সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য থেকে।
গবেষকরা দেখেছেন, ইসরায়েলের মোট অস্ত্রের ৯৯ শতাংশই জোগান দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। জার্মানি ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী।
গত সপ্তাহে ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এ বিবৃতি পাঠিয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে 'স্পর্শকাতর বিষয়'-এর জন্য তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি।
আল জাজিরা দুজন উদ্যোক্তাকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তাদের একজন সিনিয়র ব্যবস্থাপক।
ওই সিনিয়র ব্যবস্থাপক বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে এক ধরনের 'ভয়ের অবস্থা' বিরাজ করছে। তিনি তার '১৫ বছরের চাকরিজীবনে কখনও এমন কিছু দেখেননি'।
মন্ত্রীরা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সমর্থন দিচ্ছেন, এ অভিযোগ তোলার পর থেকেই ওই ব্যবস্থাপককে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়। একজন ডিরেক্টর অভ ডেভেলপমেন্ট ইমেইলের মাধ্যমেও এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করতে নিষেধ করেন।
ওই ব্যবস্থাপক একাই সহকর্মী এবং পেশাজীবী নেটওয়ার্ক থেকে ১০০-র বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই যেন নরক যন্ত্রণার মধ্যে আছি'।
জানা গেছে, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে সমর্থন দেওয়া চাকরিজীবীদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মী থেকে শুরু করে অল্পবয়সি তরুণী এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও আছেন।
আজ (৮ এপ্রিল) সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট লিঙ্কডইনে বিবৃতিটি প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এদিন আন্তর্জাতিক আদালতে আনা নিকারাগুয়ার অভিযোগের জবাব দেবে জার্মানি। নিকারাগুয়ার অভিযোগ, ইসরায়েলকে দেওয়া জার্মানির সহায়তার ফলে গণহত্যা কনভেনশনের লঙ্ঘন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলকে দেওয়া পশ্চিমা সমর্থনের বিরুদ্ধে ক্রমেই আওয়াজ তুলছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারি চাকরিজীবীরা এ বিষয়ে 'ট্রান্সআটলান্টিক বিবৃতি' দেন।