দেশে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের পূর্ভাবাস, সিলেটে বন্যার আশঙ্কা
দেশের অন্য এলাকা যখন দাবদাহে পুড়ছে, সিলেটে তখন ঠিক উল্টো পরিস্থিতি। পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটে গ্রীষ্মেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিলেট বিভাগে আগামী ১০ দিনে (মে মাসের ৫ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত) সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাত এ অঞ্চলে বন্যা এবং দেশে মে মাসের বৃষ্টিপাত সর্বকালের রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
ইতোমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আরও কয়েকটি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
আবওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব গণমাধ্যমকে বলেন, "রোববার থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। এই সময়ে মেঘালয়েও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ফলে ঢল নেমে সিলেটে অকাল বন্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত, সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।"
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঢল নেমে সিলেটের নদ-নদীগুলোয় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবারই দুটি পয়েন্টে নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। গত শনিবার দুপুরে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১১.০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারি নদের জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্ট শুষ্ক মৌসুমে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। নদের ওই পয়েন্ট পানি গত শনিবার দুপুরে ১১ দশমিক ৮৯ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রোববার থেকে বৃষ্টি শুরু হতে যাচ্ছে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপরে। ৫, ৬ ও ৭ ই মে (৩ দিন) তীব্র বজ্রপাত সহ ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে সিলেট বিভাগের ৪ জেলা এবং মেঘালয় ও পূর্ব আসামের ৩ জেলায়।"
তিনি আরও বলেন, আগামী ৩ দিনের প্রত্যেকদিনই একাধিকবার তীব্র বজ্রপাতসহ ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টি অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে সিলেট বিভাগের নদ-নদীগুলোর উপকূলবর্তী এলাকাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগামী ৩ দিন সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপরে দিয়ে রোববার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত— ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার, সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত— ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত— ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মোস্তফা কামাল পলাশ।
তিনি আরও বলেন, "ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেম মডেল অনুসারে আগামী ১৪ মে পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপরে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম কিংবা বেশি হতে পারে।"
পলাশ বলেন, ১৪ মে পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগে ৩৫০ থেকে ৪৫০ মিলিমিটার, ঢাকা বিভাগে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার, খুলনা বিভাগে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার, রাজশাহী বিভাগে ৩০ থেকে ৭৫ মিলিমিটার, রংপুর বিভাগে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো মে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের যে পরিমাণ নির্দেশ করছে, সেই পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলে এই বৃষ্টিপাত বাংলাদেশে মে মাসের সংঘঠিত মোট বৃষ্টিপাতের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করতে পারে বলে জানান পলাশ।
৮০ কি.মি. বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, হুঁশিয়ারি সংকেত
দেশের ২ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার (৫ মে) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশকিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য এই সতর্কতা জারি করা হয়।