ইসরায়েলি বিমান হামলায় বৈরুতে অন্তত ২০ জন নিহত
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় শনিবার (২৩ নভেম্বর) ভোরে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ বাস্তা এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। একে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ হায়দারকে হত্যার প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। খবর বিবিসি'র।
শনিবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এই হামলা চালানো হয়। এতে আটতলা একটি আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হামলায় একটি শক্তিশালী 'বাংকার বাস্টার' বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, যা অতীতে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার জন্যও ব্যবহৃত হয়েছিল।
উদ্ধারকর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে উদ্ধার হওয়া দেহাংশের ডিএনএ পরীক্ষা করে মৃতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।
আলিফ নাসার নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, 'আমার পুরো পরিবার এই বিস্ফোরণের শিকার। ঘরের জানালা আর কাঁচ আমাদের গায়ের ওপর পড়ে। এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একজন মানুষকে টার্গেট করতে এতগুলো মানুষের জীবন ধ্বংস করা কি ন্যায্য?'
হিজবুল্লাহর সংসদ সদস্য আমিন শেরি জানিয়েছেন, হামলার সময় ওই ভবনে সংগঠনের কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। হামলার লক্ষ্য মোহাম্মদ হায়দারের ভাগ্য এখনও অজানা। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি
শনিবার আরও হামলা চালানো হয় দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়াহ এলাকায়, যেখানে হিজবুল্লাহর সদর দফতর রয়েছে। একই দিনে পূর্ব লেবাননের বালবেক শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে চার শিশু ছিল।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান আরও বাড়িয়েছে। ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে সমঝোতা আদায়ের কৌশল হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত শেষ করতে নতুন আলোচনার উদ্যোগে সামান্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত অ্যামোস হকস্টেইন এই সপ্তাহে লেবানন ও ইসরায়েলে সফর করেছেন। তার লক্ষ্য ছিল একটি মার্কিন খসড়া চুক্তি এগিয়ে নেওয়া।
লেবানন জানায়, যেকোনো সমঝোতা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের ভিত্তিতে হতে হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ব্লু লাইন ও লিটানি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা ও অস্ত্র প্রত্যাহার করতে হবে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, এই প্রস্তাব কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে লেবানন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। আলোচনা সত্ত্বেও পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত রয়েছে।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে লেবাননে ৩,৬৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১৫,৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ। অন্যদিকে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হিজবুল্লাহর হামলায় ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।