তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই, গরমে ভারতে অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যু
উত্তর ও মধ্য ভারতে তাপমাত্রা বাড়ছেই। এর জেরে গত ২৪ ঘণ্টায় তাপজনিত অসুস্থতায় নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিহার, উত্তর প্রদেশ ও উড়িষ্যায় শনিবারও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, উড়িষ্যার রুরকেলা অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন অনেকেই।
এছাড়া বিহার, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড রাজ্য এবং রাজধানী দিল্লি থেকেও হিট স্ট্রোক-জনিত মৃত্যুর খবর এসেছে।
উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারতে আগামী দিনে তাপমাত্রা কমতে পারে, তবে পূর্ব ভারতে তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
এই অসহনীয় গরমের মধ্যেই চলছে ভারতের সাধারণ নির্বাচন। আগামী ৪ জুন ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের ফলাফল।
বৃহস্পতিবার বিহারে চোদ্দজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে ১০ জন চলমান নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বহু নির্বাচনি কর্মকর্তাকে সারাদিন দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে হয়, অনেক সময়ই তাদেরকে বাইরে দাঁড়িয়েও ডিউটি করতে হয়।
বিহারের ভোজপুর জেলার ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট মহেন্দ্র কুমার সংবাদমাধ্যম টাইমস অভ ইন্ডিয়াকে বলেন, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) হিট স্ট্রোকে শহরে তিনজন নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং একজন পুলিশের মৃত্যু হয়েছে।
মহেন্দ্র কুমার বলেন, 'বৃহস্পতিবার ছিল সবচেয়ে গরম দিন। সব কেন্দ্রে চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তারা অসুস্থ হয়ে পরেন। একজন হোম গার্ড [স্বেচ্ছাসেবী পুলিশ] যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন।' পরে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার সময় মারা যান বলে জানান মহেন্দ্র।
তিনি আরও জানান, তাপজনিত অসুস্থতার কারণে বৃহস্পতিবার ওই একই হাসপাতালে প্রায় ৩০-৪০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
এ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে তাপজনিত অসুস্থতার কারণে রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে।
এদিকে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল উত্তর প্রদেশে শুক্রবার নিরাপত্তা কর্মীসহ অন্তত নয়জন নির্বাচনি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
বিহারের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খন্ডে সম্ভবত হিট স্ট্রোকে তিনজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
বৃহস্পতিবার দিল্লির একটি হাসপাতালে হিট স্ট্রোক করা একজন শ্রমিককে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা দেওয়ার সময়ই তিনি হাসপাতালে মারা যান।
এছাড়া দিল্লিতে তীব্র গরমে অচেতন হয়ে পড়ছে পাখি আর বুনো বানরের দল। গরমে জেরবার রাজধানীর চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জীবনও।
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল হিট স্ট্রোককে 'প্রাণহানিকর' অবস্থা বলে আখ্যা দিয়েছে। হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৬৪ শতাংশ।
উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের কিছু অংশে গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র দাবদাহ। এ সময় তাপমাত্রা টানা ৪৫-৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাঘুরি করেছে, এমনকি কিছু এলাকায় ৫০ ডিগ্রিতেও চড়ে গেছে।
বেশ কিছু এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ দুটি পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় ভারতজুড়ে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বনে লাগা আগুন পর্যবেক্ষণ করতে কর্তৃপক্ষ ড্রোন মোতায়েন করছে।
গত সপ্তাহে রাজধানী দিল্লি ও তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা সব রেকর্ড ভেঙে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গিয়েছিল।
পানির ট্যাংকারের সামনে দিল্লির বাসিন্দাদের উপচে পড়া ভিড়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। রাজধানীর অনেক এলাকাও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছে।
বুধবার মুঙ্গেশপুর এলাকায় তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৫২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। নিকটবর্তী আবহাওয়া স্টেশনের কোনো ত্রুটির কারণে এ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে কি না, তা তদন্ত করছেন কর্মকর্তারা।
ভারতে ২০০০-২০০৪ এবং ২০১৭-২০২১ সালের মধ্যে তীব্র গরমের কারণে মৃত্যুর হার ৫৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। মেডিক্যাল জার্নাল 'ল্যানসেট'-এ প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ওই গবেষণায় বলা হয়, তীব্র গরমের কারণে ২০২১ সালে ভারতীয়দের প্রায় ১৫৭.২ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে।
ভারতের অনেক অঞ্চলই গ্রীষ্মের সময় নিয়মিত তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এখন এসব তাপপ্রবাহ আগের চেয়ে দীর্ঘ, আরও তীব্র এবং নিয়মিত হয়ে উঠেছে।