ট্রাম্পের রায়ে দাঙ্গা ও সহিংসতার ডাক দিয়েছে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা
নিউইয়র্কের ১২ সদস্যের জুরিদল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার পর তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে দাঙ্গা ও সহিংসতার ডাক দিয়ে ট্রাম্প-পন্থী ওয়েবসাইটগুলোতে প্রচারণা চালাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মতে, ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার সমর্থকরা অনলাইনে অনেক হিংসাত্মক বার্তা লিখেছেন। এটি তিনটি ট্রাম্প-পন্থী ওয়েবসাইটে ঘটেছে: ট্রুথ সোশ্যাল, প্যাট্রিয়টস ডট উইন এবং গেটওয়ে পান্ডিট৷ কেউ কেউ মামলার বিচারক ও বিচারপতি জুয়ান মার্চানের ওপর হামলার পাশাপাশি গৃহযুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্যাট্রিয়টস ডট উইন-এর একটি পোস্টে নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের প্রতি বিচারপতি মার্চানের ক্ষতি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গেটওয়ে পান্ডিট এর একটি পোস্টে উদারপন্থিদের গুলি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প এ বিচারকে "অসম্মানজনক" বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন, একজন দুর্নীতিবাজ বিচারক এ বিচারে কারচুপি করেছে। ১২ সদস্যের জুরিদল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ট্রাম্পকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে একজন পর্ন তারকাকে মুখ বন্ধ রাখতে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত করার ঠিক আগে ১১ জুলাই সাজা ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ট্রাম্প অভিযোগ অস্বীকার করে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বিচারককে অনলাইনে আক্রমণ করছেন এবং তাকে ট্রুথ সোশ্যালে "চরমভাবে বিরোধী" বলে অভিহিত করেছেন। একজন ট্রুথ সোশ্যাল ব্যবহারকারী ক্যাপশন সহ একটি জল্লাদ মঞ্চের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন: "বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসঘাতক সন্ত্রাসী!"
"গড, গানস এন্ড সিডিশন: ফার-রাইট টেরোরিজম ইন আমেরিকা" বইয়ের সহ-লেখক জ্যাকব ওয়্যার বলেছেন, ট্রাম্পের অনুসারীরা হিংসাত্মক ভাষা ব্যবহার করে কারণ তিনি সহজেই তাদের ভোটদান এবং সহিংসতার মতো উভয় কাজেই সংগঠিত করতে পারেন।
ট্রুথ সোশ্যালের একজন মুখপাত্র রয়টার্সের প্রবন্ধটিকে কারসাজি এবং মিথ্যা বলে সমালোচনা করে এটিকে রাজনৈতিকভাবে বিদ্বেষপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনটি সাইটেই হিংসাত্মক ভাষা ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম থাকায় কিছু পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছে।
প্যাট্রিয়টস ডট উইন এবং গেটওয়ে পান্ডিটের প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র মন্তব্যের জন্য পাঠানো ইমেইলের কোন জবাব দেননি।
"সবাইকে ফাঁসি দাও"
বৃহস্পতিবারের রায়ের পর অনেক ট্রাম্প সমর্থক বলেছেন, এ রায় প্রমাণ করেছে যে আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর এবং শুধু সহিংস পদক্ষেপই দেশকে বাঁচাতে পারে।
প্যাট্রিয়টস ডট উইন এর একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ১ লাখ লোক (সশস্ত্র) ওয়াশিংটনে গিয়ে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। এটাই একমাত্র সমাধান।" অন্য একজন বলেছেন, "ট্রাম্পের ইতোমধ্যেই জানা উচিত যে তার একটি সেনাবাহিনী আছে যেটি তার জন্য যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক।"
গেটওয়ে পান্ডিট এর একটি পোস্টে বলা হয়েছে, "আমেরিকা সম্পূর্ণরূপে ডেমোক্রেটদের দ্বারা ধ্বংস হয়ে গেছে।"
পোস্টগুলোতে সহিংসতার আহ্বান জানানো হলেও রয়টার্স এর মতে এগুলো বিচারযোগ্য নয়।
মিলিশিয়াদের নিয়ে কাজ করা একজন গবেষক বলেছেন, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে যে রায় দেওয়া হয়েছে তাতে কিছু ট্রাম্প সমর্থকদের মনে হয়েছে তিনি একটি ষড়যন্ত্রের শিকার এবং এটি সম্ভবত সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে।
মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক অ্যামি কুটার বলেছেন, "অনেকেই দীর্ঘদিন থেকে সংঘটিত হওয়ার জন্য একটি অজুহাতের অপেক্ষায় ছিল। রায় থেকে সহিংসতা শুরু হলে বা বিচারকদের ওপর হামলা হলে আমি অবাক হব না।"
আগামী ১১ জুলাই ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতি বা তথ্য গোপন করার দায়ে ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চার বছর কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও এমন মামলায় দোষী সাব্যস্তরা বেশিরভাগ সময় আরো কম মেয়াদে সাজা, জরিমানা বা নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন।
ট্রাম্প এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে আইনিভাবে তার কোনো অসুবিধা হবে না। তিনি নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে তো পারবেনই, এমনকি জিতলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও গ্রহণ করতে পারবেন।
এছাড়া সাজার রায় ঘোষণার আগে ট্রাম্পকে কারাগারেও যেতে হবে না।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়