পর্যটক নেই, সবুজ ঘাসে ঢেকেছে চত্বর
বান্দরবান এখন পর্যটকশূন্য। কোথাও নেই পর্যটকের আনাগোনা। এমন সময় পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল চত্বর ঢেকেছে সবুজ ঘাসে। দু'মাস আগেও যেটি ছিল ইট বিছানো কেবল ছোট্ট একটি মাঠ। তবে বেশি লম্বা হওয়ার আগেই ঘাসগুলো কেটে ফেলা হয়। আশঙ্কা; এভাবে কেটে না রাখলে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে উঠতে পারে শহরের পাশে জনপ্রিয় এ পর্যটন কেন্দ্রটি।
নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখান থেকে দেখা যায় গোটা বান্দরবান শহরকে। উপভোগ করা যায় প্রাকৃতির সৌন্দর্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০ ফুট উচ্চতায় এ পাহাড়ে চূড়ায় ছোঁয়া যায় মেঘের স্পর্শও। ফলে সারা বছর পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের ভিড়ে সরগরম থাকত নীলাচল। কিন্তু বর্ষার সময় এ পর্যটন কেন্দ্র এখন বুনো লতা ও ঘাসে ভরা।
শুধু নীলাচল নয়, জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অবস্থা একই রকম। তিন মাসের অধিক সময় পর্যটকশূণ্য। তাই মেঘলা, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক এবং নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে ঝুলছে তালা।
নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে উলাফো চাক নামে এক কর্মচারী জানান, চত্বরে ঘাস উঠে লম্বা হয়ে যাচ্ছে। বার বার কেটে ফেলতে হয়। না হলে একসময় জঙ্গলের মত দেখাবে। কেটে ছোট রাখলে বেশি সুন্দর দেখায়।
''পর্যটকের উপস্থিতি থাকলে এই পরিবেশ দেখা যেত না। প্রতিনিয়ত লোকজনের পায়ের চাপে ঘাস বড় হওয়ার সুযোগ পেত না। করোনাভাইরাসের কারনে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।''
উলাফো চাক বলেন, বর্ষাকালে টানা বৃষ্টিতে কিছুটা সবুজ ঘাস জন্মে। তবে বেশি ঘন ও লম্বা হওয়ার সময় পায় না। সবসময় পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা থাকত। এবার চত্বরে ঘাস উঠে সবুজ হয়েছে। আগে কখনও এমন হয়নি।
গুঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ও রতন পাল নামে আরও দুই জন কর্মচারী বলেন, পাঁচ বছর ধরে এখানে কাজ করি। কোনো সময় মূল চত্বরে ঘাস কাটাতে হয়নি। লোকজনের চলাচলে ঘাস বেড়ে উঠতে পারত না। অথবা ঘাস থাকলেও পায়ের চাপে এমনিতে মরে যেত।
স্বাভাবিক সময় বর্ষাকালেও পর্যটক থাকত জানিয়ে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের কাউন্টারের টিকেট সরবরাহকারী আদীপ বড়–য়া মুঠোফোনে জানান, বর্ষা হলে কি হবে? বৃষ্টির সময় পাহাড়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা এবং স্থানীয় লোকজন ছুটে আসত। সব মিলিয়ে আগে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টিকিট বিক্রি হত।
তবে পর্যটন ব্যবসা সংশিষ্টরা বলছেন, হোটেল-মোটেল বন্ধ এবং পর্যটক না থাকায় প্রতিদিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক না হলে এ জেলার একমাত্র পর্যটন শিল্পখাতটি আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
শহরের কাছে মেঘলায় অবস্থিত হলিডে ইন রিসোর্টের পরিচালক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে মার্চ থেকে তার রিসোর্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে ওয়াইজংশন এলাকায় গড়ে উঠেছে সাইরু রিসোর্ট। সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটক থাকত ব্যয়বহুল এ রিসোর্টে।
রিসোর্টটির ম্যানেজার মোস্তফা কামাল জানান, সাইরুতে মোট ২৭টি কক্ষ রয়েছে। একশ জনের বেশি পর্যটক থাকার বন্দোবস্ত আছে। করোনা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ-আতঙ্ক থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পর্যটক পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
''ডিসেম্বর থেকে মার্চ এই চার মাস পর্যটন মৌসুম। এ সময় পর্যটনখাতে দৈনিক ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এ ছাড়া বছরে অন্য সময় হলে দৈনিক ১৬-১৭ লাখ টাকা লেনদেন হতো'', বললেন বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ২১ দিনের লকডাউন শেষ হলেও বান্দরবান শহর এখনও রেডজোনের আওতায় রয়েছে। ঈদুল আজহার আগে আপাতত পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়া নেওয়ার শর্তে দূরপাল্লা এবং অভ্যন্তরীণ রুটে সকল ধরণের গণপরিবহন চলাচলের অনুমিত দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।