মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো রাশিয়ার
মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া।
সব দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে মহাকাশ ব্যবহার করতে ও মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে।
উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবনায় নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ টি দেশই পক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া ভেটো দিয়েছে এবং চীন কোনো ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের খসড়া প্রস্তাবে ৬০টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে আন্তঃআঞ্চলিক সমর্থন পেয়েছে।
প্রস্তাবে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে ১৯৬৭ সালের মহাকাশ চুক্তি অনুযায়ী, পৃথিবীর কক্ষপথে পরিকল্পিত পারমাণবিক অস্ত্র বা গণবিধ্বংসী অন্যান্য অস্ত্র তৈরি না করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি রাশিয়া স্যাটেলাইট ধ্বংস করতে সক্ষম এমন একটি পারমাণবিক ডিভাইস তৈরির চেষ্টা করছে। তবে এ দাবি প্রত্যাখান করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া জাতিসংঘের প্রস্তাবকে একটি 'নোংরা প্রদর্শনী' এবং প্রস্তাবের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তৈরি করা 'খামখেয়ালি চাল' বলে বর্ণনা করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিশ্চিত করেন, রাশিয়া স্যাটেলাইট বিধ্বংসী সক্ষমতা অর্জন করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে পরিচিত তিনটি সূত্র পরে সিএনএনকে জানায়, এই অস্ত্র বিস্ফোরিত হলে ব্যাপক শক্তির তরঙ্গ তৈরি করে স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করতে পারে।
ভোটাভুটির আগে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, ওই প্রস্তাবে যদি রাশিয়া ভেটো দেয় তার মানে তারা কিছু লুকাচ্ছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বুধবার ভোটাভুটির পর তার বক্তব্যে বলেন, 'আপনারা যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে কেন এমন একটি প্রস্তাব সমর্থন করবেন না। আপনারা কী কিছু লুকাচ্ছেন? এটা বিস্ময়কর এবং এটি লজ্জাজনক।'
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভোট থেকে বিরত থাকার জন্য নিন্দা জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি ও রীতিনীতির প্রতি প্রতিশ্রুতির চেয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি অগ্রাধিকার দেয় চীন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।
আর রাশিয়ার পারমাণবিক মহাকাশ অস্ত্রের সম্ভাবনা নিয়ে হোয়াইট হাউসের মন্তব্য সেই উদ্বেগকে আরও গভীর করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অস্ত্র স্পেসএক্সের স্টারলিংকের মতো স্যাটেলাইটগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে, যা ইউক্রেন সফলভাবে রুশ সেনাদের মোকাবেলায় ব্যবহার করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সূত্র বলেছে যে এই ধরনের অস্ত্র নিশ্চিতভাবে রাশিয়ার জন্য 'শেষ অস্ত্র' হবে— কারণ এটি রাশিয়ান স্যাটেলাইটগুলোরও একই ক্ষতি করবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মার্চে বলেছেন, রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি দেখা দিলে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
তিনি মহাকাশের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট উন্নয়ন এবং তাদের পর্যাপ্ত তহবিল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সহ মহাকাশ প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্বের ওপরও জোর দিয়েছিলেন।
গত বছর প্রতিবেশী মিত্র বেলারুশে ট্যাকটিক্যাল পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করেন পুতিন। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলো রক্ষায় ট্যাকটিক্যাল পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন