হাওরে বোরোর বাম্পার ফলন; প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফরণ হয়েছে। ধানের উৎপাদন এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। হাওরাঞ্চলের ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এরমধ্যে দেশের সবেচেয়ে হাওর প্রধান জেলা সুনামগঞ্জের ধান কাটা শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
হাওরের প্রধান শস্য বোরো ধান। বছরে এই একবারই ধান চাষ হয় হাওরে। প্রায় সময় অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় হাওরের ফসল। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা। সর্বশেষ ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিলো হাওরের প্রায় সব ফসল। তবে এবার বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ফসল ঘরে তুলতে পেরে খুশি কৃষক। তবে ধান শুকানো নিয়ে শংকিত তারা। সোমবার থেকে সিলেটে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পাশপাশি পাহাড়ি ঢলের কারণে অকাল বন্যার পূর্ভাবাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন পূর্ভাবাসে কৃষকের শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এই চার জেলা নিয়ে সিলেট বিভাগ। চার জেলায়ই রয়েছে অসংখ্য হাওর। তবে সবচেয়ে বেশি হাওর সুনামগঞ্জে। ছোট-বড় ১৩৭টি হাওর নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জকে হাওরের রাজধানীও বলা হয়। দেশের বোরো ধানের একটি বড় অংশ এ জেলায়ই উৎপাদিত হয়। বৃষ্টি আর অকাল বন্যায় ফসলের ক্ষতিও সুনামগঞ্জেই সবচেয়ে বেশি হয়। তবে রোববার সুনামগঞ্জের হাওরের শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে।
এমন তথ্য জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিউজ্জামান মঙ্গলবার বলেন, হাওরের ধান কাটা সোমবার পর্যন্ত ৯৯.৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরের শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আর হাওর ও উঁচু জমি মিলিয়ে সোমবার পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যে ধান কাটা বাকি রয়েছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির। দুয়েকদিনের বৃষ্টিতে এসব জমির ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না।
এবার সিলেট বিভাগে বোরো ধান থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ লাখ ২২ হাজার ৯৮১ মেট্রিক টন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। ধান কাটা শতভাগ সম্পন্ন হলে উৎপাদন ২০ লাখ ৩২ হাজার টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সোমবার সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর এলাকার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। একদল ধান কেটে মাঠে জড়ো করছেন। আরেকদল কৃষক কাটা ধান কাধে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার হাওরের পাশেই খোলা মাঠে ধান বাছাই ও শুকানোর কাজ করছেন কৃষাণীরা।
এই হাওরের কৃষক আব্দুস শহীদ বলেন, ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এবার ফলন ভালোই হয়েছে। ভালোয় ভালোয় ফসল ঘরে তুলতে পারায় খুশি। কিন্তু টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কাটা ধান কীভাবে শুকাবো এই নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। কারণ ধান ভালো করে রোদে শুকাতে না পারলে এগুলোতে পচন ধরে যাবে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনেরবাঁক এলাকার কৃষক সেলিম আহমদ বলেন, এবার খুব ভালো ধান হয়েছে। বন্যা না হওয়ায় সব ধান গোলায় তুলতে পেরেছি। তবে ধান কাটা প্রায় শেষ হলেও ধান শুকানো, গো খাদ্য সংগ্রহের জন্য আরও কয়েকটা দিন রোদের প্রয়োজন। না হলে ধান পেলেও গো খাদ্য নিয়ে বর্ষায় সমস্যায় পড়তে হবে।
সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সিলেট জেলায় ৮৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে চাষ করা হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর।
সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, মাঝে কয়েকদিন শিলাবৃষ্টিতে ধানের কিছু ক্ষতি করেছিলো। তবে তা খুব বেশি নয়। এবার বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান কাটা শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বছর সিলেটে ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।