ইরান–ইসরায়েল: জেনে নিন কার বিমানবাহিনীর ভান্ডারে কী আছে
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলায় সাত ইরানি কর্মকর্তা নিহতের পর গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রতিশোধমূলক পালটা হামলা চালায় তেহরান। সে হামলার জবাবে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে ইরানের একটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এ দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও হামলা-পালটা হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের বিমানবাহিনী ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
ইরান
ইরানি বিমানবাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ৩৭ হাজার। কিন্তু কয়েক দশকের স্যাংকশনের কারণে দেশটি উচ্চপ্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম খুব বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ [আইআইএসএস]।
ইরানের কাছে কেবল কয়েক ডজন সক্রিয় আক্রমণকারী বিমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেমন আছে রুশ যুদ্ধবিমান, তেমনি ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা কিছু পুরোনো মার্কিন বিমানও রয়েছে।
আইআইএসএস-এর তথ্যমতে, তেহরানের সংগ্রহে রয়েছে ৯টি এফ-৪ ও এফ-৫ যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন, রাশিয়ার সুখোই-২৪-এর একটি স্কোয়াড্রন ও কয়েকটি মিগ-২৯, এফ-৭ ও এফ-১৪ যুদ্ধবিমান।
পাইলট ছাড়াই লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে বিস্ফোরিত হবে – এমন বিমানও আছে ইরানের কাছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইরান কয়েক হাজার ড্রোনের মালিক। পাশাপাশি ইরানের ভান্ডারে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণযোগ্য মিসাইল রয়েছে।
এগুলোর কোনো কোনোটি আধাটনের মতো ওয়ারহেড বহন করতে পারে। তবে ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম এমন মিসাইলের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে ধারণা করেন বিশ্লেষকেরা।
আত্মরক্ষার জন্য ইরান রাশিয়া ও দেশে নির্মিত আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে।
২০১৬ সালে রাশিয়া থেকে এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করে ইরান। এ ব্যবস্থায় রয়েছে দীর্ঘপাল্লার ভূমি–আকাশ মিসাইল যেগুলো বিমান ও ব্যালিস্টিক মিসাইলসহ একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একইসঙ্গে পালটা আক্রমণ চালাতে সক্ষম।
এছাড়া ইরান নিজেরা বাবর-৩৭৩ ভূমি–আকাশে ব্যবহারযোগ্য মিসাইল তৈরি করেছে। পাশাপাশি আরও উদ্ভাবন করেছে সায়াদ ও রাদ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
আইআইএসএস-এর গবেষণা ফেলো ফাবিয়ান হিঞ্জ বলেন, 'ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বড় কোনো সংঘাত শুরু হলে ইরান খুব সম্ভবত অনিয়মিত সাফল্যের দিকে মনোযোগ দেবে। ইসরায়েলের মতো তাদের সর্বাঙ্গীণ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই।'
ইসরায়েল
যুক্তরাষ্ট্রের কল্যাণে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী বেশ অগ্রসর; এটির কাছে কয়েকশ এফ-১৫, এফ-১৬ ও এফ-৩৫ মাল্টিপারপাস যুদ্ধবিমান রয়েছে। গত সপ্তাহে ইরানের নিক্ষিপ্ত ড্রোন ভূপাতিত করতে এসব বিমান ভূমিকা রেখেছিল।
ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর দীর্ঘপাল্লার বোমারু বিমান নেই। তবে কিছু বোয়িং ৭০৭ বিমানকে পরিবর্তন করে রিফিউয়েলিং ট্যাংকারে পরিণত করেছে এটি। ফলে এর জঙ্গিবিমানগুলো দূরের লক্ষ্যবস্তুতে গিয়েও হামলা চালিয়ে ফিরে আসতে পারবে।
ইসরায়েলে পাইলটবিহীন হেরন ড্রোন একটানা ৩০ ঘণ্টারও বেশি উড়তে সক্ষম। এছাড়া ডেলিয়াহ মিসাইলের (লয়টারিং মিউনিশন) পাল্লা মাত্র ২৫০ কিলোমিটার হলেও চাইলে বিমানবাহিনী এটিকে ইরানের সীমান্তের কাছাকাছি এসে নিক্ষেপ করতে পারে।
ধারণা করা হয়, ইসরায়েল দীর্ঘপাল্লার ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণযোগ্য মিসাইল তৈরি করেছে। তবে দেশটি কখনো তা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে সহায়তায় বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে ইসরায়েলে। এটি ব্যবহার করে ইরানের দীর্ঘপাল্লার ড্রোন ও মিসাইল ভূপাতিত করার সক্ষমতা রয়েছে দেশটির।
তেল আবিবের অ্যারো-৩ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মহাশূন্যে ব্যালিস্টিক মিসাইলকে প্রতিহত করতে পারে। তার চেয়ে কম উচ্চতায় আগত ক্ষেপণাস্ত্রে আঘাত হানতে পারে অ্যারো-২।
এছাড়া ইসরায়েলের রয়েছে ডেভিড স্লিং ও আয়রন ডোম। প্রথমটি ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ক্রুজ মিসাইল ভূপাতিত করতে ব্যবহার করে দেশটি। অন্যদিকে স্বল্প পাল্লার আয়রন ডোম রকেট ও মর্টারের বিরুদ্ধে যেমন কাজ করে, তেমনি অ্যারো বা ডেভিড স্লিং থেকে পার পাওয়া মিসাইলকেও প্রতিহত করতে সক্ষম এটি।
লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড স্ট্র্যাটেজিক ইনস্টিটিউট-এর গবেষণা ফেলো সিদ্ধার্থ কৌশা বলেন, '১৩ এপ্রিল ইরানের আক্রমণের সময় ভালো সক্ষমতা দেখিয়েছিল ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসমূহ।'
তিনি উল্লেখ করেন, ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই কিছু লক্ষ্যবস্তু, বিশেষ করে ড্রোন ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে, ফলে বেশি লক্ষ্যবস্তু সামলাতে হয়নি ইসরায়েলের। তিনি বলেন, ইসরায়েল ইরানের হামলার আগে প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে।