এমপি আজীম হত্যার বিচার কোথায় হবে, ভারত নাকি বাংলাদেশে?
ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যার বিচার কোথায় হবে- ভারতের আদালতে নাকি বাংলাদেশে, এনিয়ে চলছে আলোচনা।
ইতোমধ্যে সাংসদ আজীম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বুধবার (২২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন নিহত সাংসদ আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতে কোনো মামলা না-হলেও সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড ভারতে সংঘটিত হলেও ঘটনার সাথে জড়িতরা সবাই বাংলাদেশের। আইনজ্ঞরা বলেছেন, এর ফলে এই হত্যার ঘটনার বিচার কোন দেশে হবে, এনিয়েই অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বাউল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঐক্যমতের ভিত্তিতে- যেকোনো একটি দেশে এই হত্যা মামলা দায়ের হতে পারে। এছাড়াও দুই দেশেই পৃথক মামলা হতে পারে এবং দুই দেশের আদালতে পৃথক বিচার হতে পারে। এটি নির্ভর করছে দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের বোঝাপড়ার ওপর।"
তিনি বলেন, এরকম আপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ২০১২ সালে 'অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন' প্রণয়ন করে। এরপর এই আইনটি প্রয়োগের জন্য 'ইমপ্লিমেন্টেশন গাইডলাইন অন মিউচ্যুয়াল লিগাল অ্যাসিস্টেন্স ইন ক্রিমিনাল ম্যাটার্স' শীর্ষক একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করে সরকার।
তিনি বলেন, এর আগে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক অপরাধের বিচারের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ-ভারত সরকারের মধ্যে 'প্রোটকল ফর এক্সচেঞ্জ অফ ইনস্ট্রুমেন্টস অফ র্যাটিফিকেশন রিগার্ডিং দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ অ্যাগ্রিমেন্ট অন মিউচ্যুয়াল লিগাল অ্যাসিস্টেন্স ইন ক্রিমিনাল ম্যাটার্স' শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এই আইনজ্ঞ বলেন, এসব আইন ও সমঝোতা স্মরক অনুযায়ী এই মামলা তদন্তের জন্য দুই দেশের আইনশৃ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এরপর যে দেশের আদালতে বিচার হবে, সেই আদালতে সমন্বিত অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে।
ব্যারিস্টার তাপস কান্তি আরো জানান, বিচার শুরু হলে, যে দেশের আদালতে বিচার হবে আসামী গ্রেপ্তার থাকলে সেই আদালতে সোপর্দ করতে হবে। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ওই আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাক্ষীকে ওই আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।
"সাক্ষ্য-প্রমাণের জন্য এখন ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে দুই দেশই। মামলার বিচার সম্পন্ন হলে, আসামীর সাজা কার্যকর হবে। তবে যদি একই ঘটনায় দুই দেশেই পৃথক বিচার হয়, তাহলে যে দেশের আদালতে বেশি শাস্তি হবে, সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আসামীকে হস্তান্তর করা হবে। আর সাজা একই হলে যেকোনো একটি দেশে সাজা ভোগ করবে অভিযুক্তরা" - যোগ করেন তিনি।