তুমুল বৃষ্টি, ঝড়ো হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজার সৈকতপাড়ের শতাধিক দোকান
ঘূর্ণিঝড় রিমাল গতকাল রোববার রাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার পর- সেটি শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিক ধাক্কায় রিমাল কক্সবাজারে ব্যাপক কোনো ক্ষয়ক্ষতি না করলেও এখন ঝড়ো হাওয়া তাণ্ডব চালাচ্ছে। ঝড়ো হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সৈকতপাড়ের শতাধিক দোকানপাট। আগ্রাসী সাগরের ভয়ঙ্কর ঢেউয়ে উপড়ে পড়েছে সাগরপাড়ের ঝাউ গাছ।
এর আগে আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর পরপরই শুরু হয় ঝড়ো হওয়া, চলছে বজ্রসহ ভারী বর্ষণ।
শুধু একটি-দুটি পয়েন্টে নয়, সৈকতের পাঁচটি পয়েন্টের শতাধিক দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় তুমুল বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস উপেক্ষা করে দোকান রক্ষার চেষ্টা করছেন অনেকে।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের চায়ের দোকানি তুহিন বলেন, "ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার অতিক্রম করার পর এভাবে তুমুল বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস আগে কোনদিন দেখিনি। এই প্রথম ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তাণ্ডব স্বচক্ষে দেখলাম। আমার দোকানের ছাউনি বাতাসে উড়ে গেছে আর পানির বোতল থেকে শুরু করে চিপসের প্যাকেট উড়ে কোথায় গেছে জানি না।"
চটপটির দোকানদার আমান উল্লাহ বলেন, লাবণী পয়েন্টের ১০টি দোকানের ছাউনি থেকে শুরু করে মালামাল উড়ে গিয়ে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাকি যা আছে, তা রক্ষা করার চেষ্টা করছি।
শামুক-ঝিনুকের ব্যবসায়ী আবু বলেন, ত্রিপল দিয়ে মালামাল রশি দিয়ে বেঁধেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২০ হাজার টাকার মালামাল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টার পরপরই শুরু হয় উচ্চ জোয়ার। যা তান্ডব শুরু করে উপকূলের ঝাউবনে। উপড়ে ফেলে বেশ কিছু গাছ। ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়েছে কক্সবাজার শহর রক্ষাবাঁধও।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ-সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, "রোববার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার। আগামী আরও ২/৩ দিন একই ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ফলে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে। সাগরের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এখনও ২ ফুট উচ্চতায় রয়েছে। ফলে সাগর তীরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে।"
বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে এরমধ্যেই কক্সবাজারের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। এরমধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, মোস্তাকপাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়ারছড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলাঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপকূলের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। যাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।
এদিকে, ভূমিধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, "পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধি কাজ করছেন। তারা স্বেচ্ছায় নিরাপদ আশ্রয়ে না গেলে– জোরপূর্বক সরানো হবে।"
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বেপরোয়া পর্যটকদের সামলাতে হিমশিম খায় কর্তৃপক্ষ। ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের মাঝেও সমুদ্রস্নানে নামছেন অনেকে। মাইকিং করেও কোনভাবে সরানো যাচ্ছে না তাদের। শেষমেষ ভয়ংকর ঢেউ থেকে পর্যটকদের জীবনরক্ষায় লাঠি হাতে তুলে নেন বিচ কর্মীরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, "গত দুইদিন ধরে পর্যটকদের কাছে অনুরোধের শেষ রাখিনি। বারবার অনুরোধ করেছি, সমুদ্রস্নান থেকে বিরত থাকুন, পানি থেকে উঠে যান। কিন্তু, জলোচ্ছাসের সর্বোচ্চ সীমার মাঝেও সমুদ্রস্নানে পর্যটকরা নামছেন। এই মুহুর্তে তাদের জীবনরক্ষায় আমাদের শক্তিপ্রয়োগ করা ছাড়া কিছু বাকি ছিল না। তারপরও বার বার অনুরোধ করছি, কিন্তু কোন কিছুই মানতে চান না এই ভ্রমণপিপাসুরা।"