১৮০ সন্তানের বাবা তিনি, ব্রিটিশ স্পার্ম ডোনার জানালেন নিজের একাকিত্বের কথা!
১৩ বছর ধরে স্পার্ম ডোনেট (শুক্রাণু দান) করছেন যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসেলের এক ব্যক্তি। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সংবাদমাধ্যম মেট্রোর তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক প্রজনন, আংশিক গর্ভধারণ ও কৃত্রিম গর্ভধারণসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে এ পর্যন্ত ১৮০ শিশুর বাবা হয়েছেন তিনি।
নিজের উপাধি প্রকাশ করতে না চাওয়া ৫২ বছর বয়সি জো ডোনার জানান, তার শুক্রাণুতে অনেক নারী সন্তানের মুখ দেখলেও তিনি নিজে ভুগেছেন একাকিত্বে।
স্পার্ম ডোনার হিসেবে কাজ করার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে বলে জানান তিনি। তিনি কোনও পূর্ণকালীন চাকরি করতে পারেন না কিংবা কারও সাথে কোনও প্রেমের সম্পর্কেও জড়াতে পারেন না।
জো দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'রোমান্সের জন্য কোনও সময় নেই। আপনাকে সবসময় তৈরি থাকতে হবে শুক্রাণু নিয়ে, যদি কোনও নারী হঠাৎ ডিম্বস্ফোটনের জন্য তৈরি হন।'
স্পার্ম ডোনেটের জন্য তাকে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করতেন তিনি নাকি কেবল যৌনতার জন্য এসব কাজে জড়িয়েছেন।
জো হতাশার সুরে বলেন, 'আমার খারাপ লাগে যখন কাউকে বলতে শুনি আমি কেবল যৌন মিলনের উপায় হিসেবে শুক্রাণু দান করি, এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। আমি প্রাকৃতিক ভাবে শুক্রাণু দান করি।'
জো জানান, মহিলাদের সাথে তার মিথস্ক্রিয়া খুব কমই হয়, সাধারণত মাসে একবার বা দু'বার ঘটে। তার একমাত্র লক্ষ্য হলো, তার শুক্রাণুর কার্যকারিতার কারণে নারীদের গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা।
জো জানান, শুক্রাণু দাতা হিসেবে কাজ করার কারণে তিনি ব্যক্তিগত প্রেমের জীবন থেকে বঞ্চিত ও ভোগেন একাকিত্বে ও নিঃসঙ্গতায়। তিনি বলেন, 'আমি নিঃস্বার্থ উপায়ে অন্যকে সাহায্য করার জন্য আমার নিজের প্রেমের জীবন ত্যাগ করেছি। এমনকি আমি কারও কাছ থেকে একটি চুম্বন বা আলিঙ্গনও পাই না।'
জো ডোনার তার সমালোচকদের 'কিবোর্ড যোদ্ধা' হিসেবে সম্বোধন করেন। তার মতে ইন্টারনেটে কিবোর্ডের পেছনে বসে অজ্ঞাতভাবে অন্যের সমালোচনা করা খুব সহজ, কিন্তু তা একজন ব্যক্তির জীবনকে অমানবিক করে তুলতে পারে।
তিনি জানান, মানুষ প্রায়শই অনলাইনে তাকে নিয়ে হেয়কারক মন্তব্য করে, কারণ তারা তাকে সত্যিকারের ব্যক্তি হিসেবে মনে করে না। তিনি বিশ্বাস করেন যে মানুষ যদি তার সাথে সামনাসামনি দেখা করত তবে তারা আর তাকে নিয়ে একই কথা বলত না। তিনি নেতিবাচকতার জন্য তাদের ঈর্ষাকে দায়ী করেন। তার মতে লোকেরা যখন অন্য কাউকে আপাতদৃষ্টিতে সফল হতে দেখে, তখনই তাকে কোনও না কোনও ভাবে আঘাত দেয়ার চেষ্টা করে।
জো আরও জানান, এ কাজের জন্য নিজে আর্থিক সীমাবদ্ধতায় থাকলেও তিনি এ কাজকে ভালোবাসেন। জো বলেন, 'ধনী হওয়ার অনেক পন্থা আছে। টাকা ছাড়াও ধনী হওয়া যায়। জীবনে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দিক দিয়ে আমি অনেক ধনী, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেছি আমি। একটি অফিসে আট ঘণ্টা চাকরি করে পয়সা কামানোর চেয়ে একজন নিঃসন্তান নারীকে সন্তান উপহার এবং তার পারিবারিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা বেশি আত্মতৃপ্তির।'
'ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাবা' হিসেবে পরিচিত জো বছরের পর বছর ধরে ১৮০ সন্তানের মধ্যে মাত্র ৬০ জনের সঙ্গে দেখা করেছেন।
নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, জো জানিয়েছেন তিনি নারীদের গর্ভবতী হতে সাহায্য করতে সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন