যানজট নিরসনে ‘গেইট-লক’ ব্যবস্থা চালুর প্রথমদিনে যা দেখা গেল
রাজধানীর মহাখালী এলাকায় যানজট নিরসনে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। সোমবার (১৩ মে) থেকে শুরু হওয়া নতুন নিয়মে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলো নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া যাত্রী উঠাতে পারবে না। কেউ নিয়ম অমান্য করলে শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে।
সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশ, বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসগুলোর গেইট লক থাকবে, নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে কেবল যাত্রী তুলতে পারবে। ঢাকার লোকাল বাসগুলো 'বাস সিটে' ছাড়া যাত্রী তুলতে পারবে না। এসব মনিটরিংয়ে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের স্বেচ্ছাসেবকরাও রাস্তায় কাজ করবে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী টার্মিনাল থেকে বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে টার্মিনাল ছাড়া সমিতির লোকজন যাত্রীসংখ্যা উল্লেখ করে স্লিপ দিচ্ছেন। এই স্লিপ চেক করা হচ্ছে বনানী চেকপোস্টে। স্লিপের সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা কম-বেশি হলে শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপার।
বনানী চেকপোস্টে কথা হয় ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস ও কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ইউসুফ মৃধার সঙ্গে। তিনি জানান, নতুন নিয়ম বাস্তবায়নে বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বনানীতে চেকপোস্ট বসিয়েছেন। চেকপোস্টে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ ১৪ সদস্যের একটি টিম দুই শিফটে কাজ করছেন। তারা যাত্রীর সংখ্যার সঙ্গে স্লিপের সংখ্যার গড়মিল পাওয়া মাত্রই শাস্তি দিচ্ছে।
"নতুন নিয়ম ভাঙ্গায় এরমধ্যেই সাগরদীঘি পরিবহনের এক বাসচালকে বরখাস্ত করাও হয়েছে" - তিনি যোগ করেন।
টার্মিনালে যাত্রী কম
গেইট লক ব্যবস্থা চালুর প্রথম দিনে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীসংখ্যা ছিল কম। কোনো কোনো বাস যাত্রী ছাড়াই টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। তবে মহাখালী-বনানী রাস্তার পশ্চিম পাশে অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসময় বাসের হেলপাররা যাত্রীদের চেকপোস্টে আসতে বলেন।
এক ঘন্টারও বেশি সময় বনানী চেকপোস্টে পর্যবেক্ষণ করে দেখা, অধিকাংশ বাসে যাত্রীর সংখ্যা ৫-৬ জন। দুই-একটি বাসে ৮ জন যাত্রী দেখা গেছে। এছাড়া টাঙ্গাইলগামী হাইচয়েজের একটি বাস যাত্রী ছাড়াই মহাখালী টার্মিনাল ছেড়ে যায়।
এই বাসের হেলপার বনানী চেকপোস্টে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভাগ্য খারাপ, নতুন নিয়মের কারণে এই অবস্থা।"
কী বলছেন যাত্রীরা
নতুন নিয়মে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা, এবং এটি ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা।
দিনদুয়েক আগে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা থেকে ঢাকা এসেছিলেনএকটি বাসের ছয় যাত্রীর একজন জহিরুল ইসলাম। তিনি জানান, আগে তিনি প্রতি মাসে দুই-তিন বার ঢাকা আসতেন। তবে মহাখালী ক্রসিং থেকে যাত্রী না তুলেই ঠিক সময়মতো বাস স্টেশন ছাড়ছে– এটা তাঁর জন্য সম্পূর্ণ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
"মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বনানী চেকপোস্টে মাত্র ৫-৬ মিনিটে আসতে পেরেছে, আগে এটুকু আসতে ৩০-৪০ মিনিট লেগে যেত" - বলেন তিনি।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিরালা সুপার পরিবহনের টাঙ্গাইল যাচ্ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিপা আক্তার। তিনি বলেন, "এটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ। বাসগুলো এই নিয়ম মানছে কিনা সেটা যদি সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে তদারকি করেন – তাহলে এই এলাকায় যানজট অনেকটা কমবে।"
পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তোষ
নতুন নিয়ম নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাঁরা বলছেন, মহাখালী মোড় থেকে যাত্রীরা বাসে উঠে অভ্যস্ত। কিন্তু, নতুন নিয়মের ফলে এখান থেকে যাত্রী নেওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহনের চালকের সহকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নতুন নিয়মের কারণে মাত্র ৬ জন যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়তে হয়েছে, আগে যেটা কল্পনাও করা যেত না। "এতে পরিবহন শ্রমিকদের আয় কমবে। আগে হাজার টাকা আয় হলেও, সেটা কমে ৬০০ টাকায় নামতে পারে।"
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, মহাখালী-বনানী সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে যাত্রীরা আগে বাসে উঠত। তাঁদের এই অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে। "আশা করি, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এই সমস্যারও সমাধান হবে।"
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মহাখালী জোনের সহকারী কমিশনার আরিফুল ইসলাম বলেন, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন নিয়ম ভঙ্গ করায় ১৫টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। "আমরা মূলত চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। পরে পুলিশ আরো কঠোর হবে।"